সংবাদ কলকাতা, ২৬ এপ্রিল: সন্দেশখালিতে ফের বড়সড় সাফল্য। খবর পেয়ে শাহজাহানের গোপন অস্ত্র ভাণ্ডারে হানা দিল সিবিআই। এখানকার বাসিন্দা আবু তালেব মোল্লার বাড়িতে হানা দেয় সিবিআই। এছাড়াও অস্ত্রের সন্ধানে আরও এক জায়গায় অভিযান চালায় সিবিআই। আনা হয় এনএসজি কমান্ডো। আসে বম্ব ডিস্পোজাল টিম। বোমা উদ্ধারে আনা হয় রোবোটিক সিস্টেম। আনা হয়েছে সন্ত্রাস দমনে ব্যবহৃত স্নিফার ডগ। তদন্তের প্রথমেই বাড়ির মাটির তলা থেকে উদ্ধার হয় বোমা ও আগ্নেয়াস্ত্র।
বিস্ফোরকের সঙ্গে সঙ্গে বহু বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়। বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে অত্যাধুনিক এই আগ্নেয়াস্ত্র এপারে আনা হয়েছে বলে তদন্তে জানা গিয়েছে। এছাড়া উদ্ধার হয়েছে রাজ্য পুলিশের রিভলবার।
সিবিআই জানিয়েছে, এদিন তিন দিক ভেড়ি দিয়ে ঘেরা একটি পাকা বাড়ির মেঝে খুড়ে বিভিন্ন মাপের ৭টি রিভলভার পেয়েছে তারা। তার মধ্যে ৩টি রিভলভার ও বিদেশি পিস্তল উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে এমন একটি পিস্তল রয়েছে, যেটি পুলিশ ব্যবহার করে। এছাড়া রয়েছে একটি দেশি রিভলভার। বিভিন্ন মাপের প্রায় ৩৫০ কার্তুজ পাওয়া গিয়েছে সেখানে।
প্রসঙ্গত শুক্রবার সকালে সরবেড়িয়ায় ভেড়ির মাঝে একটি বাড়িতে তল্লাশি শুরু করে সিবিআই। সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। বাড়িটিতে কোনও মানুষ ছিল না। ছিল না বিদ্যুৎ সংযোগও। জানা যায়, বাড়িটি শাহজাহান ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা আবু তায়েব মোল্লার। যিনি আবার আগরহাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের এক তৃণমূলি পঞ্চায়েত সদস্যের আত্মীয়। বাড়ির মেঝে খুড়ে ১২টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেন সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি বিদেশে তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র বলে জানা গিয়েছে।
এর পর বাড়ি লাগোয়া একটি মাটির ঘরে তল্লাশি শুরু করে সিবিআই। সূত্রের খবর, সেখানে বিপুল পরিমান বিস্ফোরকের সন্ধান পান তদন্তকারীরা। বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করতে খবর দেওয়া হয় NSGকে। জঙ্গিদমনে এই বিশেষ বাহিনী গঠন করেছিল UPA সরকার। বিকেল ৪টে নাগাদ NSGর জওয়ানরা বেশ কয়েকটি গাড়িতে করে এসে পৌঁছন ঘটনাস্থলে। গাড়ি থেকে একে একে নামানো হয় বোমা নিষ্ক্রিয় করার অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি। নামানো হয় একটি রোবট।
এদিন এনএসজি অপেরেশনের সময় বালির বস্তা দিয়ে ঘেরা হয় ভেড়ি। সন্দেশখালির তালাবন্ধ বাড়ি থেকে একটি রহস্যজনক থলি উদ্ধার হয়। যার মধ্যে ছিল বিস্ফোরক ভর্তি। নিষ্ক্রিয়করণে আসে বম্ব ডিস্পোজাল টিম। ব্যবহার করা হয় রোবটিক সিস্টেম। মেঝে খুঁড়ে একটি বিস্ফোরক বোঝায় ব্যাগ উদ্ধার করে। সেই ব্যাগ নিয়ে গ্রামের ফাঁকা জায়গায় একটি নিরাপদ স্থানে নামিয়ে দিল রোবট। গ্রামে প্রহরায় রয়েছেন সসস্ত্র কমান্ডাররা।
এদিকে শেখ শাহজাহান ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতার বাড়িতে পুলিশের ব্যবহার করা রিভলভার কোথা থেকে এল তা নিয়ে উঠছে একাধিক প্রশ্ন। বন্দুকটি পুলিশেরই, নাকি বেআইনি পথে সেটিকে ভারতে আনা হয়েছে? পুলিশের বন্দুক হলে কি সেটিকে কোনও সময় ছিনতাই করা হয়েছিল? কারণ পুলিশের প্রতিটি বন্দুকে নম্বর খোদাই করা থাকে। সেই বন্দুক কোনও পুলিশ আধিকারিককে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে, তা নথিভুক্ত থাকে থানায়।
আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াও শাহজাহানের ডেরা থেকে এদিন বিস্ফোরক উদ্ধার করে সিবিআই। সেই বিস্ফোরক বিশেষ রোবটের সাহায্যে নিষ্ক্রিয় করে NSG কম্যান্ডোরা। এছাড়াও উদ্ধার হয়েছে শেখ শাহজাহানের প্যান কার্ড সহ বেশ কিছু নথি। মিলেছে শেখ শাহজাহানের ব্যবসা সংক্রান্ত বেশ কিছু কাগজ।
এই ঘটনায় নতুন করে তৃণমূলকে আক্রমণ করেছে বিরোধীরা। তৃণমূলক কংগ্রেসকে উগ্রপন্থী দল ঘোষণা করে তার স্বীকৃতি কেড়ে নেওয়ার দাবি তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
previous post