শঙ্কর মণ্ডল: তৃণমূলের সাংগঠনিক বৈঠক ও সেই বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত নেবে, তা নিয়ে অন্য কারোর মাথা ব্যথার কারণ দেখছি না। কিন্তু মাথা ব্যথার কারণ তখনই হয়, যখন নেতৃত্ব বলেন যে, সব প্রার্থীই তিনি। অথচ সেই প্রার্থী যখন চুরি করে, তখন সেই চুরির দায়ও তাঁর হওয়া উচিত।আর অন্যদিকে জিতেন্দ্র তেওয়ারীকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে এই রাজ্যের পুলিশ যে যোগ্যতার প্রমাণ দিলেন, তা আবারও আদালতে থাপ্পড় খাবেন বলেই মনে হয়। ঠিক যেমন এর আগে বহুবার খেয়েছেন। তাছাড়া আজ অনশন মঞ্চে হঠাৎ করে নওসদ সিদ্দিকীকে ধাক্কা দেওয়ার ঘটনার তদন্ত হওয়া অত্যন্ত জরুরী। কুনালের বক্তব্যকে কোনওদিনই গুরুত্ব দিতে রাজি নই। কারণ ওরকম একটা সাবস্ট্যান্ডার্ড লোকের বক্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
যাই হোক, আসল প্রসঙ্গে আসা যাক। সেটা হল এই মুহূর্তে নিয়োগ দুর্নীতি নোবেল পুরস্কারের দাবিদার হয়ে উঠেছে। কিন্তু বাংলার বুকে চাকরি পাওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই শাসক দলের আনুগত্যই যে প্রধান যোগ্যতা, সেটা কোনও প্রমাণের দরকার নেই। বাংলার আমজনতা তার নিজস্ব অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই জানে। কিন্তু প্রশ্নটা অন্য জায়গায়। সেটা হল, হ্যাঁ, সিপিএম-এর আমলে আজকের মতো টাকা নিয়ে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ নেই। কিন্তু মমতা ব্যানার্জী যে চিরকুটের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন, সেটা সম্পূর্ণ সত্য। সেক্ষেত্রে ক্ষমতায় আসার পর এই অবৈধ চাকরি পাওয়া লোকেদের প্রশ্রয় দিয়েছিলেন কেন? তারও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
তবে একটা বিষয় অত্যন্ত সিগনিফিকেন্ট। এটার দুটো কারণ থাকতে পারে। প্রথমে বিষয়টি বলি, তারপর কারণ ব্যাখ্যায় যাব। সেটা হল, মুর্শিদাবাদে তৃণমূল থেকে পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষের নেতৃত্বে প্রায় ২৫০০ জন কংগ্রেসে যোগদান করেছে। এখন কারণ ব্যাখায় আসা যাক। প্রথমত এটা তৃণমূলের সাথে কংগ্রেসের একটা সমঝোতা হতে পারে। যার মাধ্যমে সরকার বিরোধী ভোট যাতে বিভাজিত হয়, তার জন্য কংগ্রেস সিপিএম বাড়ছে দেখানো। যার মাধ্যমে মানুষ বিভ্রান্ত হয়। সেই সুযোগে তৃণমূলের জয় নিশ্চিত হবে। আর অন্যদিকে আর একটা কারণ উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সেটা হল, এই রাজ্যের বিজেপির নেতৃত্বের অযোগ্যতা আরও শক্তিশালী হচ্ছে। বুথ শক্তিশালী করার কথা বলছে, অথচ প্রধান দুই নেতা, সভাপতি ও সংগঠন সম্পাদকের নিজের বুথেই কোনও বুথ কমিটি গঠন করতে না পারা। আসলে এইভাবে বুথ কমিটি গঠন একেবারেই উপযুক্ত হয় না বলেই মনে করি।
আসলে বাংলার মানুষ যখন উপযুক্ত আন্দোলন ও বুক চিতিয়ে সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো নেতা দেখতে পাবে, তখন নিজেরাই হৈ হৈ করে বেরিয়ে আসবে। ঐ আন্দোলনকে সমর্থন করতে আর ওই লোকেরাই তখন বুথের কমিটি তৈরি করবে।তবে কম্বল বিতরণ বা অন্য কিছু বিতরণ করে যে লোক জোগাড় করার রাজনীতি বা বলা ভালো মানুষের দারিদ্র্যতাকে মূলধন করে লোক জোগাড় করার রাজনীতি করা কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। পরিশেষে একটা কথাই বলব, এই পুলিশের বিরুদ্ধে সর্বদাই আদালতে যাবার প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। কারণ, পুলিশ আইনকে সামনে রেখে, যখন বিরোধী কণ্ঠ রোধ করতে চায় বা বলা ভাল বেআইনি কাজ করে, তার মোকাবিলা করার জন্য আদালতই একমাত্র ভরসা। এবং সুযোগ পেলেই এই পুলিশের বিরুদ্ধে বেআইনি কাজের বিরুদ্ধে কেশ করতে হবে। এইভাবেই প্রমাণ করতে হবে, এগিয়ে নয় পিছিয়ে বাংলা।
লেখক সংযুক্ত হিন্দুফ্রন্টের সভাপতি। মতামত ব্যক্তিগত।