সিউড়ি: অনুব্রতর গড় বীরভূমে ফের হানা দিল সিবিআই। বড়সড় অর্থনেতিক দুর্নীতির অভিযোগ বীরভূমের কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে। প্রশ্ন উঠছে রাজ্য সরকারের ন্যায্য মূল্যে চাষিদের শস্য কেনা নিয়েও। সেজন্য বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের সিউড়ির কেন্দ্রীয় শাখায় হানা দিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল। অভিযোগ, সমবায় ব্যাঙ্কের একাধিক ভুয়ো অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে চালকলের লক্ষ লক্ষ টাকা লেনদেন হয়েছে। মাঝে শিখন্ডি করা হয়েছে খাদ্যদপ্তরকে। এদিন তিন সদস্যের সিবিআই দলে অন্যতম ছিলেন সুশান্ত ভট্টাচার্য। তিনি গোরু পাচার মামলার প্রধান তদন্তকারী অফিসার।
সিবিআই তদন্তে উঠে এসেছে, খাদ্য দপ্তর যে চাল কিনত, সেই চালের জন্য প্রথমে চাষিদের কাছ থেকে খুবই কম দামে ধান কেনা হতো। সেই ধান থেকে চাল করে বিভিন্ন ভুয়ো নামে খাদ্য দপ্তরে বিক্রি করা হতো। এজন্য চেক জমা নেওয়ার জন্য সমবায় ব্যাঙ্কে একাধিক ভুয়ো নামে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল বলে সূত্রের খবর। সেই সব অ্যাকাউন্টে চালের দাম বাবদ খাদ্য দপ্তরের চেক জমা করা হতো। কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের দাবি, সেইসব ভুয়ো অ্যাকাউন্টের প্রত্যেকটিতে একই ব্যক্তি স্বাক্ষর করতেন। সেজন্য এদিন ব্যাঙ্কে প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা তল্লাশি চালানো হয়। হদিশ মেলে ১৭৭টি ভুয়ো অ্যাকাউন্টের। শুধু তাই নয়, তদন্তে উঠে এসেছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। গরিব মানুষদের অন্ধকারে রেখে প্রথমে বেনামে ও সই নকল করে ১০০ দিনের কাজের টাকা ঢোকার অ্যাকাউন্টও খোলা হয়। পরে ধান বিক্রির চেক এইসব অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়।
এক্ষেত্রে ব্যাঙ্কের ভূমিকাও যথেষ্ট প্রশ্নচিহ্নের মুখে। সেজন্য তদন্তকারীরা রহস্য উন্মোচনের জন্য ব্যাঙ্কের বর্তমান ও প্রাক্তন ম্যানেজারকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করেন। রীতিমত ধমকের সুরে জানতে চাওয়া হয়, ভুয়ো অ্যাকাউন্টগুলি কার নির্দেশে এইসব খোলা হয়েছি? তাঁরা এলাকার গরিব মানুষকে না জানিয়ে কেন এমন গর্হিত কাজ করেছেন? কোনওপ্রকার তথ্য গোপন করলে তাঁদেরকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে সতর্ক করা হয় ওই দুই ম্যানেজারকে। বর্তমান ব্যাঙ্ক ম্যানেজার অভিজিৎ সামন্ত বলেন, ‘আমাদের কাছে যে সব তথ্য ওঁরা চেয়েছেন তা দিয়ে দিচ্ছি। তবে ব্যাঙ্কের দৈনন্দিন কাজকর্ম স্বাভাবিকভাবেই চলবে।’
উল্লেখ্য, শাসকদল তৃণমূল ২০১৩ সালে এই ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতির বোর্ডের দখল নেয়। পরপর দুই বার এই ব্যাংকের বোর্ডের চেয়ারম্যান হন অনুব্রত মন্ডল। এছাড়া দুই বার এই বোর্ডের চেয়ারম্যান হন অনুব্রত ঘনিষ্ঠ নূরুল ইসলাম। তিনি সিউড়ি ২ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি। এদিন নূরুল দাবি করেন, ‘এই ব্যাঙ্কের লেনদেনের সঙ্গে পরিচালন সমিতি কোনওভাবেই যুক্ত নয়। ব্যাঙ্কের কর্মচারীরা সবটাই বলতে পারবেন।’