শঙ্কর মন্ডল
ডিএ মামলা সুপ্রিম কোর্টে। আবার কয়েক কোটি টাকা নষ্ট হবে জনগণের। আসলে একের পর এক মামলায় পরাজয়। চুরি, জোচ্চুরি তো এখন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। বোনাস হিসেবে ছিল তোলাবাজি। বেআইনি অস্ত্রের রমরমা। ব্যাপক হিংসার পরিবেশ, পুলিশের দলদাসত্ব, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ, বলা ভালো একেবারে দমবন্ধ হওয়ার মত অবস্থা। তথাপি মমতা ব্যানার্জির ক্ষমতা অব্যাহত। আগামী নির্বাচনে কি হবে সেটা সময়ই বলবে।
কিন্তু, প্রশ্নটা আমার অন্য জায়গায়। সেটা হল এর আগেও দীর্ঘ সময় এই রাজ্যে বাম সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ বিপুল থাকা সত্ত্বেও বছরের পর বছর বিভিন্ন নির্বাচনে বামফ্রন্টের জয় ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। শাসক দল তার ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যজুড়ে লোক জোগাড় করে। সেটাই নাকি তথাকথিত সংগঠন। আর একসময়ে সিপিএম এই সংগঠনের অহংকারই বারবার প্রকাশ করত। ঠিক একইভাবে বর্তমান তৃণমূলও ঐ একই অহংকার ব্যক্ত করে।
আর অন্যদিকে বিরোধী দল কখনোই তার পাল্টা সংগঠন তৈরি করতে পারে না। ঐ সংগঠনের মাধ্যমে সে ক্ষমতাতেও আসতে পারে না। যদিও থিওরিক্যাল তত্ত্ব অনুযায়ী, সংগঠনই নাকি ভোটে জেতায়। আর এই ধারণা নিয়েই এই রাজ্যে বিজেপি সংগঠন করতে যায়। সেই কাজকে বাস্তবায়িত করতে গিয়ে যাকে তাকে দোলে প্রবেশ করিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করে। আর উপযুক্ত সময়ে সেই তথাকথিত সংগঠন তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ে। গত ২০২১ -এর নির্বাচনের পর তাই-ই হয়েছে। একথা বোঝার ক্ষমতাও নেই এমন লোকেরাই সংগঠন, সংগঠন করে আমার বক্তব্যকে ডিফার করে।
এমনভাবে বর্তমান বিজেপি সাফল্যের স্রোতে গা ভাসিয়ে নিজেকে সেই সাফল্যের শরিক বানাতে চায়। সেটাই আগামী সফলতার সবচেয়ে বড় বাধা। আসলে এঁরা জানেই না, মমতা ব্যানার্জি এখন যতই খারাপ কাজ করুক না কেন, একটা সময় তার বিরোধী নেত্রী হিসেবে বিপুল গ্রহণযোগ্যতা ছিল। মানুষ বিশ্বাস করেছিল যে, উনিই এই প্রবল শক্তিশালী সিপিএমকে হারাতে পারেন। হ্যাঁ, তার জন্য মমতা ব্যানার্জি কিন্তু ১৮ জন সিকিউরিটি নিয়ে ঘুরে বেড়াত না। কেবল আন্দোলন, আন্দোলন আর আন্দোলনই ছিল তাঁর একমাত্র অস্ত্র। সেই আন্দোলনের মেরিট যাই থাক, সেটাকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন। তার জন্য সংগঠনের দরকার পড়ে নি। তাঁর বক্তব্যই যথেষ্ট ছিল। সেটার জন্য সংবাদ মাধ্যমই যথেষ্ট ছিল।
আর একটা উদাহরণ দিতে চাই, সেটা হল লোকপাল বিল। যা ভারতবর্ষের বেশিরভাগ মানুষই জানেন না যে, এটা খায় না মাথায় দেয়। সেইরকম একটা ইস্যু নিয়ে আন্না হাজারে যে বিপুল আন্দোলন গড়ে তুললেন, যার ওপর ভিত্তি করে একটা বিরাট মানুষ জড়ো হল। সেটাই পরবর্তীকালে সংগঠনরূপে আত্মপ্রকাশ করল। আর যার ওপর ভিত্তি করেই অরবিন্দ কেজরিওয়াল তৈরি করে ফেললেন একটি আস্ত রাজনৈতিক সংগঠন। যার নাম আম আদমি পাটি। যা দিল্লি তো বটেই উত্তর ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য পাঞ্জাবেও তাঁরা ক্ষমতায়। দেশের বহু রাজ্যে তাঁরা একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে ফেলেছেন।
এইরূপ অনেক উদাহরণ দেওয়া যাবে। সুতরাং জয়ের জন্য লাগে উপযুক্ত আন্দোলন ও উপযুক্ত নেতা। আর তার ওপর ভিত্তি করেই স্বাভাবিকভাবেই তৈরি হয়ে যায় সংগঠন। এই সহজ বিষয়টা না বুঝলে কোনওদিনই এই রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে পারবে না। হ্যাঁ, ক্ষমতায় আসার পর দেশের কল্যাণে কাজ করতে হবে। এবং সেটাই তাঁকে ইতিহাসে স্থান করে দেবে।
লেখক সংযুক্ত হিন্দু ফ্রন্টের সভাপতি। মতামত ব্যক্তিগত।
এই পাতায় লেখা পাঠানোর জন্য আমাদের ই-মেইল: sangbadkolkata@gmail.com
previous post