34 C
Kolkata
April 13, 2025
রাজ্য

রামমন্দির মোদির ভোটে জেতার লড়াই নয়, উপমহাদেশে হিন্দু সমাজের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই

কুমার বিক্রমাদিত্য: রামমন্দির মোদির ভোটে জেতার লড়াই নয়, গোটা উপমহাদেশে হিন্দু সমাজের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই। যে লড়াই মানুষ চালিয়ে এসেছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। আজ সেই লড়াই ঐতিহাসিক মর্যাদা পেল।

ইদানিং টিভি, সংবাদপত্র, সোশ্যাল মিডিয়া খুললে দেখা যাচ্ছে, রামমন্দির উদ্বোধনের সময় হতেই দেশের একশ্রেণীর মানুষের খুবই গাত্রদাহ হচ্ছে। বিশেষ করে বিজেপি বিরোধী রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন তাঁদের বাড়া ভাতে মোদী ছাই ঢেলে দিয়েছেন। কিন্তু, এইসব অকৃতজ্ঞ রাজনীতির কারবারিদের ভুললে চলবে না, এই মন্দির প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শুধু রামের জন্মভূমি বা প্রাণ প্রতিষ্ঠা নয়, এর মাধ্যমে পাঁচ শতাব্দীর স্বৈরাচারী ইতিহাসের সমাপ্তি ঘটল। হিন্দু সমাজ তাঁদের সাংস্কৃতিক অধিকারের স্বীকৃতি পেল। মুঘল আমলে একের পর এক হিন্দু মন্দির ভেঙে আগ্রাসী শক্তি ভারতবর্ষের মানুষের প্রতিভূকে ধূলিসাৎ করেছিল। তাঁদেরকে দমন ও পীড়ন করা যাঁরা নিজেদের অধিকার ভেবে নিয়েছিল, আজ তাঁদের সেই স্বৈরাচারী শক্তির সমাধির ওপর ভারতের সম্মিলিত শক্তি সত্যের বিজয় নিশান উড়িয়ে দিল। এই মন্দির প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সেই আগ্রাসী শক্তিকে ভারতের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ বার্তা দিল, ভারতবর্ষের বুকে অশুভ শক্তির বিনাশ অনিবার্য। চিরকাল এই অনাচার আপামর ভারতবাসী মেনে নেবে না।

মুঘল আমলে ভারতে একের পর এক মন্দির ভেঙে যেভাবে মসজিদ গড়ে উঠেছিল, সেই মন্দিরগুলি এবার পুনরুদ্ধারের সময় এসেছে। সম্প্রীতি মানে সত্যকে দাবিয়ে রেখে শান্তির বাণী শোনানো নয়, মুখ বুজে অন্যের অত্যাচার সহ্য করে শান্তি রক্ষা নয়। বরং সত্যকে সম্মান ও স্বীকৃতি জানিয়ে শান্তির প্রতিষ্ঠা করা প্রকৃত ন্যায়পরায়ণ মানুষের কর্তব্য। সেটা সম্ভব না হলে বিদ্রোহ অনিবার্য। যদি এই সত্যকে স্বীকার করতে আপত্তি থাকে, তাহলে তো বিদ্রোহ, প্রতিবাদ, লড়াই হবেই। সেই লড়াই রাজনৈতিক লড়াই হতে পারে, সামাজিক লড়াই হতে পারে, আইনি লড়াইও হতে পারে। এই লড়াই যুগের পর যুগ, প্রজন্মের পর প্রজন্ম, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলতে পারে। কিন্তু ন্যায় না পাওয়া পর্যন্ত এইসব সমষ্টিগত লড়াই কখনও চিরস্থায়ীভাবে দাবিয়ে রাখা যায় না। হয়তো রাজশক্তি প্রয়োগ করে সাময়িকভাবে স্তিমিত করা যায়, মন্থর করা যায়। কিন্তু চিরস্থায়ীভাবে রোধ করা যায় না। যেখানে সমষ্টিগত শক্তি কাজ করে, সেখানে সত্য ও ন্যায় না পাওয়া পর্যন্ত প্রতিবাদ ও বিদ্রোহ চলবেই। জয় একদিন ছিনিয়ে আনবেই। কখনই রোধ করা যাবে না।

তথাকথিত বাবরি মসজিদের ধ্বংস, রামমন্দিরের অস্তিত্ব সন্ধানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পরবর্তীতে খনন কার্য চালিয়ে সত্য উদ্ঘাটন করা ও আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার পর রামমন্দির প্রতিষ্ঠার জন্য অনুমতি পাওয়া এগুলি তারই পর্যায়ক্রম। সত্য কখনও চেপে রাখা যায়না। একদিন সে বিদ্রোহ করবেই। যতই নীতির দোহাই দেওয়া ও সমালোচনা করা হোক না কেন! অযোধ্যা সহ আসমুদ্র হিমাচলে মানুষের মনে দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভ একসময় বিদ্রোহ করায় বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে। কাশ্মীর থেকে কন্যা কুমারিকা মানুষের হৃদয়ে যে রামের অধিষ্ঠান, তাঁকে তাঁর মন্দিরে বা গৃহে প্রতিষ্ঠা থেকে কে আটকে রাখতে পারবে? সমগ্র ভারতের মানুষ যা চাইছে, সেখানে রাজনীতি বড় নয়, উপলক্ষ মাত্র। রাজনীতির এই রথে চড়ে ভারতের আবহমান জনতা অযোধ্যায় রামের মন্দিরকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে। এখানে বিজেপি বা মোদী নিমিত্ত মাত্র! বিজেপি বা মোদী না থাকলেও অন্য কোনও বিকল্প শক্তির পীঠে সওয়ারি হয়ে ভারতের আবহমান হিন্দু জনসমাজ এই মন্দিরের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতই। কারও আটকানোর ক্ষমতা ছিল না।

এদেশে বার বার বিদেশী শক্তি এসেছে, লুঠ-তরাজ, নিপীড়ন হত্যা, ধর্ষণ রাহাজানি কোনও কিছুই বাদ দেয়নি। বার বার এদেশের নিজস্বতাকে বিপন্ন করার চেষ্টা করেছে। ব্যাহত হয়েছে এদেশের প্রাচীন পরম্পরা। ধ্বংস করা হয়েছে এদেশের মানুষের শিক্ষা ও সংস্কৃতি। একবিংশ শতাব্দীর মানুষ যদি সেই বৈষম্য ও অনাচারের উর্ধে উঠে সত্য প্রতিষ্ঠা করে সমতা ফেরাতে না পারে, তাহলে ধরতে হবে মানুষ এখনও মধ্যে যুগে পড়ে আছে। অন্যায়কে অন্যায় ও মিথ্যাকে মিথ্যা বলে মেনে নিতে না পারে, তাহলে সে মনুষত্বের দাবিদার হতে পারেনা। সুতরাং রামমন্দির প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রামের প্রাণ প্রতিষ্ঠার চেয়ে বড় হল এক ঐতিহাসিক সত্য প্রতিষ্ঠা। আর সেই সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন ছিল একটি মাধ্যমের। সেই মাধ্যমের কাজ করল বিজেপি। যার নেতৃত্বে নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

Related posts

Leave a Comment