21 C
Kolkata
December 26, 2024
রাজ্য

মিজোরামে রেল ব্রীজ ভেঙে মৃত মালদহের ২৩, চৌদুয়ার একই পরিবারের ৬ জন পুরুষশূণ্য

চৌদুয়ার গ্রামেই ১৩ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে একই পরিবারের ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সম্পূর্ণ পুরুষশূণ্য হয় পড়ল চৌদুয়ার ওই পরিবার। পুখুরিয়ায় মোট মৃত ১৬

মালদা, ২৪ আগস্ট: মিজোরামে নির্মীয়মান রেল ব্রীজ ভেঙে দুর্ঘটনায় মালদহের ২৩ জন শ্রমিকের মৃত্যু। ইতিমধ্যে হাতে এসেছে মৃতদের তালিকা। মৃতদের মধ্যে পুখুরিয়া থানার চৌদুয়ার গ্রামেই রয়েছেন ১৩ জন। এছাড়া পুখুরিয়া থানার আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।অর্থাৎ পুখুরিয়া থানার মোট ১৬ জনের মৃত্যুর তালিকা হাতে পাওয়া গিয়েছে। পাশাপাশি মালদহের ইংলিশ বাজার থানার ৫ জন, গাজোলের ১ জন এবং কালিয়াচকের আরও একজন রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মালদার চৌদুয়ার গ্রামে একই পরিবারের ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের প্রত্যেকের বয়স কুড়ি থেকে ত্রিশ বছরের মধ্যে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই দুর্ঘটনার ফলে সম্পূর্ণ পুরুষ শূন্য হয়ে গিয়েছে ওই পরিবারটি। মৃতদের নাম, সাইদুর রহমান (৩০), মোজাফফর আলী (৩০)। এরা সম্পর্কে দুই কাকাতো ভাই । ওয়াসিম শেখ (২০), সেবু শেখ (২০)।  মৃত এই দুইজন প্রথম মৃত দুইজনের সম্পর্কে ভাইপো। আনসারুল শেখ (১৯) এবং মোশারফ শেখ(২০)  মৃত এই দুইজন সাইদুর রহমানের ভাগ্নে।

দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ছয়জনের মৃত্যুর খবর মালদার পুখুরিয়া থানার কোকলামারী চৌদুয়ার গ্রামে পৌঁছতেই রীতিমতো শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এদিন গ্রামের কোনও বাড়িতেই উনুন জ্বলেনি। এলাকা পুরো শোকস্তব্ধ। দুপুর থেকে এই গ্রাম জুড়ে শুধু চলছে কান্নার রোল। যদিও এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মালদার কমপক্ষে ২৫ জন শ্রমিকের মিজোরামের নির্মীয়মান রেল ব্রীজ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে। এই মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে অনুমান করছে প্রশাসনের একাংশ। এই দুর্ঘটনায় মৃতদের অধিকাংশের বাড়ি রতুয়া ২ ব্লকের পুখুরিয়া থানার কোকলামারি চৌদুয়ার গ্রামেই। এই গ্রাম থেকে অন্তত ৩০ জন শ্রমিক মিজোরামে কাজে গিয়েছেন বলে স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন। এছাড়াও মালদার ইংরেজবাজার, কালিয়াচক ব্লক থেকেও অনেক শ্রমিক কাজে গিয়েছেন মিজোরামে। যেখানে এই নির্মীয়মান রেল ব্রীজ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন মালদার শ্রমিকরা।

মৃতদের পরিবারের আত্মীয়রা জানিয়েছেন, প্রায় দেড় বছর আগে সাইদুর সহ পরিবারের ছয় জন পুরুষ মিজোরামে কাজ করতে গিয়েছিলেন। বুধবার দুপুরে তাঁরা মোবাইল মারফত জানতে পারেন, মিজোরামের রাজধানী আইজল থেকে ২১ কিলোমিটার দূরে একটি নির্মীয়মান রেল সেতু নির্মাণের সময় সেটি ভেঙে পড়ে। সেই দুর্ঘটনায় পরিবারের ছয় জনই মারা গিয়েছেন। তারপরেই কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা পরিবার।

মৃতদের এক আত্মীয় মোহাম্মদ হামিদুর রহমান বলেন, সাইদুর রহমান এবং মোজাফফর আলী সহ পরিবারের ছয়জন পুরুষ হৈহৈ করতে করতে মিজোরামে গিয়েছিলেন। মোটা টাকা কাজ করে রোজগার করে বাড়ি নিয়ে আসবেন এই আশায়। তাঁদের কুড়ি থেকে বাইশ জন সদস্যের পরিবার। তাঁদের মুখে অন্ন তুলে দিতেই ওঁরা মিজোরামে কাজে গিয়েছিলেন। কিন্তু একটা দুর্ঘটনায় সব শেষ হয়ে গেল। নির্মীয়মান যে রেল ব্রিজটি তৈরি হচ্ছে, সেটি নাকি ৫০ তলা বিল্ডিং-এর সমান উঁচু। সেখান থেকেই হুড়মুড়িয়ে গোটা ব্রিজটা ভেঙে পড়ে। মোবাইলে যখন ছবি দেখেছি, তখন কোনও আত্মীয়ের ছবি চিনতে পারছিলাম না। এতটাই ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় ছিল। পরিবারটা অসহায় পড়ল। অনেকের স্ত্রীর কোলে ছোট ছোট ছেলে মেয়ে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সরকার এবং প্রশাসন যাতে সহযোগিতা করে এই দাবি আমরা রেখেছি। 

স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, চৌদুয়ার গ্রামের যাঁরা মিজোরামে এই নির্মীয়মান রেল ব্রিজে কাজ করছিলেন, তাঁদের অধিকাংশের মৃত্যু হয়েছে। অনেকের দেহ এখনও পর্যন্ত শনাক্ত করা যায় নি। এবং খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না। পাহাড়ের নিচে দেহ ছিটকে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে এখন সরকারের সহযোগিতার আশায় রয়েছি।

জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে রাজ্য প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক মালদা সদর  এবং চাঁচল মহকুমা শাসক সহ পদস্থ কর্তারা মৃতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে এখনও পর্যন্ত কতজনের মৃত্যু হয়েছে, সেব্যাপারে স্পষ্টভাবে কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।

Related posts

Leave a Comment