April 16, 2025
দেশ সম্পাদকীয়

গান্ধী পরিবারের ‘ইয়েস ম্যান’ খাড়গেই হচ্ছেন কংগ্রেসের নতুন সভাপতি

সুভাষ পাল, সংবাদ কলকাতা: অবশেষে গান্ধী পরিবারের পছন্দের ব্যক্তি মল্লিকার্জুন খাড়গেই হতে চলেছেন কংগ্রেসের নতুন সর্বভারতীয় সভাপতি। বুধবার দলীয় নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর সেটি নিশ্চিত হয়েছে। কংগ্রেসের সভাপতি পদের নির্বাচনে মোট ৯,৩৮৫ টি ভোট পড়েছিল। খাড়গের মোট প্রাপ্ত ভোট ৭ হাজার ৮৯৭টি। অন্যদিকে শশী থারুর পেয়েছেন মাত্র ১ হাজার ৭২ টি ভোট। বাতিল হয়েছে ৪১৬ টি ভোট। ফলে তিনি তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী থারুরকে প্রায় ৭ হাজার ভোটে পরাজিত করে সভাপতির আসন নিশ্চিত করেছেন। আগামী ২৬ নভেম্বর সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন বলে জানা গিয়েছে।

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে দেশ জুড়ে রাজনৈতিক মহলে গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধে পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ আসছিল। বিজেপিও সুযোগ বুঝে আক্রমণ করতে ছাড়েনি। তা সত্ত্বেও দলের কুর্শি ছাড়তে নারাজ ছিলেন রাহুল গান্ধী। তিনি দলের সভাপতি হয়ে ২০১৯ লোকসভা ভোটের বাজার গরম করতে শুরু করেন। ভাবটা এমনই ছিল যে, মোদীকে নিমেষে টপকে রাহুল গান্ধীর কংগ্রেস ক্ষমতায় আসা শুধু সময়ের অপেক্ষা।কিন্তু, বাদ সাধল ভারতের আপামর জনতা জনার্দন। মোদির বিরুদ্ধে রাহুল গান্ধীর ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বলা গালগল্প মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। ভোট গণনা শুরু হতেই গণেশ উল্টে যায় কংগ্রেসের। ফের দেশে একক সংখ্যা গরিষ্ঠ হয় বিজেপি।

এদিকে রাহুল গান্ধীকে সভাপতি করে লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর দলের সমর্থকদের মধ্যেও সেই অভিযোগ প্রকট হতে শুরু করে। বেগতিক বুঝে রাহুল গান্ধী নিজেই সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। পরবর্তী সভাপতি নির্বাচন না হওয়া অবধি সোনিয়া গান্ধীকে অন্তর্বর্তী সভাপতি করে দায় সারে কংগ্রেস।

কিন্তু, গত তিন বছরেও নতুন সভাপতি নির্বাচনের ব্যাপারে দ্রুত কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করেনি দেশের সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দল। ফলে ফের সেই পরিবারতন্ত্রের অভিযোগই তীব্র হতে শুরু করে। এবার ফের ড্যামেজ কন্ট্রোলে নাম গান্ধী পরিবার। দলের সমর্থকদের ভরসা পেতে দলীয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হয়। কেননা সামনে আর একটি বছর পেরোলেই ফের লোকসভা ভোট। এর মধ্যে একের পর এক বিধানসভা নির্বাচনেও ভোট ব্যাংকে বড়ো কোনও পরিবর্তন হয়নি। গেরুয়া শিবির কংগ্রেসকে গিলে খেয়ে ফেলছে। ফলে গান্ধী পরিবারের বাইরে সভাপতি না হলে মানুষের কাছে মুখরক্ষা করা মুশকিল হতে পারে।

সূত্রের খবর, নতুন সভাপতি হিসেবে গান্ধী পরিবারের প্রথম পছন্দ ছিল রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট। সেই মতো প্রস্তুতিও শুরু হয়। নাম কা ওয়াস্তে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রাখা হয় শশী থারুরকে। ভূ ভারতে আর কেউ সভাপতি হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সাহস দেখান নি। এমনকি বাংলায় অনেক যোগ্য ও পোড় খাওয়া নেতা থাকলেও তাদের নাম প্রস্তাব করেননি কেউ। কেউ একবার মুখ ফুটে প্রদীপ ভট্টাচার্য, অধীরদের নাম উচ্চারণ করেননি।

অন্যদিকে সভাপতি হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য অশোক গেহলট দিল্লি আসতেই রাজস্থান কংগ্রেসে শুরু হয় চাপানউতোর। রাজস্থানের অধিকাংশ বিধায়ক পাইলটকে মুখ্যমন্ত্রী মানতে প্রস্তুত নন। গেহলটপন্থী মন্ত্রী ও বিধায়করা দল বেঁধে দিল্লিতে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করে। ফলে দলের আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি ও রাজ্য সরকারের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সভাপতি নির্বাচনের দৌড় থেকে পিছিয়ে আসেন গেহলট।

এরপর গান্ধী পরিবারের ‘ইয়েস ম্যান’ হিসেবে মল্লিকার্জুন খাড়গেকেই বেছে নেওয়া হয় বলে সূত্রের খবর। না হলে মনমোহনের মতো আর কাউকে গান্ধী পরিবারের হাতের পুতুল হিসেবে ভরসা করা সম্ভব হচ্ছিল না বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি। অনেকেরই মনে হয়েছিল, ১ অক্টোবর খাড়গে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতার পদ থেকে পদত্যাগ করে দলের বিরুদ্ধে বোধহয় বিদ্রোহ ঘোষণা করতে চাইছেন। আসলে তা নয়। কয়েক দিন যেতেই ক্রমশ ছবিটা পরিষ্কার হয়। অনেকের ধারণা, সেখানেও ছিল গান্ধী পরিবারের গোপন নির্দেশ। গেহলটের জায়গায় দলের সভাপতি হিসেবে তাঁকেই চাইছেন কংগ্রেসের অন্তরাত্মারা।

নির্বাচনী প্রক্রিয়া যাই হোক, দলে এখনও গান্ধী পরিবারের একটি অলিখিত নির্দেশ কাজ করে। সোনিয়া, রাহুল, প্রিয়াঙ্কারা যাকে চাইবেন, ভোটাররা তাঁকেই ভোট দেবেন। এটাই দস্তুর। না হলে থারুর মাত্র এক হাজার ভোট পেলেন, আর খাড়গে প্রায় আট হাজার ভোট পেলেন কিভাবে? অনেকের ধারণা, দলের গোপন সংকেতের উর্ধে গিয়ে থারুরকে যাঁরা ভোট দিয়েছেন, তাঁরা আসলে পরিবর্তনপন্থী ভোটার। তবুও শেষ হাসি হাসল সেই গান্ধী পরিবার।

Related posts

Leave a Comment