করোনাকালে মোদিও মহিলাদের ব্যাংক একাউন্টে তিন মাস ৫০০ টাকা করে দিয়েছিলেন
সুভাষ পাল, সংবাদ কলকাতা: করোনা মহামারীর সময় দেশে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল প্রতিটি মহিলাকে ৫০০ টাকা করে ব্যাঙ্ক একাউন্টে দিয়েছিল মোদী সরকার। পর পর তিন মাস সেই টাকা পেয়ে দেশের গরিব মহিলারা মোদি সরকারের উপর যথেষ্ট খুশি হয়েছিলেন। এই কথা মাথায় রেখে গত বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্য বিজেপিও পশ্চিমবঙ্গের মহিলাদের অর্থনৈতিক সহযোগিতা করতে লক্ষ্মী ভান্ডারের মতোই একটি উপযোগী প্রকল্পের কথা ইস্তেহারে প্রকাশ করে।
কিন্তু, সুযোগ বুঝে সেই ঝোল টেনে নেয় তৃণমূল। সেসময় তৃণমূল যথেষ্ট চাপে ছিল। কারণ, অধিকাংশ জেলায় গ্রামের মানুষ মমতা সরকারের থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিলেন। একের পর এক নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ, আর অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ মানুষকে নতুন কিছু ভাবতে বাধ্য করে। গত লোকসভা নির্বাচনে তার প্রতিফলনও লক্ষ্য করা যায়। তৃণমূল ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য একের পর এক প্রকল্প ও দান খয়রাতির ঘোষণা করে। যাতে মানুষের মন ভুলানো যায়। সেরকমই একটি ঘোষিত প্রকল্পের নাম লক্ষ্মীর ভান্ডার।
মমতা জেলায় জেলায় প্রত্যন্ত এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে ব্যান্ডেজ করা পা দেখিয়ে গ্রামের মহিলাদের সহানুভূতি আদায় করেন। আর ঘোষণা করেন, ফের তৃণমূল ক্ষমতায় এলে রাজ্যে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প চালু করা হবে। সেই মতো প্রতিটি মহিলার ব্যাংক একাউন্টে মাসে মাসে ৫০০ টাকা করে দেওয়া হবে। মমতার এই হাতে গরম দাওয়াই যথেষ্ট কাজে লাগে। মহামারিক্লীষ্ট রাজ্যের সিংহভাগ খেটে খাওয়া গরিব মহিলারা এই ৫০০ টাকা পাওয়ার আশায় মমতাকে দু হাত তুলে আশীর্বাদ করেন। ইভিএম বাক্সে নিজেদের গণতান্তিক অধিকার উজাড় করে দেন। এর ফলে ফের ক্ষমতায় আসে তৃণমূল সরকার। আর এরকম একটি চটজলদি সাফল্য পেয়ে ক্ষমতায় আসার পর মমতাও লক্ষ্মীর ভান্ডারের প্রতিশ্রুতি পূরণে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি। যথারীতি মাসে মাসে মহিলাদের ব্যাংক একাউন্টে টাকা দেওয়া শুরু করেন।
ওদিকে হাত পা কামড়াতে থাকে বিজেপি। দলীয় ইস্তেহারে প্রতিশ্রুতি দিয়েও ক্ষমতায় আসতে না পেরে তাদের পক্ষে প্রতিশ্রুত পূরণ করা সম্ভব হয়নি। শনিবার সেই ঘটনার স্মৃতিচারণ শোনা গেল বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের গলায়। তিনি বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপির ইস্তেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দেন। ইস্তেহারের সেই সিদ্ধান্ত থেকে আরও একধাপ এগিয়ে তিনি বলেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে রাজ্যের প্রতিটি মহিলাকে লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো ২০০০ টাকা করে দেবে।
জানা গিয়েছে, শনিবার দুর্গাপুরের বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘড়ুইয়ের বাড়িতে দলত্যাগী দুই নেতাকে পুনরায় দলে ফিরিয়ে এনে এমনই প্রতিশ্রুতি দেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, একুশের নির্বাচনী ইস্তাহারে এই প্রকল্পের কথা উল্লেখ থাকলেও আমরা সেটা মানুষের সামনে সঠিকভাবে উপস্থাপিত করতে পারিনি। কিন্তু বিজেপি সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্যের মা বোনেরা ২০০০ টাকা করে ভাতা পাবেন। আর তার সঙ্গে রাজ্যে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি শিল্পায়নও হবে।
কিন্তু, রাজ্যের মানুষের এখন প্রশ্ন লক্ষ্মীর ভান্ডারের পেটেন্ট আসলে কার?