সুভাষ পাল, সংবাদ কলকাতা: অকালে ঝরে পড়ল একটি ফুটফুটে তারা। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর জীবনযুদ্ধে হার মানলেন টলিউডের এই তারকা। মারণ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে নিভে গেল তাঁর জীবন বাতি। মাত্র ২৪ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। রবিবার দুপুর ১২ টা ৫৯ মিনিটে তিনি পাড়ি দিলেন চিরঘুমের দেশে। নতুন কোনও টিভি সিরিয়ালে আর দেখা যাবে না তাঁকে। ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও আর নতুন করে তাঁর অভিনীত কোনও ছবি রিলিজ হবে না। দেখা যাবে না কোনও রিলায়েলিটি শোয়ে তাঁর নিজের মুখে জীবনযুদ্ধের কাহিনী শোনাতে।
টলিউডে ক্যারিয়ার নিয়ে লড়াই শুরু হওয়ার আগেই তাঁর জীবন যুদ্ধের লড়াই শুরু হয়। ২০১৫ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে বোনম্যারো ক্যান্সার ধরা পড়ে। সেসময় তাঁকে কেমো দেওয়ার ফলে মাথার চুল পড়ে গিয়েছিল। তবে তিনি সে যাত্রায় সেরে উঠেছিলেন। সেই লড়াইয়ে জয়ী হয়েছিলেন কিশোরী ঐন্দ্রিলা।
তারপর শুরু হয় তাঁর স্বপ্ন পূরণের লড়াই।
আদতে বহরমপুরের মেয়ে ঐন্দ্রিলা। মা নার্সিং স্টাফ। বাবা আর দিদি পেশায় ডাক্তার হলেও বড় অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন ছিল তাঁর। সেজন্য বাংলার রুপোলি পর্দায় অভিনয়ের তাগিদে তিনি চলে আসেন তিলোত্তমা কলকাতায়। খুব অল্প সময়ে তাঁকে আপন করে নেয় টলিউড। আপন করে নেয় তিলোত্তমা নগরী। মাত্র কয়েক বছরেই বাংলা ধারাবাহিকের দর্শকদের কাছে তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তাঁর অভিনীত প্রথম সিরিয়াল ছিল ‘ঝুমুর’। এই সিরিয়ালেই দেখা হয় তাঁর ভালোবাসার মানুষ সব্যসাচীর সঙ্গে। ‘ঝুমুর’-এ ঐন্দ্রিলার বিপরীতে অভিনয় করেন সব্যসাচী চৌধুরী। এছাড়া জীবন জ্যোতি, জিয়ন কাঠি সহ একাধিক জনপ্রিয় সিরিয়ালে দেখা গিয়েছে ঐন্দ্রিলাকে। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ভাগাড়, পাঁচফোড়ন-২ সহ আরও অনেক ছবিতে তাঁকে কাজ করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
কিন্তু ভাগ্য যেন বারবার বিড়ম্বনায় ফেলেছে ঐন্দ্রিলাকে। অভিনয় জগতে সফল হলেও তাঁর জীবনটা খুব মসৃণ বা সুখকর হয়নি। বাদ সেধেছে সেই মারণ ক্যান্সার। ২০১৬ সালে অস্থিমজ্জার ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এই নবাগতা অভিনেত্রী। দিল্লিতে শুরু হয় তাঁর চিকিৎসা। সেই লড়াইয়েও জিতে যান তিনি। পাঁচ বছর পর আবার ঘটে বিপর্যয়। গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে তাঁর ডান ফুসফুসে টিউমার ধরা পড়ে। দেওয়া হয় কেমো থেরাপি। সেবারের মতো বেঁচে ফিরলেও এবার আর শেষ রক্ষা হল না।
১ নভেম্বর রাতে আচমকা ব্রেন স্ট্রোক। মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ শুরু হয় ঐন্দ্রিলার। ভর্তি হলেন হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেসময় তাঁকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। কয়েকদিন পর চিকিৎসায় সাড়া দিতে শুরু করেন। কিন্তু, সেটা ছিল খুবই ক্ষণস্থায়ী। ১৬ নভেম্বর বুধবার পরপর দুবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। বারবার অসুস্থ হয়ে পড়েন অভিনেত্রী। গতকাল শনিবার দশবার হার্ট অ্যাটাক হয় তাঁর। সব আশা শেষ। সমস্ত ভক্ত, আত্মীয়, বন্ধু, শিল্পী, সর্বোপরি ভালোবাসার মানুষ সব্যসাচীকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। টলিউড অনেক ট্রাজেডি সিনেমা ও সিরিয়াল উপহার দিয়েছে। কিন্তু, টলিপাড়ার ইতিহাসে বাস্তবে এমন করুণ লড়াইয়ের নজির খুবই বিরল।
previous post
next post