সংবাদ কলকাতা, ১২ই জানুয়ারী, খড়দহ: ‘তাকেই বলি শ্রেষ্ট শিক্ষা, যা কেবল তথ্য পরিবেশন করে না, যা বিশ্ব সত্ত্বার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের জীবনকে গড়ে তোলে’ – কথাটি বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ‘শিক্ষা’ মানুষের সাথে মানুষের ও বিশ্বসত্ত্বার সাথে যোগাযোগের সেতুবন্ধন তৈরি করে। একটা জাতি গড়ে ওঠে সঠিক শিক্ষা পেলে। আবার শিক্ষার অভাবে একটা জাতি ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়। বাঙালি জাতির অতীত ও বর্তমান অবস্থা সে কথার প্রমাণ দেয়। রামমোহন, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, ঋষি অরবিন্দ, নেতাজী সুভাষ, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি প্রভৃতি স্মরণীয় ব্যক্তিত্বের আদর্শে গড়ে ওঠা অবিভক্ত বঙ্গপ্রদেশ বা বিভক্ত পশ্চিমবঙ্গ আজ কোন দিকে এগিয়ে চলেছে, তা পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট বোঝা যাবে। বাঙালির চিন্তায়, চেতনায় বর্তমানে রয়েছে পরানুকরণতা। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন -“হে ভারত, এই পরানুবাদ, পরানুকরণ, পরমুখাপেক্ষা, এই দাসসুলভ দুর্বলতা, এই ঘৃণিত জঘন্য নিষ্ঠুরতা – এইমাত্র সম্বলে তুমি উচ্চাধিকার লাভ করিবে?”
স্বামী বিবেকানন্দের এই জিজ্ঞাসা আজও কতটা প্রাসঙ্গিক তা সমাজের দিকে লক্ষ্য করলে স্পষ্ট উপলব্ধি করা যায়। এই মানসিকতাকে ঝেড়ে ফেলে নতুন করে দেশকে গড়তে এগিয়ে এসেছে একদল তরুণ উদ্দমী। গড়ে তুলেছে ‘দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির’। স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শকে বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চারিত করার জন্য আজ ‘জাতীয় যুব দিবস’-এর আয়োজন করেছিল তারা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বামী বিবেকানন্দের বাণী তুলে ধরে, শিক্ষা সামগ্রী বিতরণের কাজ।
শিক্ষা সামগ্রী বিতরণের জন্য এদিন খড়দহের বিলকান্দা -২ পঞ্চায়েতের হেমন্তনগর গ্রামে উপস্থিত হয়েছিলেন ‘দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির’-এর কার্যকর্তারা। তাঁরা এই গ্রামের ৭৪ জন শিক্ষার্থীকে খাতা, কলম, পেনসিল ইত্যাদি শিক্ষা সামগ্রী তুলে দেন।
বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও অধ্যাপক ড. কল্যাণ চক্রবর্তীকে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ড. চক্রবর্তী বলেন-“শিক্ষার্থীরাই দেশের ভবিষ্যৎ। তারা এক একটি নতুন চারাগাছ। তাদেরকে স্বামী বিবেকানন্দের দেখানো পথে চারিত্রিকভাবে গড়ে তুলতে হবে। তারাই পারে নতুন কিছু সৃষ্টি করতে। ওরা সবুজ, ওরা কাঁচা। আধ মরাদের ঘা মেরে ওরাই বাঁচিয়ে তুলতে পারে। ওদের হাতেই ‘নতুন স্বাবলম্বী ভারত’ গড়ে উঠবে। ওদের গড়ে তোলা ভারত ‘বিশ্বগুরু’র আসন দখল করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”
এদিনের অনুষ্ঠানে বিশেষভাবে উপস্থিত ছিলেন ‘দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির’-এর পক্ষ থেকে মিলন খামারিয়া। আজকের শিক্ষা সামগ্রী বিতরণের গুরুত্ব প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন যে, “আজকের যুব সমাজ আদর্শহীনতায় ভুগছে। তারা সঠিক পথের সন্ধান পাচ্ছে না। স্বামী বিবেকানন্দের জীবনবোধ ও তাঁর দেখানো পথে বর্তমান যুব সমাজ যাতে নিজেদের চরিত্র নির্মাণ করে, তাঁর আদর্শে যাতে দেশের কাজে এগিয়ে এসে দেশ মাতৃকার মঙ্গল সাধনে ব্রতী হয় – সেই উদ্দেশ্যেই আজকের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।’
প্রসঙ্গত আজ স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করার জন্য কল্যাণ মন্দিরের সদস্যবৃন্দ গতকাল থেকেই শিক্ষা সামগ্রী বিতরণের কাজ শুরু করে দিয়েছিল। গতকাল মোহনপুরের কয়েকজন শিক্ষার্থীর হাতেও তারা শিক্ষা সামগ্রী তুলে দিয়েছিল।
