শঙ্কর মণ্ডল: নীতি, আদর্শ আর রাজনীতি কোথায় যেন এখন পরস্পর বিরোধী শব্দে পরিণত হয়েছে। আর তাই এই পরিস্থিতিতে আজকের রাজনীতিতে কোনও যোগ্য ও দেশের সম্পদ হতে পারে এমন ব্যক্তি বর্তমানে রাজনীতিতে আসছেন না। আর যে কয়েকজন আদর্শবাদী কর্মী বর্তমান অবস্থায় জীবিত আছেন, তাঁদেরকে অবাঞ্ছিত ব্যক্তি হিসাবেই গণ্য করা হয়। নীতীশ কুমার ও তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান এই মুহূর্তে বিজেপির জন্য অত্যন্ত অনুকূল একথা মেনে নিতে কোনও অসুবিধা না হলেও নীতীশ কুমার আগামী দিনে বিশ্বাসযোগ্য রাজনৈতিক চরিত্র হিসেবে একেবারেই বিবেচিত হবেন না। তবে বর্তমানে ওর অবস্থান নিয়ে কংগ্রেস, সিপিএম ও তথাকথিত বিরোধী দলের সমালোচনা করছেন যাঁরা, তাঁরা যেন ভুলে না যান, মানুষের ভোট কিন্তু গত নির্বাচনে নীতীশ ও বিজেপির জোটকেই দিয়েছিলেন। আর সারা দেশে এই সমস্ত ছোট দলগুলো এখন নিশ্চিত পরাজয় জেনে অযথা বিজেপি বিরোধিতা করতে যাবে না। এটা কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূল যত তাড়াতাড়ি বুঝবে, ততই এদের জন্য মঙ্গল।
যাই হোক, একদিকে রামমন্দির উদ্বোধন ও তাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে উন্মাদনা এবং ছন্নছাড়া বিরোধী দলের অবস্থান আগামী নির্বাচনে বিজেপিকে ওরা কভার দিয়ে দিয়েছে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু পশ্চমবঙ্গের রাজনীতিতে এই লোকসভা নির্বাচনের সাফল্য পাওয়া ও না পাওয়াকে নিয়ে যারা ২৬-এর সফলতা পাওয়ার গণিত নির্ধারণ করবেন, তাঁরা আসলে বাংলার রাজনীতির গবেষণা করার ন্যূনতম জ্ঞান অর্জন করতে পারেন নি, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই মুহূর্তে এখনও নরেন্দ্র মোদির পক্ষে আরও প্রবল হাওয়া সেভাবে না উঠলে বিজেপির পক্ষে ব্যাপক সাফল্য পাওয়া মুশকিল। কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতির কাউন্টার রাজনীতি ও মানুষকে হিট করতে পারে এমন কোনও গণ আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে নি রাজ্য বিজেপি। কেবল কিছু কর্মসূচি নিচ্ছে, ও সেই কর্মসূচিকে একপ্রকার জোর করে ও টাকা দিয়ে নিচুতলা পর্যন্ত পালন করার চেষ্টা করতে হচ্ছে। আসলে আদর্শগত কার্যকর্তা এখন একেবারেই নেই। একথা মেনে নিতে কোনও অসুবিধা নেই। আর এটাও সত্য, তৃণমূল কংগ্রেসকে কিন্তু এখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবির ওপরেই নির্ভর করে ভোটে যেতে হবে। তা অভিষেক ব্যানার্জী যতই বুকনি মারুক না কেন। আসলে ওর এই বৈভব বাংলার মানুষ কখনওই মেনে নিতে পারে না।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর প্রচুর অভিযোগ থাকলেও এখনও বহু মানুষ মনে করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবার অসৎ, অভিষেক অসৎ, ওর দলের অনেক নেতা অসৎ, কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অসৎ নন। এর আগেও নানান অভিযোগ উঠলেও প্রফুল্ল সেন, অজয় মুখোপাধ্যায়, জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সহ সব নেতাকেও ব্যক্তিগত জীবনে বৈভব দেখানোর কোনও ইতিহাস নেই। আর বর্তমান বিজেপির জন্য যাদের পদ দিয়ে নেতা বানানো হচ্ছে, (যদিও নেতা বানানো যায় না, নেতা রাস্তায় কাজের মাধ্যমে জন্ম নেয়) এই তৈরি হওয়া নেতারাও নিজেদের প্রচুর ক্ষমতার অধিকারী মনে করে ও নিজেদের বৈভব বৃদ্ধিতে এতটাই সক্রিয়, তাতে এই রাজ্যে ক্ষমতায় আসা খুবই কঠিন। আর বাংলার রাজনীতি সাহিত্যচর্চা, কাব্যচর্চা তো বটেই, এমনকি বামপন্থী ঘরানায় পারদর্শী না হলে উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয় না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নিজেকে বামপন্থী নেত্রী হিসাবেই তুলে ধরে মানুষের কাছে মান্যতা অর্জন করেছেন। তাই রাহুল গান্ধীর ন্যায় যাত্রা, শাহাজাহান কাণ্ড বা তৃণমূল কংগ্রেসের ব্যাপক দুর্নীতি এগুলো টকশোতে রসদ জোগাড় করলেও এই রাজ্যের সরকার বদলের রসদ নয়। বাকিটা সময় বলবে।
previous post
next post