29 C
Kolkata
June 16, 2025
কলকাতা

স্মরণে মননে আফতাব উদ্দিন মন্ডল

অভিজিৎ হাজরা, হাওড়া: পূর্বতন আমতা বিধানসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক আফতাব উদ্দিন মন্ডল-এর ৭ম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত হল আমতা ১ পঞ্চায়েত সমিতির কার্যালয়ের বিপরীতে ভি আই পি মার্কেটে। আফতাব উদ্দিন মন্ডল এর বাড়ির দোতলায়। প্রয়াত আফতাব উদ্দিন মন্ডল এর আত্মার শান্তি কামনায় এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে স্মরণ সভার সূচনা হয়। এই স্মরণসভার অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন ডাঃ সুধীন পাত্র।

উল্লেখ্য, প্রাক্তন বিধায়ক তথা জননেতা প্রয়াত আফতাব উদ্দিন মন্ডল জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৫ সালের ১৮ জুলাই। তাঁর জন্মস্থান আমতা থানার দেওড়া গ্ৰামের এক দরিদ্র পরিবারে মুসলিম পরিবারে। তাঁর পিতা আব্দুল মজিদ মন্ডল একজন মৌলবী ছিলেন। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনিই ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায় তিনি অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন। শৈশবে পিতাকে হারানোর পর অত্যন্ত দারিদ্র্যতার বিরুদ্ধে তাঁকে কঠিন লড়াই করতে হয়। এসবের মধ্যেই তিনি আমতা কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন।

সেই সময় থেকেই তিনি ছাত্র রাজনীতিতে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এরপর খড়দহ হাইস্কুলে শিক্ষকতার মাধ্যমেই তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। ছাত্র জীবন থেকে রাজনীতি করার সুবাদে প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সী, অজিত পাঁজা, সিদ্ধার্থশংকর রায় সহ রাজ্যের তৎকালীন মন্ত্রী ও বিধায়কদের সুনজরে পড়েন। মাত্র কয়েক বছর যেতে না যেতেই ১৯৭২ সালে পূর্বতন আমতা বিধানসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস দলের প্রার্থী হয়ে সিপিআইএম প্রার্থী নিতাই ভান্ডারীকে পরাজিত করে বিধায়ক হন।

রাজনীতি করার সুবাদে জেলা তথা রাজ্যের বিভিন্ন মন্ত্রী ও বিধায়কদের সুনজরে ছিলেন। যেহেতু তিনি ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত দারিদ্রতার মধ্যে বড় হয়েছেন। সেজন্য তিনি বিধায়ক হওয়ার আগে ও পরে দলমত নির্বিশেষে অনেক দরিদ্র পরিবারের যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থান করে দিয়েছিলেন।
১৯৭৭ সালে রাজ্যের শাসন ক্ষমতার পরিবর্তন হয়। ক্ষমতায় আসে বামফ্রন্ট। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল মাত্র পাঁচ বছর বিধায়ক থাকাকালীন সময়ে আমতার সর্বাঙ্গীন উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে নিজেকে নিয়োজিত করেন। কৃষি ও সেচ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য দামোদর ও নিম্ন দামোদর নদ সংস্কার, কেদুয়া খাল খনন, মাঠে মাঠে ডিপ টিউবওয়েল বসানো ও রিভার লিফর্ট স্থাপন প্রয়াত আফতাব উদ্দিন মন্ডল এর উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব। তিনি প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার যুবক যুবতীর কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছিলেন বলে দাবি স্থানীয়দের। এছাড়া গ্ৰামীণ বৈদ্যুতিকরণ, রাস্তা নির্মাণ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতিও এই সময় লক্ষ্য করা যায়।

