29 C
Kolkata
August 2, 2025
কলকাতা

হাওড়ার অমরাগড়ী গ্ৰামের রায় পরিবারের পুজো এবার ৩০৩ বছরে পদার্পণ করেছে

অভিজিৎ হাজরা, আমতা, হাওড়া: এই পূজা সম্পর্কে জানার আগে এই পরিবারের শ্রী শ্রী ঁগজলক্ষী মাতা স্টেট সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। এই স্টেটটি গঠিত হয়েছিল বাংলার ১১২৬ সালের ১৫ ই বৈশাখ। বর্তমানে ৩০৩ বছরে পদার্পণ করেছে এই স্টেটটি‌। এই  স্টেটের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন স্বর্গীয় শান্তি রায়।এই তিনি  বাণিজ্য করতেন এবং দেশে দেশে ঘুরে বেড়াতেন। একদিন তিনি বাণিজ্য করতে বেরিয়ে এই গ্ৰামে রাত্রি যাপনের জন্য জাহাজের নোঙর বাঁধেন। সেই রাত্রে মা ঁগজলক্ষী  দেবী  শান্তি রায়কে স্বপ্নাদেশ দিয়ে বলেন, ‘কিরে! আমাকে ছেড়ে চলে যাস না। তুই আমার প্রাণ প্রতিষ্ঠা কর’। সেই স্বপ্নাদেশ পেয়ে তিনি শ্রী শ্রী ঁগজলক্ষী মাতার প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রাণ প্রতিষ্ঠার পর তিনি অমরাগড়ী গ্ৰামে বসবাস শুরু করেন। গ্ৰামবাসীদের নিয়ে গড়ে তোলেন শ্রী শ্রী ঁগজলক্ষী মাতা স্টেট।
তিনি বাইরে থেকে সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষজনদের এনে এই গ্ৰামে বসবাস করান। এই গ্ৰামটিকে একটি আদর্শ গ্ৰামে রূপান্তরিত করেন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত এই স্টেট একইভাবে একই নিয়মে চলে আসছে। এই স্টেটের বিভিন্ন পূজার্চনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য রথযাত্রা, জম্মাষ্টমী, রাসযাত্রা, চৈত্র সংক্রান্তি, ১লা বৈশাখ, ঝাঁপ ও গাজন, শিবরাত্রি পূজা, চাঁচড়  ও দোল উৎসব, মকর সংক্রান্তি, দশহরা। এছাড়া নিত্যসেবা, শ্রী শ্রী ঁগজলক্ষী দেবী ও তিনটি শিব মন্দিরের পূজা এখনও চলে আসছে। সেই সঙ্গে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব মহাপূজা দুর্গা পূজাও চলে আসছে ধারাবাহিকভাবে।
এই স্টেটের বর্তমানে সভাপতি নিশীথ কুমার রায়। সম্পাদক শ্রী গৌরাঙ্গ মোহন রায়। সহ সম্পাদক সৌরভ রায় দ্বারা দুর্গাপূজা সহ অন্যান্য উৎসব পরিচালিত হচ্ছে।
অমরাগড়ী গ্ৰামের শ্রী শ্রী ঁগজলক্ষী মাতা স্টেট-এর দুর্গাপূজা এই বছর ৩০৩ তম বর্ষে পদার্পণ করেছে। এই পূজার বৈশিষ্ট্য এক চালা প্রতিমা, চামুণ্ডা মূর্তি। এই পূজা মহালয়ার পরের দিন অর্থাৎ প্রতিপদ থেকে শুরু। দেবীর চন্ডীপাঠ, নিত্যদিনের সন্ধ্যারতির মাধ্যমে প্রতিপদের দিন থেকে রায় পরিবারের দুর্গোৎসব পূর্ণ মাত্রা এনে দেয়।
কথিত আছে, প্রায় ১৮০ বছর আগে এই পূজায় মহিষ বলি হত। বর্তমানে বলি বন্ধ।কারণ ১৮০ বছর আগে অমরাগড়ী এলাকাটি ছিল জলা-জঙ্গলে ভরা। শোনা যায়, এক বছর দুর্গাপূজার সন্ধিপূজার সময় ছিল রাত্রে। কর্মকার মহিষ বলি দেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে রাত্রে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু, রাস্তায় তাঁকে হঠাৎ বাঘে তাড়া করে। কর্মকার  বাঘের ভয়ে সামনের একটি গাছে উঠে পড়েন। অনেকক্ষণ কর্মকার গাছে বসে আছেন। এদিকে সন্ধিপূজার বলির সময় এগিয়ে আসছে। পূজা মন্ডপে সন্ধিপূজার ঘন্টা পড়ছে। তখনও বাঘ গাছতলা  থেকে সরছে না। তখন কামার মায়ের নাম স্মরণ করে গাছ থেকে লাফ দিয়ে বাঘের ঘাড়ের উপর পড়ে। সেইসঙ্গে কামারের হাতে থাকা কাতানের আঘাতে বাঘের মুন্ডচ্ছেদ হয়। এরফলে সন্ধিপূজার বলিও ওখানেই সমাপন ঘটে। সেই রাত্রে দেবী স্বপ্নাদেশ দিয়ে বলেন, ‘কিরে আমার বাহনকে মেরে ফেললি? তোরা বলি বন্ধ কর’। সেই থেকেই বলি বন্ধ।

Related posts

Leave a Comment