স্কুলের বুকলিস্টে মমতার ছবি, স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় পতাকার বদলে দলীয় পতাকা উত্তোলনের পরিকল্পনা, হোগলবেড়িয়ার প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মদ্যপান সহ একাধিক অভিযোগ ছাত্র ও অভিভাবকদের
নিজস্ব সংবাদদাতা, নদীয়া: বুক লিস্টে মনীষীর ছবির পরিবর্তে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি। ঘটনাটি ঘটেছে নদীয়া জেলার হোগলবাড়িয়া থানার অন্তর্গত হোগলবাড়িয়া আদর্শ শিক্ষা নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ে। বুক লিস্টে দেখা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ছবি। বিষয়টি নিয়ে মানুষের মাঝে হইচই পড়ে গিয়েছে। স্কুলের ছাত্ররা বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে। পাশাপাশি, এই বিতর্কিত বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্কুলে পাঠরত পড়ুয়াদের অভিভাবকরাও।
এই স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র আকাশ মন্ডল তাঁর অন্যান্য সহপাঠীদের উপস্থিতিতে জানান, “বিষয়টি আমাদের কাছে খুবই লজ্জাজনক যে, স্কুলের বুক লিস্টে মনীষীদের ছবি থাকে। যেমন- স্বামী বিবেকানন্দ, কাজী নজরুল ইসলাম কিংবা অন্যান্য মহান ব্যক্তিদের ছবি যেখানে থাকে, সেখানে মমতা ব্যানার্জির ছবি কেন থাকবে? আবার হেড মাস্টারের ঘরে টেবিলেও রয়েছে মমতা ব্যানার্জির ছবি। এটা ভীষণ লজ্জার বিষয়। আবার সামনের সরস্বতী পূজার চাঁদা সংগ্রহ করা হয়েছে। অথচ হেডমাস্টার বলছেন, সরস্বতী পূজা করবেন না। স্বাধীনতার দিন স্যার (প্রধান শিক্ষক) বলেছেন, পতাকা (জাতীয় পতাকা) উত্তোলিত না হয়ে দলের পতাকা উত্তোলন করা হবে। এটা কোন ধরণের অসভ্যতা? স্কুলে আবার রাজনৈতিক আন্দোলন হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক প্রতিদিন মদ খেয়ে ঢোকেন। কিছু বললেই পুলিশের ভয় দেখান। গতকাল দ্বাদশ শ্রেণীর একটি ছাত্র বিষয়টির প্রতিবাদ করায়, তাঁকে বেধড়ক মেরেছেন প্রধান শিক্ষক। প্রতিদিন স্কুলে বন্দুক নিয়ে আসেন। কিছু হলেই থানায় ফোন করেন। “
এই স্কুলের নবম শ্রেণীর এক ছাত্রের বাবা নিশীথ মন্ডল এই স্কুলেরই একজন প্রাক্তন ছাত্র। তিনিও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, আমার ছেলে এই স্কুলে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে। তার বুক লিস্টে দেখছি মমতা ব্যানার্জির ছবি। এটা ঠিক নয়। কারণ, আমরাও এই স্কুলে পড়াশোনা করেছি। তখন স্কুলের বুক লিস্টে রবীন্দ্রনাথ বা কাজী নজরুল ইসলামের ছবি থাকত। কিন্তু, এই প্রধান শিক্ষক যতদিন থাকবেন, ততদিন স্কুলের শিক্ষার অবনতি ঘটবে।
অন্যদিকে স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্রীর বাবা নারায়ণ চন্দ্র সরকার। তিনিও এই স্কুলের একজন প্রাক্তন ছাত্র। নারায়ণবাবু বলেন, বুক লিস্টে মমতা ব্যানার্জির ছবি দিয়ে স্কুলের রাজনীতিকরণ করা হচ্ছে। আমরা যখন পড়াশোনা করেছি, তখন স্কুলের বুক লিস্টে রবীন্দ্রনাথের ছবি থাকত। এখন কেন মমতা ব্যানার্জির ছবি দেওয়া হবে? তাছাড়া স্কুলের প্রেয়ার কেন দুপুর ১২টার সময় শুরু হবে? আমরা অভিভাবকদের ডেকে বিষয়টির সমাধান করার চেষ্টায় আছি। যাতে সুষ্ঠভাবে স্কুল পরিচালনা করা যায়।
স্থানীয় সিপিএম নেতা সন্দীপন ব্যানার্জি বলেন, রাজ্যে যা ঘটছে, তাতে এবিষয়ে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। মমতা ব্যানার্জির অনুপ্রেরণায় স্কুলে এইধরণের ঘটনায় ঘটবে। এটা খুবই স্বাভাবিক। এটাই রাজ্যের ভবিতব্য।
হোগলবেড়িয়ার প্রবীণ নাগরিক গোবিন্দ ঘোষ বলেন, এই স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৯ সালে। এতদিন আমরা বুকলিস্টে রবীন্দ্রনাথের ছবি দেখে আসছি। এখন এই ২০২৩ সালে দেখছি সেখানে মমতা ব্যানার্জির ছবি সেট করা হয়েছে। পাশাপাশি তিনি অভিযোগ করেন, এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও বর্তমান ম্যানেজিং কমিটি স্কুলের চার লক্ষ টাকার সম্পত্তি নষ্ট করেছেন। স্কুলের সিসি ক্যামেরা, ফার্নিচার, ফ্যান ইত্যাদি নষ্ট হওয়ার জন্য তাঁরাই দায়ী।
যদিও হোগলবাড়িয়া আদর্শ শিক্ষা নিকেতনের প্রধান শিক্ষকের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি পাল্টা ব্যাখ্যা দেন। বলেন, “মমতা ব্যানার্জি একজন কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী; ভালো ছবিও আঁকতে পারেন। তিনি তো মনীষী মহিলা। তিনি কিসে কম আছেন? আমার তো তা মনে হয় না!” প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা দপ্তরের দেওয়া সরকারি পাঠ্য বইয়ে যেখানে মমতা ব্যানার্জির ছবি আছে, সেখানে আমি বুকলিস্টে তাঁর ছবি দিয়েছি। এতে কী অন্যায় করেছি? এপ্রসঙ্গে তিনি মমতা ব্যানার্জির লক্ষ্মী ভান্ডার, কন্যাশ্রী, সবুজ সাথী, স্বাস্থ্যসাথী সহ একাধিক প্রকল্পে উন্নয়ের ফিরিস্তিও তুলে ধরেন।