দলমত নির্বিশেষে সব মানুষের কাছেই তিনি অত্যন্ত আপনজন হিসাবে পরিচিত ছিলেন। সদা হাস্যমুখ ও তাঁর সুমধুর ব্যবহারে সকলকেই আকৃষ্ট করত। বিধায়ক হিসাবে বিধানসভায় তাঁর বক্তব্য তৎকালীন শাসকদলের মন্ত্রী, বিধায়ক সহ বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীদের আকৃষ্ট করত। বিধানসভার অধ্যক্ষও তাঁর সুমধুর বক্তব্যে আকৃষ্ট হতেন। রাজ্যের বিভিন্ন জেলার শাসকদলের নেতা-নেত্রী, বিরোধী দলের নেতা-নেত্রী ও জনগণের কাছে সুমধুর বক্তা হিসাবে যিনি পরিচিতি লাভ করেছিলেন। যা এখনও পর্যন্ত রাজ্যের বিভিন্ন জেলার মানুষও তাঁকে মনে রেখেছেন। আমৃত্যু তিনি কংগ্রেসের একজন বিশ্বস্ত সৈনিক ছিলেন।

২০১৫ সালের নভেম্বরে উত্তর ভারতের এক তীর্থক্ষেত্রে ভ্রমণের সময় তাঁর আকস্মিক প্রয়াণ হয়। তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ আমতা শহরে জনপ্লাবনের এক বিরল দৃশ্য আজও আমতাবাসী মনে রেখেছে। ‘আফতাব উদ্দিন মন্ডল স্মৃতি রক্ষা কমিটি’ গত সাত বছর ধরে নভেম্বর মাসে তাঁর স্মরণ সভার আয়োজন করে আসছে।

এবছর প্রয়াত আফতাব উদ্দিন মন্ডল-এর ৭ম বার্ষিক স্মরণসভা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে উলুবেড়িয়া উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক ডাঃ নির্মল মাজী বলেন, ‘আমি প্রয়াত আফতাব উদ্দিন মন্ডলের নির্দেশ ও পথ অনুসরণ করে কাজ করছি। উনি যেরূপে আমতাকে সাজাতে চেয়েছিলেন, আমার উন্নয়নে যা যা কাজ করতে চেয়েছিলেন, আমি সেইরূপে আমতাকে সাজাতে নানান উন্নয়নমূলক কাজ করে প্রয়াত আফতাব উদ্দিন মন্ডলের স্বপ্নের আমতা গঠনে কাজ করছি।

আজকের এই স্মরণসভায় প্রয়াত আফতাব উদ্দিন মন্ডল-এর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন উপস্থিত অতিথি থেকে প্রয়াত নেতার গুণমুগ্ধ ব্যক্তিবর্গ। প্রয়াত নেতার কর্মজীবনের উপর আলোকপাত করেন রাষ্ট্রপতি পুরষ্কার প্রাপ্ত শিক্ষক অরুণ পাত্র, রণজিৎ সিনহা, তপন সাহা, বলাই মিত্র, আফতাব উদ্দিন মন্ডল স্মৃতি রক্ষা কমিটির সভাপতি সফি মন্ডল সহ প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

আফতাব উদ্দিন মন্ডল স্মৃতিরক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে উলুবেড়িয়া উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক ডাঃ নির্মল মাজীর কাছে কয়েকটি দাবি রাখা হয়। সেই দাবিগুলি হল, আমতা কলাতলা থেকে আমতা সিনেমাতলা পর্যন্ত রাস্তাটি “আফতাব উদ্দিন মন্ডল সরণী ” নামকরণ। এছাড়া আফতাব উদ্দিন মন্ডল-এর আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করার জন্য অনুরোধ করা হয়। আফতাব উদ্দিন মন্ডল স্মৃতি রক্ষা কমিটির এই অনুরোধের মান্যতা দিয়ে বিধায়ক ডাঃ নির্মল মাজী বলেন, ‘২০২৩ সালে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনের শেষে প্রশাসক মন্ডলী গঠন হবে। তখন আমতা সিটিসি বাসস্ট্যান্ডের সন্নিকটে প্রয়াত আফতাব উদ্দিন মন্ডল-এর আবক্ষ মূর্তি বসাবেন।

যদিও এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আফতাব উদ্দিন মন্ডল যে সাড়ে পাঁচ হাজার বেকারের কর্মসংস্থান করে দিয়েছিলেন, তাদের মূল্যবোধ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কারণ বিপদের সময় পাশে দাঁড়িয়ে যে ব্যক্তি কর্মসংস্থান করে দিয়েছিলেন, তারা সেই মানুষকে মনে রাখে নি। তাঁর ৭ম বার্ষিক স্মরণসভা অনুষ্ঠানে তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাত্র তিন থেকে চার জন।

Related posts

Leave a Comment