৪৭ বছরের পুরনো দুর্গা মণ্ডপের জমি রক্ষার জন্য সনাতন মানুষের স্মরণাপন্ন হলেন স্বরূপনগর সীমান্তের স্বরূপদহের হিন্দু সম্প্রদায়
সুভাষ পাল, সংবাদ কলকাতা: উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বিথারী-হাকিমপুর গ্রাম পঞ্চায়েত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম পঞ্চায়েত। এই গ্রাম পঞ্চায়েতে বহু স্বনামধন্য ও গুণী মানুষের বসবাস। এটি একটি ইতিহাস সমৃদ্ধ এলাকা। এখানে বহু সম্ভাবনাময় প্রতিভাও রয়েছে। রানী রাসমণির জামাতা মথুরমোহনের পিতৃভূমি এই পঞ্চায়েতে অবস্থিত। ভক্ত যবন হরি দাসের পালিত ভিটা এই গ্রাম পঞ্চায়েত হাকিমপুরের সোনায় নদীর তীরে অবস্থিত। অপরদিকে সোনাই নদী পেরোলেই বাংলাদেশের কেড়াগাছি গ্রাম। যেখানে ভক্ত যবন হরি দাসের জন্মস্থান। দেশ বিভাজনের পর থেকে বার বার এই এলাকায় বিশিষ্ট মানুষদের জনপথ হিসেবে পরিচিতি পেয়ে এসেছে। এই গ্রাম পঞ্চায়েতের বিথারী ও হাকিমপুরের মধ্যবর্তী গ্রামটির নাম স্বরূপদহ। যেখানে দেশ বিভাজনের সময় থেকে মুক্তিযুদ্ধের কঠিন সময়েও ওপার বাংলার ধর্মপ্রাণ ও নিরীহ হিন্দু সম্প্রদায় একের পর এক বসতি গড়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তাঁরা প্রায় ৯৯ শতাংশ মানুষ কৃষিজীবী, কর্মকার, কুম্ভকার, স্বর্ণকার, পরামানিক, গোয়ালা সহ বিভিন্ন খেটে খাওয়া মানুষের বাস। তাঁরা অনেক কষ্টে ভিটে মাটি ছেড়ে এদেশে এসে পরবর্তী প্রজন্মকে যথাযোগ্য শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার প্ৰয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে তাঁরা গ্রামের অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রেখে ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।
গ্রামে প্রায় ১০০ ঘর হিন্দু পরিবার তাঁদের ধর্মীয় উৎসবের মিলনক্ষেত্র হিসেবে ১৯৭৭ সালে একটি সার্বজনীন দুর্গামণ্ডপের প্রতিষ্ঠা করেন। যেখানে এতদিন গ্রামের মানুষের অকুণ্ঠ সহযোগিতায় প্রতি বছর দুর্গা পূজা ও শ্যামা মায়ের আরাধনা করা হয়ে থাকে। গ্রামের এই সীমিত সংখ্যক হিন্দু পরিবারের হাজার অনটনের মধ্যেও একবারও এই দুই বাৎসরিক পূজা অর্চনা বন্ধ হয়নি। তাঁরা তাঁদের যৎসামান্য সামর্থ দিয়ে প্রতি বছর পূজার আয়োজন করে আসছেন। কিন্তু, স্বরূপদহ গ্রামের উপর দিয়ে চলে যাওয়া তেঁতুলিয়া হাকিমপুর সড়কের ধারে অবস্থিত এই দুর্গা মণ্ডপটির জমির অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে একটি সমস্যা চলছিল। লোকমুখে কথিত আছে, গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে যে ব্যক্তি এই মন্দিরের জন্য জমি দিয়েছিলেন, তিনি তখন মন্দিরের নামে লিখে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু, কোনও এক অজ্ঞাত কারণে তিনি মন্দির সহ গোটা জমি ভগীরথ সেনের কাছে বিক্রি করে চলে যান।
