চণ্ডীগড়, ৩১ মে: চণ্ডীগড় লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী মণীশ তিওয়ারির সমর্থনে ভোটারদের উদ্দেশে ‘খোলা চিঠি’ লিখে নির্বাচন কমিশনের কোপে পড়লেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। সেই চিঠির মাধ্যমে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে এক সময়ে প্রধানমন্ত্রীর মতো সাংবিধানিক পদে থাকা মনমোহনের বিরুদ্ধে। দেশজুড়ে উঠল নিন্দার ঝড়।
অভিযোগ, মনমোহন সিংয়ের সেই চিঠিতে নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে। কারণ, মণীশ তিওয়ারির সমর্থনে মনমোহনের সেই খোলা চিঠি আদতে বিভিন্ন সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনের আকারে ছাপানো হয়। এদিকে সেই চিঠিতে সরকারি প্রতীক ছিল। যা থাকার কথা নয়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করতে গিয়ে কার্যত নিজের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। নব্বই ঊর্ধ্ব বর্ষীয়ান এই কংগ্রেস নেতার লেখা খোলা চিঠি লেখার মধ্যে রাজনৈতিক অভিসন্ধি দেখছে দেশের রাজনৈতিক মহল। কারণ চিঠির ছত্রে ছত্রে রাজনীতির কাঁচা খেলা করা হয়েছে। যা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর মস্তিষ্কপ্রসূত, নাকি এর মধ্যে দলীয় নেতাদের ইন্ধন রয়েছে, তা নিয়ে রাজনৈতিক জলঘোলা হতে শুরু করেছে। অনেকে ধারণা করছেন, তাঁর প্যাড ব্যবহার করে দলীয় নেতারাই এই লেখা লিখেছেন প্রাক্তন ইউপিএ প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিতে।
কারণ, মনমোহনের লেখা সেই খোলা চিঠিতে মণীশ তিওয়ারির জন্য ভোট প্রার্থনা করা হয়েছে। সেই বিজ্ঞাপনে মনমোহন সিংয়ের তরফ থেকে লেখা হয়েছিল, ‘মণীশ তিওয়ারি খুবই দক্ষ একজন সাংসদ। তিনি চণ্ডীগড়ের যাবতীয় সমস্যা খুব গভীরভাবে বোঝেন। তিনি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে আগ্রহী। তিনি লোকসভায় দক্ষতার সঙ্গেই চণ্ডীগড়ের প্রতিনিধিত্ব করবেন। তিনি সততা এবং সহানুভূতির সঙ্গে আপনাদের হয়ে কাজ করবেন।’ প্রশ্ন উঠছে, মনমোহন সিং সত্যিই যদি প্রধানমন্ত্রীর পদের মর্যাদা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন, তাহলে তিনি মোদির বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা করে ক্ষান্ত হবেন। অহেতুক দলীয় স্বার্থে কোনও নির্দিষ্ট নেতার জন্য কেন ভোট চাইতে যাবেন? তাও আবার ভারত সরকারের লোগো ব্যবহার করে!
শুধু তাই নয়, পঞ্জাবের ভোটারদের উদ্দেশেও একটি খোলা চিঠি লিখেছেন মনমোহন সিং। তাতে তিনি সরাসরি মোদীকে আক্রমণ শানিয়েছেন। মনমোহন সিং নিজের চিঠিতে বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী সবচেয়ে জঘন্য ধরণের ঘৃণামূলক ভাষণে লিপ্ত হয়েছেন। এই নির্বাচন চলাকালীন আমি রাজনৈতিক প্রচারগুলি লক্ষ্য করছি। মোদীজি এবারে যে ঘৃণামূলক বক্তৃতা দিয়েছেন, তা খুবই জঘন্য ছিল। এই ভাষণের মাধ্যমে সমাজে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করেন মোদী। মোদীজি আমার দেখা এমন প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যিনি প্রধানমন্ত্রীর অফিসের মর্যাদা খর্ব করেছেন। এই পদের মূল্য কমিয়ে দিয়েছেন। অতীতে কোনও প্রধানমন্ত্রী সমাজের কোনও একটি অংশকে বা বিরোধী দলকে টার্গেট করে এমন ঘৃণ্য, অসংসদীয় ভাষা প্রয়োগ করেননি। তিনি আমার বিরুদ্ধে কিছু মিথ্যা বিবৃতিও দিয়েছেন। আমি আমার জীবনে কখনও এক সম্প্রদায়কে অন্য সম্প্রদায় থেকে আলাদা করে দেখিনি। এতে শুধুমাত্র বিজেপির কপিরাইট আছে।
এদিকে সশস্ত্র বাহিনীর উপর অগ্নিবীর প্রকল্প ‘চাপিয়ে দেওয়ার’ জন্যও বিজেপির সমালোচনা করেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন। এই আবহে মনমোহন তাঁর চিঠিতে লেখেন, ‘অগ্নিবীর প্রকল্প জাতীয় নিরাপত্তাকে বিপন্ন করছে। কংগ্রেস তাই অগ্নিবীর প্রকল্প বিলোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।’ মনমোহনের কথায়, সশস্ত্র বাহিনীর মাধ্যমে মাতৃভূমির সেবা করার স্বপ্ন দেখা পাঞ্জাবি কৃষকের ছেলেরা এখন সেনায় যাওয়ার বিষয়ে দ্বিধাগ্রস্ত। তারা ৪ বছরের জন্য চাকরি পাওয়ার জন্যে এই নিয়োগ পাওয়ার আগে দু’বার ভাবছেন। যাঁরা সেনায় যাওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গে এই বর্তমান সরকার বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
প্রসঙ্গত মনমোহনের এই যুক্তিতে লক্ষ্য করা যাচ্ছে সম্পূর্ণ আঞ্চলিক ও দলীয় স্বার্থ। তিনি পাঞ্জাবের ছেলেদের সেনা বিভাগে সারাজীবন চাকরির নিশ্চয়তা নিয়ে চিন্তিত। যে রাজ্যে কৃষকরাই কোটিপতি। তাঁদের কাছে অগ্নিবীর প্রকল্পের চার বছরের বেতন হাতের নস্যি মাত্র। কিন্তু সারাদেশে এমন অনেক পরিবার আছে, মাত্র এই চার বছর চাকরির টাকা দিয়ে তাঁরা তাঁদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখে। তাঁদের দিন আনা, দিন খাওয়া। সুতরাং ভারতের মতো বেকার সর্বস্ব দেশে যেখানে একজন সেনা বাহিনী স্থায়ীভাবে চাকরিতে যোগ দিলে কম সংখ্যক যুবকের কর্ম সংস্হান হবে। বরং সেই অর্থে অগ্নিবীর প্রকল্পের মাধ্যমে কমপক্ষে দশটি পরিবার উপকৃত হবেন। ফলে অগ্নিবীর প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে বেকার সমস্যা যেমন কমবে, তেমনি দরিদ্র পরিবারের সংখ্যাও কমবে। মনমোহনের খোলা চিঠিতে কিন্তু সেই উদার চিন্তা ঠাঁই পেল না।