মিলন খামারিয়া, বাঁকুড়া: ‘এসো আমার ঘরে। বাহির হয়ে এসো তুমি যে আছ অন্তরে’। আজকের দিনে ঘরে ঘরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে স্মরণ করা হয় একটু বিশেষভাবেই। এমনিতে গোটা বৈশাখ মাস জুড়েই চলে তাঁর স্মরণ। বৈশাখ মাস এলেই মানুষ বেশি করে ডুবে থাকে রবীন্দ্রভাবনায়। চেতনায়, জীবনে চলার প্রতিটি ক্ষেত্রে, ওঠাপড়ায়, সুখ-দুঃখে তাঁর লেখনী, তাঁর ভাবনা আমাদের পাথেয়। আজ সেই দিন, ‘হে নূতন দেখা দিক আর-বার। জন্মের প্রথম শুভক্ষণ’। আজ ২৫ শে বৈশাখ, আমাদের প্রাণের ঠাকুর, রবি ঠাকুরের ১৬২ তম জন্মজয়ন্তী।
প্রতিবারের মতো এবারও তাঁর জন্মদিন মহাসমারোহে, ধুমধাম করে রাজ্যজুড়ে পালিত হচ্ছে। আজ সারাদিন তাঁর কবিতা, গান-নাচে কবি প্রণামের অনুষ্ঠান চলছে। শুধু এরাজ্যে নয়, দেশের প্রতিটি কোণায়, প্রান্তরে, এমনকি বিদেশেও। কারণ, তিনি আমাদের ‘বিশ্বকবি’।
আমাদের রাজ্যের পশ্চিমের একটি জেলা বাঁকুড়ার এক প্রত্যন্ত গ্রাম বেলাকুঁড়িতে ‘দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির’ কর্তৃপক্ষের তরফে কবিগুরুর জন্মদিবস উদযাপিত হয়। বেলাকুঁড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান এবং প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী মিলিয়ে উপস্থিত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা চল্লিশ জন। এবছর স্কুলগুলিতে গরমের ছুটি পড়ে যাওয়ায়, রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন হবে না বলে মনখারাপ ছিল স্কুলপড়ুয়াদের। দেশের মাটির এই উদ্যোগে ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে তাদের অভিভাবক এবং অন্যান্য বিশিষ্ট মানুষজন খুব খুশি হন। তাঁরা এই মন্দির কর্তৃপক্ষের প্রতিটি কাজে পাশে থাকবেন বলে আশ্বাস দেন।
এই অনুষ্ঠানের দায়িত্বে ছিলেন গ্রামেরই ছেলে অসীমলাল মুখার্জী। যিনি দেশের মাটি কল্যাণ মন্দিরের সক্রিয় সদস্য। তাঁকে পুরো অনুষ্ঠানের আয়োজন থেকে পরিচালনায় সহযোগিতা করেন গ্রামেরই ছেলে দেব ঘোষাল। উপস্থিত ছাত্রছাত্রীদের সামনে কবিগুরু সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন শ্রী অসীমলাল। তিনি ছাত্রছাত্রীদের সামনে গুরুদেবের পরিবেশ ভাবনা, তপোবন কেন্দ্রিক শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে অনুধাবন করান। যা ছিল এই পর্বের প্রধান আলোচ্য বিষয়।
উপস্থিত ছাত্রছাত্রীরা খুব মনোযোগ সহকারে তা শোনে এবং নিজেদের জীবনে তা বাস্তবায়িত করবে বলে প্রতিজ্ঞা করে। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে থেকে আবৃত্তি পাঠ করে মানসী বাউরী, রাহুল বাউরী, প্রদীপ বাউরী, ধনঞ্জয় বাউরী। এরপর ছাত্রছাত্রীদের হাতে চারা গাছ তুলে দেওয়া হয় দেশের মাটির তরফ থেকে। এই বিষয়টি সত্যিই প্রশংসনীয়। যা ছাত্রছাত্রীদের অনুপ্রাণিত করবে। সবশেষে সকলকে মিষ্টিমুখ করিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা হয়।
আজকের রবীন্দ্র জয়ন্তী পালনের গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে অসীমলাল মুখার্জী জানান যে, “আজ কবিগুরুকে স্মরণ করার পাশাপাশি আমরা শিক্ষার্থীদের হাতে চারাগাছ তুলে দিয়েছি। বৃক্ষরোপণ করে তারা এই পৃথিবীকে বিশ্ব উষ্ণায়নের হাত থেকে রক্ষা করে নিজেরা সুস্থ একটি পৃথিবী গড়ে তুলুক, তাহলেই ‘দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির’-এর এই আয়োজন সার্থক হবে।”
previous post
next post