রাজস্থান, ৯ ফেব্রুয়ারী: কৃষি ভারতের ভিত্তি, শিল্প ভারতের ভবিষ্যৎ। সেই কৃষি ও কৃষকের উন্নতির জন্য কাজ করে চলেছে ভারত তথা বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো কৃষক সংগঠন ‘ভারতীয় কিষাণ সংঘ’। সেই কিষাণ সংঘের ‘অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি সভা’ শেষ হল আজ। ৭, ৮ ও ৯ ফেব্রুয়ারী, তিন দিনের এই সভাতে সারা ভারত থেকে কিষাণ সংঘের প্রান্তস্তরের কার্যকর্তারা উপস্থিত হন। ৪৬৩ জন কার্যকর্তার উপস্থিতিতে কিষাণ সংঘের বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের কিষাণ সংঘের বিভিন্ন আয়ামের ও বিভিন্ন জেলার অন্তর্গত গ্রাম সমিতির কাজের অগ্রগতি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। বর্তমানে ৩০ লক্ষ সদস্য সংখ্যা থাকলেও ২০২৪ সালের মার্চ মাসের মধ্যে সারা ভারতে ১ লক্ষ গ্রামের ১ কোটি মানুষকে ভারতীয় কিষাণ সংঘের কাজের সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। গ্রাম সমিতিগুলি গঠন করার উপরই মূলত জোর দেওয়া হয়েছে। কারণ সেটাই সংগঠনের মূল ভিত্তি।
এই সভাতে পশ্চিমবঙ্গ প্রান্ত থেকে ১০ জন কার্যকর্তা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম অখিল ভারতীয় কার্যকারিণী সদস্য ও পশ্চিমবঙ্গ প্রান্তের সভাপতি কল্যাণ কুমার মন্ডল, সংগঠন সম্পাদক অনিল রায়, কোষাধ্যক্ষ পঙ্কজ বন্ধু, কার্যালয় সচিব প্রসেনজিৎ নাথ, জৈবিক প্রমুখ ব্যোমকেশ রায় ও ‘ভারতীয় কিষাণ বার্তা’র সম্পাদক মিলন খামারিয়া। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অখিল ভারতীয় সম্পাদক ভানু থাপা এবং উত্তর ও উত্তর-পূর্ব ক্ষেত্রের সংগঠন সম্পাদক শ্রীনিবাস।
এই সভাতে গত ২০২২ সালের ১৯ শে ডিসেম্বর দিল্লীর ‘রামলীলা ময়দান’-এ অনুষ্ঠিত ‘কিষাণ গর্জনা র্যালি’ নিয়ে আলোচনা করা হয়। মূলত চারটি দাবি নিয়ে এই র্যালি হয়।
১) কৃষককে তাঁর উৎপাদিত ফসলের উপর লাভকারী মূল্য দিতে হবে।
২) কৃষিজাত ও কৃষি উপকরণের উপর থেকে GST সরিয়ে নিতে হবে।
৩) ‘কিষাণ সম্মান নিধি’ পরিমাণ বাড়াতে হবে।
৪) G.M. বীজের উৎপাদন ও চাষ বন্ধ করতে হবে।
এই র্যালিতে সারা ভারত থেকে প্রায় ১ লক্ষের বেশি কৃষক উপস্থিত ছিলেন। সেখান থেকে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারকে কড়া বার্তা দেওয়া হয় যে – ‘ভারতীয় কিষাণ সংঘের দাবি না মানলে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ভোটে সরকারকে যথাযথ জবাব দেওয়া হবে। কৃষক করোনাকালে নিজের লাভ না দেখে দেশের কথা চিন্তা করে সমস্ত মানুষকে খাদ্য সরবরাহ করেছে। সেই কৃষকদের দাবি না মিটলে তারা ‘কেন্দ্রীয় সরকারকে জল খাইয়ে ছাড়বে’ – বলেও জানান অখিল ভারতীয় জেলারেল সেক্রেটারি মোহিনী মোহন মিশ্র।
এই সভা থেকে স্থির করা হয়েছে যে, প্রতিটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। যাতে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি হতে চলা GST Council -এর বৈঠকে সরকার ‘কৃষিজাত ফসল ও কৃষি সরঞ্জামের উপর থেকে GST সরিয়ে নেওয়ার জন্য ‘GST Council’-কে অনুরোধ করেন।
তিন দিনের এই সভার গুরুত্ব প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে সভাপতি কল্যাণ কুমার মন্ডল জানান যে, “কৃষকরাই আমাদের অন্নদাতা। সেই অন্নদাতারাই ফসলের লাভকারী মূল্য না পেয়ে ঋণে জড়িয়ে অন্নের অভাবে মারা যাচ্ছেন। আমরা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। আমরা পশ্চিমবঙ্গে শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তুলে কৃষককে তার ফসলের লাভকারী মূল্য ও সম্মান ফিরিয়ে দেবই। কৃষকদের কাছে এটা আমাদের অঙ্গীকার।”
previous post
next post
