সংবাদ কলকাতা: প্রধানমন্ত্রী হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পড়েছেন চরম বিপদে। তাঁদের বাড়ি ঘরে আক্রমণ চালানো হচ্ছে। আন্দোলনকারীদের নাম করে বিরোধী দলের মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীরা হাসিনার দলের নেতা কর্মীদের নৃশংসভাবে খুন করা হচ্ছে। বহু নেতা কর্মী এখনও আত্মগোপন করে আছেন। অনেকে প্রাণ বাঁচাতে বিরোধী দল জামাত ও বি এন পি-র কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। আগাম পরিস্থিতি বুঝতে পেরে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরবের মতো দেশে চলে গিয়েছেন। আত্মরক্ষা করতে ভারতেও চলে এসেছেন অনেকে। কিন্তু দেশে যেসব নেতা কর্মীরা পড়ে থেকে মার খাচ্ছেন, তাঁরা হাসিনার ওপর ক্ষুণ্ণ হয়েছেন। অনেকে অনুযোগ করছেন, ‘কেন আমাদের অনাথ করে দিয়ে চলে গেলেন? যদি পদত্যাগ করে দেশ ছাড়বেন, সেটা আগে থেকে কেন আমাদের জানালেন না? কেন আমাদের আত্মরক্ষার ন্যূনতম সুযোগ দিলেন না?’
এই সব নেতা, কর্মীরা এখন অভিভাবকহীন পরিবারের সদস্যদের মতো দিকভ্রান্ত অবস্থায় আছেন। এরকম অবস্থায় দলের অনুগামী নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের বারবার সান্ত্বনা বাণী শুনিয়েছেন হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ। তিনি দলের কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। এর আগে সজীব বলেন, ‘হতাশ হওয়া বা ভেঙে পড়ার কিছু নেই। সব কিছু এখনই শেষ হয়ে যায়নি। আওয়ামী লীগ টিকে থাকবে।’ এর আগে গত ৫ আগস্ট হাসিনা পদত্যাগ করে যখন ভারতে চলে আসেন, তখন ওয়াজেদ বলেন, ‘মা আর রাজনীতিতে ফিরবেন না। তাঁর মন ভেঙে গিয়েছে।’
গত চার পাঁচদিনে ঘটেছে পট পরিবর্তন। সামরিক শক্তি দেশের ক্ষমতা হাতে নেওয়ার পর গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়েছেন নোবেল জয়ী ইউনুস। সরকার পরিচালনায় বি এন পি, জামাত এবং ছাত্রনেতাদের রাখা হলেও প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের কাউকে রাখা হয়নি। এই তদারকি সরকার থাকাকালীন নিরপেক্ষভাবে একটি নির্বাচন হবে। তারপর সেই নির্বাচিত সরকার দেশ চালাবে। এরকম অবস্থায় হাসিনা পুত্র আগের অবস্থান থেকে ১৮০ ডিগ্রি সরে এসে সম্পূর্ণভাবে দলের পাশে দাঁড়ালেন। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ফের বাংলাদেশে ফিরবেন। অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের আয়োজন করলেই হাসিনা দেশে ফিরবেন বলে দাবি করেন সজীব ওয়াজেদ।
সর্ব ভারতীয় একটি সংবাদ মাধ্যমকে হাসিনা পুত্র বলেন, ‘কিছু সময়ের জন্য তিনি (হাসিনা) ভারতে রয়েছেন। যখনই অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেবে, তিনি বাংলাদেশে ফিরে যাবেন।’ শুধু তাই নয়, দলের নেতা কর্মীদের জন্য আরও একটি বড় ঘোষণা করলেন সজীব ওয়াজেদ। এদিন তিনি বলেন, প্রয়োজন পড়লে তিনি নিজেও রাজনীতিতে যোগ দিতে পারেন। তিনি বলেন,’আমি নিশ্চিত, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে এবং আমরাও জয়ী হব।’
যদিও এর আগে সজীব ওয়াজেদ ওরফে জয় জানিয়েছিলেন তাঁর রাজনীতিতে আসার কোনও পরিকল্পনা নেই। কিন্তু এবার পরিবর্তিত পরিস্থিতে তিনি সেই সিদ্ধান্ত বদল করেছেন। তিনি জানিয়েছেন,’আমাদের দল এবং কর্মীদের হিংসার হাত থেকে বাঁচাতে যা যা করার দরকার, তা আমি করব। যদি রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে, তবে পিছিয়ে আসব না। আমার রাজনীতিতে আসার কোনও উচ্চাঙ্ক্ষা ছিল না। আমি আমেরিকাতেই পাকাপাকিভাবে থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে দেশের নেতৃত্বে শূন্যস্থান রয়েছে। দলের স্বার্থে আমি সক্রিয় হয়েছি।’
previous post
next post