November 1, 2025
রাজ্য

মৃগ নাভি বা কুস্তুরি

মৃগ নাভি বা কুস্তুরির নাম শুনলেই মনে ভেসে ওঠে নানা আলোচনা। এর একতিল পরিমাণ পদার্থ কোনো বাড়িতে নিক্ষেপ করলে বহু বছর সেখানে তার গন্ধ থাকে। এমনকি কোনো গন্ধহীন পদার্থের ৩০০০ ভাগের সাথে এর ১ভাগ মেশালে, ৩০০০ ভাগই কুস্তুরির মোহনীয় সুভাষে ময় ময় করে ওঠে। ইতিহাস বলে, হরিণের নাভি থেকে তৈরী কুস্তুরি ব্যবহার করলে রাজারা অন্দরমহলে রানীর কাছে বার বার ছুটে আসতেন। কিভাবে তৈরী হয় কুস্তুরি? ঝাঁঝালো ওষুধি এবং তীব্র সুগন্ধি যুক্ত এক বিশেষ ধরনের জৈব পদার্থ এই প্রাণীজ সুগন্ধি কুস্তুরি সংরক্ষণ করা হয় হরিণের নাভি থেকে। নিরিবিলি বাস করা এই মৃগ বিশেষ প্রজাতির লাজুক স্বভাবের পুরুষ হরিণের নাভিতে এক ধরনের কোষ জন্মায়। কস্তুরী মৃগের উপরের মাড়ি থেকে হাতির দাঁতের মত দুটি ছোট আকারের দাঁত বের হয়। এটি দেখেই কুস্তুরি মৃগ সনাক্ত করা হয়। হরিণের দশ বছর বয়সে সুগন্ধি কোষ পরিপক্ক হলে কোষ বা গ্রন্হী থেকে মাথা খারাপ করা সুঘ্রাণ বের হয়। এই সময় হরিণটিকে হত্যা করে নাভি থেকে তুলে দেওয়া হয় পুরো গ্রহ্নিটি। তারপর রোদে শুকানো হয়। একটি পূর্ণাঙ্গ কুস্তুরি গ্রন্হের ওজন প্রায় ৬০-৬৫ গ্রাম। কুস্তুরির কোষের বাইরের দিকটা এলো মেলো লোমে ঢাকা। সেই লোম গুলো ছাড়িয়ে শুষ্ক কোষটিকে যখন জলে ভেজানো হয় তখন পরিষ্কার কুস্তুরি বেরিয়ে আসে। একই প্রজাতির সব হরিণের নাভিতে আবার একই পরিমান কুস্তুরি উৎপন্ন হয়না। হরিণের বয়স এবং পরিবেশ ভেদে কস্তুরীর পরিমানের তারতম্য হয়। কোনো কোনো হরিণের মধ্যে খুবই কম পরিমানে কুস্তুরি পাওয়া যায়। দেখা গেছে ১ কেজি কৌস্তুর পাওয়ার জন্য প্রায় ২০০০ হরিণ শিকার করতে হয়। কুস্তুরি যখন সংগ্রহ করা হয় তখন এর গন্ধ এত উগ্র থাকে যে, হরিণের নাভি কেটে দেওয়ার সময় শিকারিরা মোটা কাপড় দিয়ে নিজেদের নাক বেঁধে নেন। অনেক সময় গন্ধ সহ্য করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায় । কারো কারো চোখ থেকে জল ও মুখ থেকে লালা ঝরা শুরু হয়। এমনকি এর তীব্র সুগন্ধে মানুষ মারাও যায়। হিমালয় পর্বত মালার উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে উৎকৃষ্ঠ কুস্তুরির মৃগ পাওয়া যায়। ওই অঞ্চলের ছাগল এর চেয়ে বড় নয়। কিন্তু দেখতে অত্যন্ত সুন্দর একপ্রকার ছোট আকারের হরিণ আছে। এদের পা খুবই সরু, মাথাসুন্দর এবং চোখ চমৎকার উজ্জ্বল । এই হরিণও অন্য হরিণ থেকে আলাদা নয়। তবে অত্যন্ত শীতল পার্বত্য পরিবেশে বাস করায় এদের লোম সরু না হয়ে অত্যন্ত মোটা ও পালকের মত হয়। পৃথিবীর সবথেকে উঁচু সেই পামীর মালভূমির সর্বোচ্চ বেষ্টিত উপত্যকায় এই হরিণ পাওয়া যায়। মজার ব্যাপার হল যে, হরিণের নাভিতে এটি জন্মায় সে নিজেই বুঝতে পারেনা। তার নাকে যখন এই সুগন্ধ এসে লাগে তখন সে পাগলের মত ছুটতে থাকে। সে সুঘ্রানের উৎসের সন্ধানে। অথচ সে বুঝতে পারেনা যে সুঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়েছে নিজের দেহ থেকে। এই প্রজাতির হরিণ টি এমনই নিজের রক্ষায় পটু। কিন্তু এদের তীব্র ঘ্রানের কারণে এরা নিজেদের লুকিয়ে রাখতে পারেনা। কারণ এই ঘ্রান অনুস্বরন করে শিকারি ঠিকই এদের সন্ধান পেয়ে যায় । এই হরিণের নাভি থেকে মূলত সুগন্ধি দ্রব্য সংগ্রহ করা হয়। এর ইংরাজী নাম must deer । বিভিন্ন গ্রন্হে কামরূপী, নেপালি এবং কাশ্মীরি কুস্তুরির উল্লেখ পাওয়া গেলেও, কামরূপী সর্বোৎকৃষ্ট। পরিসংখ্যানও বিভিন্ন শাস্ত্র বাতায়ন অনুযায়ী মহামূল্যবান এই কৌস্তুর স্বাস্থ্য ,শক্তি উদ্দ্যোগ ও কোনো উদ্দীপনার ভূমিকা রাখে। চট জলদি তো খিঁচুনি ,ও পেটে তীব্র ব্যাথা ,আঘাত জনিত ক্ষতের তীব্র ব্যাথা,এবং শারীরিক অঙ্গ প্রত্যঙ্গের তীব্র ব্যাথা সারাতে অসাধারন ভূমিকা পালন করে কুস্তুরি।

Related posts

Leave a Comment