মৃন্ময় ভট্টাচার্য
আমি সরীসৃপ প্রজাতির না হলেও মেরুদণ্ড বস্তুটি চিরকালই নড়বড়ে, দাঁড়িয়ে বা বসে থাকা বড়ো একটা পোষায় না।
কর্মক্ষেত্র থেকে অবসর নেওয়ার পর সারাদিন শবাসনে থাকতেই আমি পছন্দ করি। সে কারণে গিন্নি বিরক্ত হয়ে বলতো “একটা মানুষ কি করে যে সারাদিন শুয়ে শুয়ে সময় অপব্যয় করতে পারে, তা আমার মাথায় ঢোকেনা।” কিন্তু আমার বিকল শ্রবণ যন্ত্রের কারণে সংসারে অশান্তির ছোঁয়া এতটুকুও লাগতে পারেনি।
সাধারণ মধ্যবিত্তের সংসারে নদীর জোয়ার ভাটার মতো শান্তি ও অশান্তি নিত্য খেলা করে। কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্তের “উটপাখী” কবিতার “অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে “-র মতো “বধির হলে কি চিরশান্তি বজায় থাকে”। বেহুলার বাসর ঘরে যেভাবে সর্প প্রবেশ করেছিল সেভাবেই একটি মূল্যবান বিদেশী সারমেয় সাবকের প্রবেশ ঘটলো সংসারে। তিন মাস বয়স হতেই সে “বাঘের বাচ্চার মতো দাপিয়ে বেড়াতে লাগলো বাড়ির সর্বত্র ” এই বয়সে তার নাকি দাঁত সুরসুর করে,তাই নাগালে যা পায় তাইই কামড়ায়”। বিছানা থেকে নামতেই বুক ধড়ফড় করে, প্রকৃতির ডাককে তো উপেক্ষা করা যায় না, তখন ঈশ্বরের নাম জপ করতে করতে যাই, কিন্তু ঈশ্বরও তার ভয়ে সঙ্গ দেন না, নেতাজির ভক্ত, তাই মাঝে মধ্যে রক্ত দিতে হলেও, তা মেনে নিতে হয়।
সেদিন গিন্নিকে অফিসে পৌঁছে দিয়ে বাড়ি ফিরছি, তিনি পরামর্শ দিলেন ” বাড়ি ঢুকে কোনোরকমে বিছানায় উঠে পড়বে, আমি না ফেরা পর্যন্ত মেঝেতে নামবে না।” আমি হতবাক! পরিস্থিতির চাপে একেবারে ‘ইউ টার্ন’! ভূত ও প্রয়োজনে রাম নাম মুখে আনে! কি বলেন?
চুঁচুড়া
০২|০৪|২০২৪