মায়ের স্বপ্নাদেশে উলুবেড়িয়ায় একই দিনে বোধন ও বিসর্জনের সুর

অভিজিৎ হাজরা, হাওড়া: মহাষষ্ঠীর বোধনের মধ্য দিয়ে সূচনা হয় দুর্গাপূজার। মন্ডপে চোখে পড়ে মানুষের ভিড়।এই উৎসবের ঐতিহ্য দীর্ঘ ১১০ বছর ধরে বহন করে এসেছে হাওড়ার উলুবেড়িয়ার এক গ্ৰাম। এবার সেই পূজা ১১১ বছরে পদার্পণ করল।মৃম্ময়ী মায়ের আরাধনা ও পূজা নিয়মানুযায়ী ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত। কিন্তু এখানে তার ব্যতিক্রম, পূজা হয় মাত্র একদিনে। কারণ, একই দিনে এখানে শোনা যায়, বোধন ও বিসর্জনের সুর। উলুবেড়িয়া থানার বীরশিবপুর গ্ৰামে ষষ্ঠীর দিনেই মায়ের এই বোধন ও বিসর্জন হয়। ১১০ বছর ধরে এভাবেই গ্ৰামের রামকৃষ্ণ মন্দিরে পালিত হয়ে আসছে মা দশভূজার পূজা।
উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে জানা যায়, ষষ্ঠীর সকাল থেকে চলে বোধন, আমন্ত্রণ, অধিবাস। এরপর একের পর এক শুরু হয় পূজা। প্রথমে সপ্তমী পূজা, তারপর অষ্টমী পূজা।নিয়মরীতি মেনেই চলে কুমারী পূজা ও অপরাজিতা পূজা। এরপর শুরু হয় অষ্টমীর সন্ধিপূজা। তারপর নবমী ও দশমীর পূজা। ষষ্ঠীর দিন রাতেই হয় মায়ের বিসর্জন।একই দিনে বছরের পর বছর ধরে আনন্দ ও বিষাদের সুরে মিলে মিশে যায় এলাকার বাসিন্দারা।
গ্রামের বয়স্কদের কাছ থেকে জানা যায়, এলাকার এক ধনী ব্যক্তি ১১০ বছর আগে এলাকায় দুর্গাপূজা করেন। ২ বছর নিয়মনিষ্ঠার সঙ্গে বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে পূজার্চনা করেছিলেন। তৃতীয় বছরে মৃম্ময়ী আরাধনার তিন চার মাস আগে তিনি নিদারুণ অর্থ কষ্টের মধ্যে পড়েন। মায়ের আরাধনা কিভাবে করবেন সেই চিন্তা করতে থাকেন। কিন্তু কারোর কাছে সাহায্যের কথা বলতে পারেন নি। এমতাবস্থায় একদিন রাতে তিনি স্বপ্নে মা দুর্গার উক্তি শোনেন, ‘তুই তোর সামর্থে ১ দিনের জন্য আমার আরাধনা কর ‘। তিনি এরপর আবার এক চিন্তায় পড়লেন। একদিনের পূজা করার জন্য পুরোহিত পাবেন কোথায়? পরদিন রাতে দেবী আবার স্বপ্নে জানান, ‘তুই পুরোহিতের চিন্তা করিস না।তুই পূজার আয়োজন কর। পুরোহিত সময়মতো চলে যাবে ‘। তারপর তিনি পূজার আয়োজন করেন এবং পুরোহিত সময়মতো গিয়ে একই দিনে ষষ্ঠী থেকে দশমীর পূজা করেন। তখন থেকেই এই নিয়ম মেনে চলে আসছে মৃম্ময়ী মায়ের একই দিনে বোধন ও বিসর্জন।