সুভাষ পাল, সংবাদ কলকাতা, ২১ অক্টোবর: মৃত্তিকা দূষণ রোধ ও সুস্বাস্থ্যের প্রচার করে দেশবাসীকে সচেতন করতে দীর্ঘ ৫২০০ কিমি সাইকেল অভিযানে বেরিয়ে পড়লেন বাংলার এক যুবক। গত ২৫ সেপ্টেম্বর মহালয়ার সকালে কলকাতার রবীন্দ্র সরোবর থেকে যাত্রা শুরু করেছেন তিনি। অবশেষে আজ ২১ অক্টোবর শুক্রবার লক্ষ্যে পৌঁছলেন এই অসম সাহসী যুবক। দীর্ঘ এক মাস সাইকেল অভিযান শেষে কন্যাকুমারিকার বিবেকানন্দ শিলা স্পর্শ করলেন তিনি। পেশা সূত্রে তিনি বর্তমানে কলকাতার বাসিন্দা। কিন্তু, আদতে মেদিনীপুরের এক প্রত্যন্ত গ্রামে বেড়ে ওঠা এই যুবকের নাম পরীক্ষিত ভুঁইঞা। সংস্কৃতে স্নাতক পরীক্ষিত বর্তমানে কলকাতাতেই একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। কিন্তু, তাঁর নজরে দেশের মাটি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা।
কলকাতা থেকে কন্যাকুমারী এই দীর্ঘ যাত্রাপথে প্রিয় সাইকেলই তাঁর একমাত্র অবলম্বন। সঙ্গে সম্বল একটি ছোট তাঁবু। যাতে রাতের অন্ধকার নামলে সেটি টাঙিয়ে বিশ্রাম নেওয়া যায়। আছে আরও কিছু টুকিটাকি জিনিসপত্র। যেমন একটি যোগা ম্যাট, ফোল্ডিং চেয়ার, সোলার প্যানেল (যেটা দিয়ে লাইট জ্বালানো ও মোবাইল চার্জ দেওয়া যায়), একটি ল্যাম্প, মোবাইল, ছোট একটি গ্যাস বার্নার, মিনি সিলিন্ডার, চায়ের কাপ, একটি ছোট ফ্রাই প্যান, ভাত রান্নার জন্য একটি ছোট বয়েল প্যান, আর বেশ কিছু জামাকাপড়।
প্রতিদিন সকাল ৫ টায় ঘুম থেকে উঠে পড়েন পরীক্ষিত। এরপর ফ্রেশ হয়ে চা কিংবা হালকা টিফিন খেয়ে তাঁবু গুটিয়ে বেরিয়ে পড়েন লক্ষ্যস্থলের দিকে। মাঝপথে কোথাও সুযোগ বুঝে দক্ষিণী খাবারে সকাল ও দুপুরের আহার সেরে নেন। তারপর আবার কন্যাকুমারীর পথে রওনা হয়ে যান।
কলকাতা থেকে কন্যাকুমারী এই রাস্তাকে আপন করে নিয়েছেন। সবই যেন নিজের চেনা গ্রামের মত। যাত্রাপথে যেখানে অন্ধকার নেমে আসে, সেখানেই অপেক্ষাকৃত একটি নিরাপদ জায়গা খুঁজে নেন। সেটা কখনও সমুদ্রের কিনারে বালির উপরে হতে পারে, আবার কখনও কোনও জঙ্গলের পাশে বা রাস্তার ধারে। তারপর সেখানে তাঁবু খাটিয়ে নিজের অস্থায়ী ঘর বানিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। দিনের শেষে চলার পথে কিনে নেওয়া মাছ, কাঁকড়া বা চিংড়ির ঝোল রান্না করে নেন। তাই খেয়ে দিব্যি রাত কাটিয়ে দেন। জীবনে চলার পথে তাঁর কোনও অভিযোগ নেই।
ইতিমধ্যে তিনি দক্ষিণ ভারতে পৌঁছে গিয়েছেন। ভারত মহাসাগরের কিনারা বরাবর রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চলেছেন কন্যাকুমারীর দিকে। তাঁর যাত্রা আজ ২৭ দিনে পড়েছে। আর মাত্র একদিনের পথ বাকি। আজ শুক্রবার গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যাবেন মেদিনীপুরের এই অসম সাহসী যুবক। ভারতের দক্ষিণ প্রান্তের শেষ শিলাখন্ডে পৌঁছে উড়িয়ে দেবেন তাঁর বিজয় নিশান। মৃত্তিকা ও ফিট ইন্ডিয়ার প্রচারে তাঁর অভিযান এখানেই সমাপ্ত নয়। এরপর কয়েকদিন বিবেকানন্দ রকে বিশ্রাম নিয়ে সেই সাইকেলেই ফের রওনা হয়ে যাবেন বাংলার পথে। মুন্নার, কোয়েম্বাটুর, ব্যাঙ্গালোর হয়ে ফের কলকাতা।
চলার পথে রাস্তার দুধারে আলাপ হয়ে যাওয়া বিভিন্ন মানুষকে সচেতন করে চলেছেন। মানুষের শরীর গঠনে মৃত্তিকার ভূমিকার কথা ব্যাখ্যা করে বোঝাচ্ছেন তাঁদের। মানব শরীর মাটির সঙ্গে কিভাবে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তাঁর গুরুত্ব বোঝাচ্ছেন। সেই মাটির সঙ্গে কিভাবে প্লাস্টিক, চাষের সময় কীটনাশক ও অন্যান্য রাসায়নিক মিশে দূষিত হচ্ছে, সেবিষয়ে সজাগ করছেন মানুষকে। এখনও পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষের সঙ্গে এবিষয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে উন্নত দেশ গড়তে হলে নিজের শরীরকে সুস্থ রাখা কতটা জরুরি, তার গুরুত্বও বোঝাচ্ছেন চলার পথে পরিচিত হওয়া প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষজনকে। মৃত্তিকা সুরক্ষা ও ফিট ইন্ডিয়া গড়তে এভাবেই পরীক্ষিত ভুঁইঞা তাঁর বার্তা পৌঁছে দিতে চান মানুষের কাছে।
next post