কয়েক বছর পর ভগীরথ সেন তাঁর ছয় কন্যা ও স্ত্রীকে রেখে পরলোক গমন করেন। ফলে এতদিন ভগীরথ সেনের স্ত্রী কুন্তীবালা সেন এই জমির মালিক ছিলেন। তিনি বা তাঁর পরিবার এই জমিতে দুর্গা পূজা নিয়ে কোনও আপত্তি না জানালেও মন্দিরের নামে কোনও জমি লিখে দিতে রাজি হননি। ইতিমধ্যে কুন্তিবালা সেন প্রয়াত হয়েছেন। তাঁর মেয়েরাও এখন বিবাহিত। তাঁরা শ্বশুরবাড়িতে থেকে সংসার করছেন। তবে ভগীরথ ও কুন্তীবালা সেনের ছয় কন্যার পরিবার মন্দির সহ এই গোটা জমি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। এতে গ্রামের হিন্দু পরিবারগুলি অথৈ জলে পড়ে। কারণ, জমির বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী জমি কেনার সামর্থ গ্রামের ধর্মপ্রাণ হিন্দু পরিবারগুলির নেই। সেজন্য তাঁরা অনেক অনুরোধ করে জমির দাম কিছুটা কমানোর কথা বললে তাঁরা কিছুটা মূল্য কমাতে রাজি হন। যা রেজিস্ট্রি খরচ দিয়ে প্রায় দশ লক্ষ টাকার কাছাকাছি।
কিন্তু, মন্দির কমিটির কোষাগারে বর্তমানে মাত্র এক লক্ষ পঁচাত্তর হাজার টাকা আছে। আরও প্রায় দুই লক্ষ টাকা অনুদান সংগ্রহের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এখনও প্রায় ছয় লক্ষ টাকা কোষাগারে ঘাটতি রয়েছে। এমতাবস্থায় গ্রামের পূজা কমিটি অথৈ জলে পড়েছেন। কোথা থেকে এই বিপুল অঙ্কের টাকা সংগ্রহ হবে তা ভেবে কুল পাচ্ছেন না।
সেজন্য মন্দির কমিটির কর্ণধার স্বরজিৎ সিংহ ‘সংবাদ কলকাতা’-র স্মরণাপন্ন হতেই এই বিষয়টি নিউজ পোর্টালে তুলে ধরা হল। যাতে ভারতে ও বিদেশে বসবাসরত সনাতন মনোভাবাপন্ন মানুষ সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে পারেন। আপনাদের অকুণ্ঠ সহযোগিতা ছাড়া “স্বরূপদহ দুর্গা কালী মন্দির সেবাশ্রম”-এর অন্তর্গত ‘স্বরূপদহ দুর্গা কালী মন্দির পূজা কমিটি’-র সংকট দূর হওয়ার নয়। সেজন্য যার যেমন সামর্থ আছে, তিনি সেইভাবে অনুদান দিয়ে সহযোগিতা করলে স্বরূপদহের হিন্দু পরিবারগুলি চির কৃতজ্ঞ থাকবে। নিচে ব্যাঙ্ক একাউন্ট ও বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হল।
SWARUPDAHA DURGA KALI MANDIR COMMITTEE
QUERY NO: 1903-1000164321/2019
BANGIYA GRAMIN VIKASH BANK
BRANCH: BITHARI
ACCOUNT NUMBER: 5109010145053
IFSC: PUNB0RRBBGB
এছাড়া মন্দির কমিটির কোষাধ্যক্ষের ফোন পে ও গুগল পে নাম্বার দেওয়া হল:
কোষাধ্যক্ষ: সুকান্ত রায়, ফোন পে ও গুগল পে: 9093508476
এবিষয়ে আরও কোনও বিস্তারিত তথ্য জানার থাকলে ‘সংবাদ কলকাতা ‘-র নিজস্ব নাম্বারে ফোন করুন। ফোন : 7980808383