চেন্নাই, ৪ ফেব্রুয়ারি: বর্ষীয়ান সঙ্গীত শিল্পী বাণী জয়রামের রহস্য মৃত্যু। দরজা বন্ধ ফ্লাটের মেঝেতে পড়েছিল তাঁর নিথর দেহ। মাথায় মিলেছে আঘাতের চিহ্ন। ‘পদ্মভূষণ’ সম্মানে ভূষিত এই শিল্পীর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। ঘটনায় তামিলনাড়ুর পুলিশ একটি রহস্য মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে। ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে দক্ষিণ ভারতের সিনেমা জগতে।
জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালে শিল্পী বাণী জয়রামের স্বামীর মৃত্যু হয়। সেই থেকে গায়িকা চেন্নাইয়ের হ্যাডোস রোডের ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন। এক পরিচারিকা প্রতিদিন সকালে এসে তাঁর ঘরের কাজ সামলাতো। এদিন সকাল ১১টায় সেই পরিচারিকা যথারীতি কাজ করতে ফ্ল্যাটে আসে। কিন্তু অনেক ডাকাডাকি করেও শিল্পীর সাড়া পায়নি। এরপর পরিচারিকা বাণী জয়রামের বোন উমাকে ফোন করে। তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন উমাদেবী। তিনি ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে ফ্ল্যাটের দরজা খোলেন। এরপর বেডরুমের মেঝে থেকে উদ্ধার হয় শিল্পীর মৃতদেহ।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। তারা দেহটি উদ্ধার করে চেন্নাইয়ের কিলপাউক হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য পাঠায়। আসে ফরেনসিক দল। ট্রিপলিকেনের ডিসিপি শেখর দেশমুখ জানিয়েছেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে এলে তবেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।প্রসঙ্গত ‘আধুনিক ভারতের মীরা’ বলে খ্যাত বাণী জয়রামের জন্ম তামিলনাড়ুর ভেলোরে।
১৯৪৫ সালের ৩০ নভেম্বর এক তামিল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। জন্মের পর তাঁর নাম রাখা হয় কলাইবাণী। খুব ছোট থেকেই শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম নিতে শুরু করেন কলাইবাণী। সংগীতে তাঁর মায়ের বিশেষ অনুপ্রেরণা ছিল। তাঁর উদ্যোগেই গুরু রঙ্গ রামানুজ আয়েঙ্গারের কাছে গানের সাধনা শুরু করেন বাণী জয়রাম। পরে কাদালুর শ্রীনিবাস আয়েঙ্গার, টি আর বালাসুব্রহ্মণিয়ান এবং আরএস মণির মতো গুরুদের কাছে কর্ণাটকী সঙ্গীতের তালিম নেন। ষাটের দশকে স্বামী জয়রামের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। স্বামীর হাত ধরেই বলিউডে অনুপ্রবেশ ঘটে তাঁর।
সেসময় হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘গুড্ডি’ ছবিতে প্লে-ব্যাকে ডেবিউ করেন তিনি। এছাড়া জয়া ভাদুড়ি ওরফে জয়া বচ্চনের লিপে ‘বোল রে পাপিহরা’ গানে কণ্ঠ দেন। গুলজারের ‘মীরা’ ছবিতে হেমা মালিনীর লিপে সব গানে কন্ঠ দিয়েছিলেন বাণী জয়রাম। তিনি ‘আধুনিক ভারতের মীরা’ বলে পরিচিতি পান। যেসব গানের সুর ছিল রবি শঙ্করের। লতা জমানায় বলিউডের প্লে-ব্যাকে সেইভাবে নিজের জায়গা করতে না পারলেও দক্ষিণের ইন্ডাস্ট্রিতে দাপটের সঙ্গে গান করেছেন তিনি। তিনি আধুনিক বাংলা গানও রেকর্ড করেন। তাঁর কণ্ঠে ‘আমার রাধা হওয়া আর হল না…’ খুবই জনপ্রিয়। প্রায় ১৯টি ভাষায় গান গেয়েছেন বাণী জয়রাম। তিনি দশ হাজারেরও বেশি গান রেকর্ড করেন।
প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান পান ‘আধুনিক ভারতের মীরা’ বাণী জয়রাম। সেই সম্মান পেয়ে উচ্ছ্বসিত হন বাণী জয়রাম। কিন্তু, সশরীরে এই সম্মান আর গ্রহণ করা হল না এই শিল্পীর।
next post