তমলুক: এবার বোল্ডার দুর্নীতি কান্ডে গ্রেপ্তার হল কোলাঘাটের শান্তিপুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সেলিম আলি। পূর্বেই দুর্নীতির দায়ে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছিলেন অভিষেক ব্যানার্জি। সেই ঘটনার কোপ এবার পড়ল পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তথা প্রধান ঘনিষ্ঠ কৃষ্ণা রায় সামন্তের উপর। তাঁকে তৃণমূলের সমস্ত পদ থেকে বহিষ্কার করা হল।
পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি পঞ্চানন দাস বলেন, বহুদিন ধরেই উপপ্রধান কৃষ্ণা রায় সামন্তের উপর দুর্নীতির অভিযোগ আসছিল। তাই তাঁকে সমস্ত পদ থেকে বহিষ্কার করা হল। এক ডাকে অভিষেক প্রকল্পে শান্তিপুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে অন্তর্তদন্ত শুরু করে তৃণমূল। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রধান সেলিম আলিকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি।
পদত্যাগের পর নিজের পক্ষে সাফাই দিতে বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সন্মেলন করেন সেলিম। এদিন রাতেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এবার সেলিম ঘনিষ্ঠ উপপ্রধান কৃষ্ণা রায় সামন্তের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ শুরু করল তৃণমূল। যদিও গোটা ঘটনাকে তৃণমূলের আই ওয়াশ বলে দাবি করেছে বিজেপি নেতৃত্ব।
উল্লেখ্য, একদিকে গ্রাম বাংলার ভোট ক্রমশ এগিয়ে আসছে, আর অন্যদিকে বিরোধী দলগুলির নিশানার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে শাসক দল তৃণমূল। আর বিরোধীদের অস্ত্র ভোঁতা করে দিতে চাইছে তৃণমূল। সেজন্য একের পর এক দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা-নেত্রীদের গারদে ভরা শুরু হয়েছে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দুই সপ্তাহ আগে তার শুরুটা করেছিলেন। জেলায় জেলায় পঞ্চায়েত প্রধান, উপপ্রধান, অঞ্চল সভাপতি সহ যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, তাঁদের পদত্যাগের নির্দেশ দিয়ে চলেছেন। ইতিমধ্যে পূর্ব মেদিনীপুর এবং নদিয়া জেলায় গিয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের সেই নির্দেশ দেন তিনি। আর তারপর থেকেই এই অভিযান আরও বেড়ে চলেছে।
এক ধাক্কায় একেবারে তিন জন তৃণমূল নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলায়। একজন প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর, একজন পঞ্চায়েত প্রধান এবং একজন প্রাক্তন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। তিনজনের বিরুদ্ধেই ব্যাপক দুর্নীতি এবং স্বজন পোষণ এর অভিযোগ রয়েছে। এদের সঙ্গে একজন ঠিকাদার গ্রেপ্তার হয়েছেন। স্থানীয় মানুষদের চাকরি দেওয়ার নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতানোর অভিযোগ রয়েছে হলদিয়ার প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর প্রশান্ত দাসের বিরুদ্ধে । এব্যাপারে দুর্গাচক থানায় প্রশান্ত দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন স্থানীয় এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন। পুলিশ তাঁকে জেরা করার পর গ্রেপ্তার করে।
বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি করার অভিযোগ রয়েছে শান্তিপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সেলিম আলীর বিরুদ্ধে । সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এক ডাকে অভিষেক চালু করেছিলেন। সেখানে ফোন করে দুর্নীতির অভিযোগ জানাচ্ছিলেন জেলার যেকোনও সাধারণ মানুষ। দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়ে সেলিম আলির নামে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে দল। হাতে প্রমাণ আসতেই তাঁকে পদত্যাগের নির্দেশ দেয় দল। সেলিম প্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন। এরপর পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
এদিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে শহীদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি দিবাকর জানাকেও। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি থাকাকালীন তাঁর বিরুদ্ধে রাস্তার নাম করে কোটি কোটি টাকার বোল্ডার সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যেগুলি কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এই তিনজন তৃণমূল নেতা। সরাসরি বিজেপিতে যোগ না দিলেও দিবাকর জানার বিরুদ্ধে শুভেন্দুর হয়ে নির্বাচনে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও শুভেন্দুর ভাই সৌমেন্দুর ঘনিষ্ঠ বলেই জানা গিয়েছে হলদিয়ার প্রাক্তন কাউন্সিলর প্রশান্ত দাস। এই তিনজন তৃণমূল নেতাকে এতদিন শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ থাকার কারণে পুলিশ ছুঁতে পারত না বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে । গ্রেপ্তার করা হয়েছে স্থানীয় ঠিকাদার রাম পন্ডাকে। তাঁর বিরুদ্ধেও একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এই গ্রেপ্তারের বিষয়ে অবহিত করেছেন পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার। তবে একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে একের পর এক প্রাক্তন এবং বর্তমান তৃণমূল নেতাদের গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে । তাহলে কি তৃণমূলের পায়ের তলার মাটি সরতে শুরু করেছে? বিশ্বাস হারাচ্ছে নেতা কর্মীদের ওপর? তাঁরা কি বিজেপিতে ভিড়ে যাওয়ার ভয়ে এই গ্রেপ্তার?
previous post
