31 C
Kolkata
April 16, 2025
দেশ

মঙ্গলে ঊষা বুধে পা, বিক্রম তুই চাঁদে যা!

সুভাষ পাল, সংবাদ কলকাতা, ২৩ আগস্ট: দেশজুড়ে টানটান উত্তেজনা! তাকিয়ে আছে গোটা বিশ্ব! আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা! চন্দ্রযান ৩-র ল্যান্ডার বিক্রম চাঁদের মাটিতে পা রাখবে। মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণের! কী হয়! কী হয়! ইসরোর কর্ণধাররা অনেক হিসেব- নিকেশ, বিচার-বিবেচনা করে আজকের দিনটিকেই চাঁদে অবতরণের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।

অনেকের ধারণা, অনেক শুভ অশুভ বিচার করে জ্যোতিষ মতে আজকের দিনটিকে বাছা হয়েছে! সেজন্য এবার সবরকম সাবধানতা অবলম্বন করা হয়েছে। প্রসঙ্গত আজ সন্ধ্যা ৬ টা ৪ মিনিটে চাঁদের মাটি স্পর্শ করবে চন্দ্রযান ৩-র ল্যাণ্ডার বিক্রম। এর আগে চন্দ্রযান- অভিযান ব্যর্থ হয়। সেজন্য এবার সবরকম সাবধানতা অবলম্বন করা হয়েছে।

জানা গিয়েছে, চন্দ্রযান৩-র স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর আজ ৫টা ৪৫ মিনিটে চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করার অনুমোদন পেয়েছে বিক্রম। মাত্র ১৮ মিনিটের মধ্যে এই অবতরণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে। ফলে সন্ধ্যা ৬ টা ৪ মিনিটে চাঁদের মাটি স্পর্শ করবে সে। ল্যাণ্ডার বিক্রম চাঁদে নামার পর তার ভিতর থেকে বেরিয়ে আসবে রোভার প্রজ্ঞা। চাঁদে নেমেই সে জীবনের অনুসন্ধান সহ আরও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজ শুরু করবে। ক্ষতিয়ে দেখবে কিভাবে চাঁদে মানুষের বসবাসের উপযোগী বাসস্থান নির্মাণ করা যায়।

এখন চাঁদের মাত্র ৩০ কিমি দূরের কক্ষপথে পরিক্রমা করছে এই ল্যান্ডার বিক্রম। তার গতিবেগ এখন ১৩৪ কিমি। চাঁদের যে অংশে নামবে এই ল্যান্ডার মডিউল, সেই অংশে এতদিন সূর্যোদয়ের অপেক্ষায় ছিল এই ল্যান্ডার। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আজ বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে চন্দ্রপৃষ্ঠের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। ১৮ মিনিটের মাথায় মাটিতে অবতরণ করবে ল্যান্ডার বিক্রম।

উল্লেখ্য, ২০০১ সালে চন্দ্রযান ১ এক যুগান্তকারী তথ্য আবিষ্কার করে। জানায়, চাঁদে জল রয়েছে বরফ আকারে। সেই জলীয় বরফের পরিমাণও হিসেবে করে ফেলে চন্দ্রযান-১। জানা যায়, প্রায় ৬০ হাজার কোটি লিটার জলীয় বরফ আছে চাঁদে। স্বাভাবিকভাবে বিজ্ঞানীরা এই তথ্য থেকে জানতে পারেন, যেহেতু চাঁদে জল রয়েছে, তাই সেখানে মিলবে অক্সিজেনও। আর অক্সিজেন থাকলেই চাঁদে গড়ে তোলা যাবে মানুষের বসতি। এবার চন্দ্রযান ৩-র অভিযানে অনুসন্ধান করা হবে, চাঁদের দক্ষিণ মেরু সন্নিহিত অঞ্চলে জল আছে কিনা। বিজ্ঞানীদের আশা, সেই সংক্রান্ত তথ্য মিলবে চন্দ্রযান ৩-র এই অভিযান থেকে। তবে এই অভিযানে আজ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। কারণ, প্রথমত চন্দ্রযানের গতি কমানো। দ্বিতীয়ত দক্ষিণ মেরুতে এবড়ো খেবড়ো এলাকায় ল্যান্ডার বিক্রমকে সফট ল্যান্ডিং করানো।

ইসরো (ISRO) সূত্রে খবর, চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের সময় মহাকাশযানের গতি তুলনায় অনেকটাই মন্থর করা হবে। সেই মন্থর গতির বেগ হবে প্রতি সেকেন্ডে ১.৬৮ কিলোমিটার। এই গতিতে নামানো হবে নীচের দিকে। যা ঘণ্টার হিসেবে ৬০৪৮ কিলোমিটার। যদিও পৃথিবীতে বিমানের গতির তুলনায় এই শ্লথ গতি মোটেই কম নয়। বরং চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানের গতি পৃথিবীর বিমানের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি থাকবে। ধাপে ধাপে এই গতি ও চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে দূরত্ব কমানো হবে। চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে দূরত্ব যখন ৮০০ মিটার হবে, গতি শূণ্যে নামিয়ে আনা হবে। এরপর দূরত্ব কমে যখন ১৫০ মিটারে পৌঁছবে, নামার আগে জমি জরিপ করে নেবে ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। চন্দ্রপৃষ্ঠের ছবি তুলবে। যা দেখে অবতরণের উপযুক্ত জায়গা বেছে নেবে। খুব দ্রুততার সঙ্গে এই প্রক্রিয়া চলবে। সেজন্য ল্যান্ডারে বসানো রয়েছে শক্তিশালী সেন্সর। চন্দ্রভূমির স্পর্শ পেলে, ল্যান্ডারের চারটি পা বেরিয়ে আসবে। সেই পা যখন চাঁদের মাটি ছোঁবে, তখন ইঞ্জিন বন্ধ করে দেবেন বিজ্ঞানীরা। বলা প্রয়োজন, চাঁদের মাটিকে রেগোলিথ বলা হয়। অবতরণের পর ওই মাটিতে একটি আলোড়ন হবে। ফলে সেই আলোড়িত ভূমি থিতিয়ে আসার জন্য অপেক্ষা করা হবে। চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের পর নিজ নিজ জায়গায় থিতু হয়ে, সবার আগে ‘বিক্রম’ ও ‘প্রজ্ঞা’ পরস্পরের সেলফি তুলে পৃথিবীতে পাঠাবে। এরপর ল্যান্ডার থেকে আলাদা হয়ে যাবে রোভার ‘প্রজ্ঞা’। এবং চাঁদের মাটি স্পর্শ করবে। মাটিতে নামার পর ‘প্রজ্ঞা’ চাঁদের মাটিতে বিভিন্ন ভৌগোলিক এলাকা ঘুরে ঘুরে তাঁর নমুনা সংগ্রহ করবে।

ইসরো (ISRO) জানিয়েছে, চন্দ্রপৃষ্ঠে চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানের অবতরণ গোটা বিশ্বের মানুষ দেখতে পাবেন সরাসরি। এছাড়া এই অবতরণ সরাসরি দেখানো হবে DD National টিভি চ্যানেলে। আজ বুধবার, ভারতীয় সময় বিকেল ৫টা বেজে ২৭ মিনিটে ইসরো (ISRO)-র ওয়েবসাইটে সরাসরি এই অভিযানের সম্প্রচার শুরু হবে। এর পাশাপাশি ইসরো (ISRO)-র ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলেও সরাসরি সম্প্রচারিত হবে।

Related posts

Leave a Comment