সুভাষ পাল, সংবাদ কলকাতা: কথায় বলে, চোরের মায়ের বড় গলা। দেশের স্বাধীনতা লাভের সময় থেকে দুর্নীতিগ্রস্তরা তৎকালীন শাসকদলের প্রশ্রয় পেয়ে এসেছেন। গণতান্ত্রিক কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে গণতন্ত্রের অপব্যবহার করেছেন। বিভিন্ন সময়ে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে তারা রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রশাসনিক শক্তিকে দমন করেছেন। বরং তারা দুর্নীতির সমর্থনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে নির্লজ্জের মতো পাল্টা আন্দোলন করে জনগণের সামনে নিজেদের সাধু প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন।
গতকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবার সেই দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে ফের গর্জে উঠলেন। তিনি তাঁদের কার্যকলাপকে একবাক্যে বেঁধে দিলেন। তিনি বলেন, সমস্ত দুর্নীতিগ্রস্তরা একযোগে ‘ভ্রষ্টাটারী বাঁচাও অভিযান’-এ নেমেছে। বড় কোনও ভালো-মন্দ মুহূর্তে দেশের ভিতরে ও বাইরে ভারত বিরোধী শক্তিগুলি একজোট হয়েছে। মোদী বলেন, এইসব দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে এজেন্সি ব্যবস্থা নিতে গেলে এজেন্সিকে আক্রমণ করেছেন। এমনকি এদের বিরুদ্ধে মহামান্য আদালতের রায় নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এদিন দিল্লিতে বিজেপির হেডকোয়ার্টারে রেসিডেনশিয়াল কমপ্লেক্স ও অডিটোরিয়ামের উদ্বোধন করার সময় তিনি এই কথাগুলি বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা দেখতে পাচ্ছেন যে, কিছু পার্টি ভ্রষ্টাচারী বাঁচাও অভিযানের এক মঞ্চের আওতায় আসছে। আমি যেখানে যাই, মানুষ আমাকে বলেন, মোদীজি থেমে যাবেন না। … আমরা যদি এখন থেমে যাই এই দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে, তাহলে এই মানুষগুলি ভেঙে পড়বেন না? কিন্তু আমাদের রুখতে পারবে না। কংগ্রেসের বহু বড় নেতা জনসংঘের সময় থেকে বলতেন, যে জনসংঘ উপড়ে যাবে। এখন কংগ্রেস নেতারা বলছেন, মোদী তোমার কবর খোঁড়া হবে। বিজেপি সেরকম কোনও পার্টিই নয় যে টেলিভিশন, টুইটার, ইউটিউবে জন্মাবে। অনেকে আমাকে প্রশ্ন করেন, যে আমি কেন বিশ্রাম করি না, যখন দুবার প্রধানমন্ত্রী হয়েই গিয়েছি। অনেকেই এটা জানেন না যে বিজেপি কর্মীদের ভাগ্যে বিশ্রাম নেই।’
উল্লেখ্য, ক্ষমতায় ফেরার মোহে কেন্দ্রের শাসকদলের বিরুদ্ধে একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করে সংবাদ শিরোনামে আসার চেষ্টা করেন রাহুল গান্ধী। তাঁর মুখে যা আসে তাই বলে যান। কাউকে অসম্মানজনক কথা বলতে পিছপা হন না। মোদী ক্ষমতায় আসার পর দেখা গিয়েছে, বার বার তিনি প্রকাশ সভায় এমন মন্তব্য করেছেন, যেন মোদী সরকার বড়সড় দুর্নীতিতে জড়িয়ে আছেন। এবার তিনি প্রমাণ সহ সেই দুর্নীতি ফাঁস করবেন। কিন্তু, কার্যকালে দেখা গেছে, সবই অশ্বডিম্ব। ফাঁকা আওয়াজ। বাস্তবে কিছুই নেই। কার্যত মিথ্যার ফুলঝুরি।
এপ্রসঙ্গে স্মরণ করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন, রাহুল গান্ধী একবার বলেছিলেন, তিনি মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সংসদে বোমা ফাটাবেন। গোটা দেশ তোলপাড় করে দিলেন। সংবাদ মাধ্যমে মোদির বিরুদ্ধে গেল গেল রব উঠে গেল। কিন্তু কার্যকালে দেখা গেল বিষয়টি কিছুই নয়। মোদী সেটা নিয়ে সংসদে রাহুল গান্ধীকে উদ্দেশ্য করে তামাশা করতে ছাড়েননি।
রাহুল ‘মোদী’ পদবি নিয়ে এরকমই এক বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের প্রচারে গিয়ে। যেটা ছিল একটি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চরম অসম্মানজনক। সেটা নিয়ে মানহানির মামলা করেন ‘মোদী’ পদবিধারী এক ব্যক্তি। সম্প্রতি সেই মানহানির মামলায় রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে দুই বছরের সাজা ঘোষণা করে সুরাটের আদালত। সেজন্য সাংবিধানিক নিয়ম অনুসারে তাঁর সাংসদ পদ খারিজ হয়। আর এই কারণেই গর্জে ওঠে কংগ্রেস। এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কংগ্রেসের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শানালেন। যা কর্ণাটক বিধানসভা ভোট ও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মমতার ধর্ণার আগে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
previous post