27 C
Kolkata
November 1, 2025
সাহিত্য

রম্যরচনা: চাঁদের জমি

অরবিন্দ সরকার
বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ

রতনপুর একখানি সমৃদ্ধ ছোট ধরনের গ্রাম। সন্ধ্যাবেলায় গ্রামের সমস্ত লোক দুর্গা মণ্ডপে সমবেত হন। ঝড় বাদলা বা চাষবাসের সময় লোকসমাগম কম হয়। তবুও সেখানে গ্রামের ও দেশ বিদেশের খবরাখবর নিয়ে আলোচনা হয়। গ্রামের মোড়ল দিবাকর ঘোষ। লেখাপড়া তিনি জানেন না। কিন্তু যেহেতু অনেক জমিজমা ও অনেক টাকাপয়সার মালিক, তাই তিনি মোড়ল। এমনকি গ্রামের যাত্রাপালার নায়ক হন তিনি।

আজ বেশ কয়েকজন সমস্ত পাড়া মিলে হাজির। বাঁশের মাচা বানিয়ে বসার স্থান। নীচে গোবর, খড়, কাঠ জ্বালিয়ে মশা তাড়ানোর ব্যবস্থা। ওই আগুনে কেউ বিড়ি ধরাচ্ছেন, আর মোড়ল তামাক সেবনে কল্কেতে আগুন পুরছেন! হুঁকোর সঙ্গে কল্কে যুক্ত। মোড়ল খাওয়া শেষ করে কল্কেটাকে বিচ্ছিন্ন করে পাশের জনদের দেন। সবার কল্কে সেবন করার পর মোড়ল আবার হুঁকোর সঙ্গে যুক্ত করে পড়াক্ পড়াক্ শব্দে সেবন করেন। মোড়ল বললেন, বলগো আজকের খবরাখবর? ফড়িং ঘোষ বললেন, চাঁদে ভারত চন্দ্রযান পাঠিয়েছে। এর আগে আমেরিকা, রাশিয়া, চীন পাঠিয়েছে। মোড়ল বললেন, তাহলে কি দাঁড়ালো, চার দেশের মালিকানা চাঁদের। ষোলো আনার মধ্যে ভারতের মাত্র চার আনা! এবার ভারতের সব রাজ্যের ভাগাভাগি করলে আর বাংলার ভাগে কতো থাকবে? ওখানেও হয়তো কবে বিশ্বযুদ্ধ লাগবে। কে আছিস রে? আমার বাড়ি থেকে রেডিওটা আন্ দেখি!

হারাধন দৌঁড়ে গিয়ে রেডিও নিয়ে এলো। মোড়ল রেডিও অন করতেই ভেসে এলো- আকাশবাণী! খবর পড়ছি, সপ্তর্ষি মণ্ডল, আজকের বিশেষ বিশেষ খবর হল, ভারতের চন্দ্রযান বিক্রম তার কাজ শুরু করে দিয়েছে। মাত্র পনের দিন সূর্যের আলো সেখানে থাকবে। এই পনের দিনেই বিক্রমের কাজ শেষ হয়ে যাবে। এখনও পর্যন্ত চাঁদে কয়েক বস্তা মানুষের বিষ্ঠা পাওয়া গেছে। চাঁদের এক কেজি মাটির দাম কয়েক কোটি টাকা। এবার ভারতের বিজ্ঞানীরা ওখানে মানুষ পাঠাবার ব্যবস্থা করবেন।

মোড়ল সাউন্ড কমিয়ে দিয়ে বললেন, মানুষের বিষ্ঠা! তাহলে তো চাঁদের চরকাকাটা বুড়ির ঘরসংসার পরিপূর্ণ। ওদের বিষ্ঠা দেখতে পেয়েছে। এক কেজি মাটির দাম কোটি কোটি টাকা?

গ্রামের যাদব বৈরাগী বললো, মোড়ল আপনি এই ফাঁকে কয়েক বিঘা জমি কিনে রাখুন। এখানে চাষ করে লাভ নেই। বরং চাঁদের মাটি বেচে লাভবান হবেন! মোড়ল দিবাকর ঘোষ বললেন, চাঁদে আবার কবে মানুষ পাঠাবে ভারত বললো? যোগাযোগ কর্ তো! ওদের সঙ্গে আমি চাঁদে যাব। ওখানে হাত মেপে মেপে পঁচিশ বিঘা জমি ঘিরে রাখব। চাঁদে গেলে তো আমি মালিক। ওখানে তো দাম লাগবে না? দাম কে নেবে শুনি? আমি ভজার মাকে নিয়ে যাবো না। ওখানে কতো ভজার মা পাওয়া যাবে। ফালতু বয়ে নিয়ে যাওয়া। অকর্মা লোককে বিশ্বকর্মা কেন যে তৈরি করেন, তিনিই জানেন। গড়াবার ক্ষমতা আছে তাঁর। কিন্তু মারবার ক্ষমতা নাই। চাঁদের বুড়ির সঙ্গে ভাব জমিয়ে বুড়ির কোনও এক নাতনিকে নিয়ে সংসার বাঁধবো। এখানে সারাদিন ভ্যানর ভ্যানর ঘ্যানর ঘ্যানর। ওখানে শেষ জীবনটা চাঁদের ঠাণ্ডা মেজাজে বাস করে কাটিয়ে দেব। চাঁদের ষোলোকলার সঙ্গে আমারও ষোলোকলা পূর্ণ হবে। ভগবান যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন। একবার চাঁদে যাই, তারপর মামা ভাগ্নের ব্যাপার! চাঁদমামা আমাকে আপন করে নেবে। ভজহরি সর্দার চেঁচিয়ে বললো, মোড়ল সে গুড়ে বালি। এখানে চাঁদে যাওয়ার খাতায় নাম তুলতে তোমার পুঁজি শেষ হয়ে যাবে। তারপর দালাল ধরতে হবে। সেখানেও টাকা পয়সা দিয়ে নাম লিখবে। যেতে যেতে তুমি হয়তো শ্মশানে!

মোড়ল দিবাকর ঘোষ- তাহলে তো আরও ভালো। স্বর্গের রাস্তায় চাঁদ স্টেশন। আমি ওখানেই নেমে পড়বো! আমি যাবোই জীবিত অথবা মৃত যেভাবেই হোক চাঁদে। এখানে নরকে মরার চেয়ে দামী চাঁদে মরা অনেক ভালো।

Related posts

Leave a Comment