21 C
Kolkata
December 26, 2024
কলকাতা

রবিনসন স্ট্রিট কান্ডের ছায়া গ্ৰামীণ হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়ায়

অভিজিৎ হাজরা, উলুবেড়িয়া: গ্ৰামীণ হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়া মহকুমা তথা উলুবেড়িয়া থানার কুলগাছিয়ার চন্ডীপুর এলাকায় কলকাতার রবিনসন স্ট্রিট কান্ডের ছায়া দেখা গেল। সেখানে মায়ের মৃতদেহ আগলে বসে আছে মৃতার ছোট ছেলে। চন্ডীপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে চন্ডীপুর-মানিকপুর এলাকার বাসিন্দারা পচা, দুর্গন্ধে অতিষ্ট হয়ে ওঠে গত চারদিন ধরে। প্রথমদিকে স্থানীয়রা বুঝতে পারছিলেন না, কোথা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দুর্গন্ধে অতিষ্ট হয়ে স্থানীয়বাসীন্দারা দুর্গন্ধের সন্ধান করতে করতে হাজির হন একটি বাড়ির সামনে। তারা সেই বাড়িতে থাকা লোকজনকে ডাকতে থাকেন। কিন্তু বাড়ির মধ্যে থেকে কারও কোনও সাড়া শব্দ পান নি। এরপর স্থানীয় বাসিন্দারা উলুবেড়িয়া থানায় খবর দেন।

উলুবেড়িয়া থানার পুলিশ বাড়ির সামনে এসে ডাকাডাকি করলেও ভিতর থেকে কারও কোনও সাড়াশব্দ পান নি। পুলিশ কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে ছাদের চিলের কোঠা পেরিয়ে এসে এক বৃদ্ধার মৃতদেহ উদ্ধার করেন। মৃত মহিলার নাম আরতি বাগ। বয়স ৭২ বছর। জানা যায়, মৃত মহিলা চন্ডীপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অবসরপ্রাপ্ত নার্সিং স্টাফ। উলুবেড়িয়া থানার পুলিশ ছাদের কার্নিশ ধরে চিলের কোঠা টপকে ঘরে প্রবেশ করে দেখেন, ঘরের মেঝেতে একটি ছেলে, এক বৃদ্ধার পচাগলা মৃতদেহ আগলে বসে আছে। স্থানীয়রা জানান, ঐ ছেলেটির নাম সৌমেন বাগ। ও বৃদ্ধার ছোট ছেলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সৌমেন বাগ ও তাঁর মা আরতি বাগ দুজনই অসুস্থ ছিলেন। সৌমেন বাগ কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন। মৃতা আরতি বাগের দুই ছেলে। বড় ছেলে সুকান্ত বাগ তার স্ত্রী-কে নিয়ে অন্যত্র থাকেন। সৌমেন মায়ের সঙ্গেই থাকত। সুকান্ত ও সৌমেন দুজনই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।

এই প্রসঙ্গে মৃতার বড় ছেলে সুকান্ত বাগ বলেন, “আমি মাঝে মধ্যেই মায়ের খোঁজ খবর নিতাম। রোজ মায়ের কাছে আসা সম্ভব হতো না। কয়েকদিন আগে আমি মায়ের খোঁজ নিতে এসেছিলাম। তখন কেউ দরজা খোলে না। আমি ও সেই সময় কাউকে কিছু বলি নি। আমি বাড়ি থেকে চলে আসি। তখন আমি বুঝতে পারি নি যে, এইরকম কিছু একটা ঘটেছে। আমার সংসার থাকার কারণে সব সময় মায়ের কাছে আসা, খোঁজ খবর নেওয়াও সম্ভব হত না। আজকে শুনলাম এরকম ঘটনা ঘটেছে “।

এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এই প্রসঙ্গে স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, “এই ধরনের ঘটনা তো এখন আমরা সংবাদপত্রে পড়ছি। দূরদর্শণে প্রায়শই দেখছি। তবে এই ধরণের ঘটনা যে, আমাদের এলাকাতেই ঘটবে, তা আমরা কল্পনাও করতে পারি নি। গত চারদিন ধরেই আমরা পচা, দুর্গন্ধ পাচ্ছিলাম। প্রথমদিকে আমরা মনে করেছিলাম, পাশের কোনও ঝোপ-জঙ্গলে হয়তো কোনও প্রাণী মরে পড়ে আছে। আর সেটা পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সেই কারণে বিষয়টা আমরা অতটা গুরত্ব দিই নি। কিন্তু চারদিন ধরে এই রকম দুর্গন্ধ ছড়ানোয় আমরা শেষমেশ উলুবেড়িয়া থানার পুলিশকে দুর্গন্ধের কথা জানাই। তারপর পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টির রহস্যভেদ করে।” এদিকে উলুবেড়িয়া থানার পুলিশ দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য উলুবেড়িয়া শরৎচন্দ্র মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।

Related posts

Leave a Comment