32 C
Kolkata
April 19, 2025
Featured সম্পাদকীয়

চূড়ান্ত অমানবিকতা ও বৈষম্যের শিকার স্টেট এইডেড কলেজ শিক্ষকরা

‘কাজের সময় কাজি আর কাজ ফুরালেই পাজি’- এমন প্রবাদ বাংলায় বহুল প্রচলিত। কিন্তু বিষয়টি যদি শিক্ষকদের ক্ষেত্রে বিশেষত যদি কলেজের অস্থায়ী শিক্ষকদের উপর প্রয়োগ হয়, তা শিক্ষার তথা সমাজের পক্ষে সুখকর নয়। রাজ্যের কলেজগুলিতে কর্মরত আংশিক শিক্ষকদের বঞ্চিত রেখে উচ্চ শিক্ষায় উন্নয়ন কিভাবে সম্ভব? এই প্রশ্নে আলোড়িত শিক্ষিত মহল।

রাজ্যের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা সচল রাখার প্রয়োজনে ইউজিসির অনুমতিক্রমে রাজ্যের কলেজে কলেজে নিয়োগ করা হয়েছিল আংশিক সময়ের অধ্যাপক। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে তাঁরা উচ্চশিক্ষার জোয়াল কাঁধে করে বইছেন। কেবল একাডেমিক নয়, কলেজের এডমিনিস্ট্রেটিভ কাজেও অংশ নিতে হচ্ছে প্রয়োজনের তাগিদে। বলতে গেলে পড়ানোর পাশাপাশি উচ্চশিক্ষার অতি গুরুত্বপূর্ণ দায়ভার পালন করছেন এই শ্রেণীর শিক্ষকরা। অথচ এঁরাই বর্তমান সরকার দ্বারা সর্বাধিক বঞ্চিত।

২০১০ সালে বিগত সরকারের বিদায়লগ্নে ইউজিসির অনুমতিক্রমে 751Edn অর্ডারে ৬০ বছরের স্থায়িত্ব এবং সুনির্দিষ্ট বেতন কাঠামো করে যায়। পরবর্তীতে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদেরও একইভাবে একটি স্থায়িত্বের অর্ডার প্রকাশ করে। বর্তমান সরকার ২০১৯ সালে রাজ্যের কলেজে কর্মরত আংশিক, চুক্তিভিত্তিক ও অতিথি শিক্ষকদের এক ছাতার তলায় এনে তাঁদেরকে স্টেট এডেড কলেজ শিক্ষক হিসাবে ঘোষণা করে। 2081Edn মেমোরেন্ডামের মাধ্যমে আজও তা বহাল আছে। কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয়, দীর্ঘ তিন বছর অতিক্রান্ত হতে চললেও মেমোরেন্ডামটি অর্ডারে পরিণতি পায়নি।

পরবর্তী সময়ে আংশিক শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ হওয়ায়, অস্থায়ী শিক্ষক হিসাবে কলেজে কলেজ নিযুক্ত করা হয়েছে চুক্তিভিত্তিক এবং অতিথি শিক্ষক। ২০১০ সালে বিগত সরকারের বিদায়লগ্নে ইউজিসির অনুমতিক্রমে 751Edn অর্ডারে ৬০ বছরের স্থায়িত্ব এবং সুনির্দিষ্ট বেতন কাঠামো করে যায়। পরবর্তীতে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদেরও একইভাবে একটি স্থায়িত্বের অর্ডার প্রকাশ করে। বর্তমান সরকার ২০১৯ সালে রাজ্যের কলেজে কর্মরত আংশিক, চুক্তিভিত্তিক ও অতিথি শিক্ষকদের এক ছাতার তলায় এনে তাঁদেরকে স্টেট এডেড কলেজ শিক্ষক হিসাবে ঘোষণা করে। 2081Edn মেমোরেন্ডামের মাধ্যমে আজও তা বহাল আছে। কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয়, দীর্ঘ তিন বছর অতিক্রান্ত হতে চললেও মেমোরেন্ডামটি অর্ডারে পরিণতি পায়নি। অর্থাৎ এই শিক্ষকদের আজ পর্যন্ত কোনও পূর্ণাঙ্গ অর্ডার প্রকাশ পায়নি। যে মেমোরেন্ডামটি ২০১৯ সালে প্রকাশ পেয়েছিল, তা অসঙ্গতিতে ভরা।

বিভিন্ন ধরণের শিক্ষকদের একত্রিত করায় সমস্যার সৃষ্টি হয়। আংশিক, চুক্তিভিত্তিক এবং অতিথি শিক্ষকদের কাজের ধরণ এবং মাস মাইনে ভিন্ন ভিন্ন ছিল। কিন্তু এদের একত্রিত করে স্টেট এডেড কলেজ শিক্ষক করায় দেখা দেয় বৈষম্য। কিছু শিক্ষকের কাজ কমল, বাড়ল বেতন। বাকিদের কাজ বাড়ল, কমল বেতন। অভিজ্ঞতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নবীন শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি হল পূর্বতন শিক্ষামন্ত্রীর বদান্যতায়। বঞ্চিত হলেন প্রবীণরা। এই বঞ্চনা আজও অব্যাহত। সরকারি চাকরি পাওয়ার সময় শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখা হয়। কিন্তু বেতন বৃদ্ধি বা প্রোমোশনের ক্ষেত্রে গুরুত্ব পায় অভিজ্ঞতা। কোনও এক অদৃশ্য কারণে এখানে সেই নিয়ম উপেক্ষিত হয়েছে। আরও আশ্চর্য্যের ও নজিরবিহীন ঘটনা হল, একই অর্ডারের ভিত্তিতে একই যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষকদের এক এক কলেজে এক এক রকম বেতন দেওয়া হচ্ছে। সব জেনেও মুখে কুলুপ উচ্চশিক্ষা আধিকারিকদের। দীর্ঘ ৩৬ মাস ধরে এই বৈষম্য অব্যাহত। এতবড় অসঙ্গতি সমাধানের ক্ষেত্রে সরকারের চরম অনীহা অব্যাহত।

কলেজে স্থায়ী শিক্ষকদের অবসরের বয়স ৬৫ বছর ঘোষিত হলেও এই শ্রেণীর শিক্ষকদের তা করা হয়নি। এঁদের পিএফ, পেনশন না থাকায় অবসরের পর অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। জীবনধারণের রসদ তথা জীবনদায়ী ওষুধ সংগ্রহ এঁদের পক্ষে দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। যাঁরা উচ্চশিক্ষায় পরিষেবা দিতে জীবনপাত করল, অবসরের পর তাঁরা উপেক্ষিত এবং বঞ্চিত। এই বঞ্চনার শেষ এখানেই নয়। আজ পর্যন্ত ঘোষিত হয়নি কোনও বেতন কাঠামো (পে স্কেল)। নেই প্রমোশন, গুরুত্ব পায়নি ২০১৫ সালের আগে করা এমফিল ডিগ্রি। নেই কোনও সার্ভিস বুক, নেই আর্ন লিভ। নেই টিচার কাউন্সিল ও কলেজ পরিচালন সমিতির সদস্য পদ। এভাবে অপ্রাপ্তির তালিকা দীর্ঘ। এই স্যাক্ট শিক্ষক ব্যতীত রাজ্যের উচ্চশিক্ষা আজও অচল। এই শিক্ষকদের বঞ্চিত রেখে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়ন কি সম্ভব? প্রশ্নটি উঠছে ‘মা মাটি মানুষের সরকার’ এবং মানবিক মুখ্যমন্ত্রী এই ক্ষেত্রে কী সিদ্ধান্ত নেন তা জানার অপেক্ষায় রাজ্যের স্যাক্ট শিক্ষককুল।

Related posts

Leave a Comment