অরবিন্দ সরকার
বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ
জোতকমল গ্রামপঞ্চায়েত। কয়েকটি গ্রাম নিয়ে এক একটি পঞ্চায়েত। নিসাতবাগ গ্রামের ভোম্বল দাস বারেবারে মাধ্যমিক ফেল করে।সে দেখলো ফেল করি মাধ্যমিকে কিন্তু এখানে পাশ করলে সব ব্যাটা আমার কাছে আসবে। স্কুলের মাষ্টারমশাই তাঁরা আমাকে চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বসতে বলবেন। তাছাড়া যদি জিততে পারি তাহলে পাঁচ বছরে যা আয় করবো,পরের প্রজন্ম বসে বসে খাবে। আর এখন মাধ্যমিক ফেল কোনো মেয়ের জন্য তার বাবা আসবে না বিয়ে দিতে।ফুল ফুটেই থাকবে,গন্ধ মেয়েরা কেউ পাবে না। তাই কেউ ভুলেও নজর দেবে না!
ভোম্বল পঞ্চায়েতে ভোটে দাঁড়ানোর জন্য দুই বন্ধুকে নিয়ে নমিনেশন ফাইল করতে বি,ডি,ও অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন তাই তিন জায়গায় লাঠি সোটা পিস্তল নিয়ে সরকারি বাহিনী দাঁড়িয়ে আছে। ভোম্বল যেতেই প্রথম স্তরে দাঁড়িয়ে থাকা বাহিনী চড়থাপ্পড় শুরু করে দিলো। সঙ্গে দুই বন্ধু ভয়ে দৌড়াতে লাগলো। পিছনে পিছনে উন্নয়ন বাহিনী ছোটে। এখানে ভাটা নেই,সব জোয়ার! উন্নয়নের জোয়ার। ভোম্বল বললো একি তোমরা মারছো কেন,বলেই দে ছুট দ্বিতীয় স্তরে। ওখানে ভোম্বল দেখলো পিস্তল নিয়ে তাকে তাড়া করতে আসছে।ওই সময় স্কুলের প্রধান শিক্ষক ব্লকে যাবেন তাই টোটোতে চেপে আসছেন। দ্বিস্তরের উন্নয়ন পার্টির ছেলেরা বললো স্যার ব্লকে কেন? স্যার বিধান বাবু বললেন মিড্ ডে মিলের জন্য আলোচনা করতে ও হিসাব দিতে যাচ্ছি। ঠিক আছে যান, তবে ভোটে যেন কাউকে সাহায্য করতে না দেখি।
এই সুযোগে ভোম্বল স্যারের পায়ে প্রণাম করলো। বিধানবাবু বললেন – কি রে ভোম্বল এখানে? ভোম্বল এই সুযোগে টোটোয় চেপে তৃতীয় স্তরে আটক আবার। তৃতীয় স্তরে মাষ্টারমশাই ছাড় পেলেন না! তার ব্যাগ তল্লাশি করে তৃতীয় স্তরের উন্নয়ন পার্টি বললো স্যার আপনি যান আর কেউ নয়! ভোম্বল পা বাড়াতেই আড়ং ধোলাই শুরু হলো? উন্নয়ন বাহিনীর এক নেতা কলার ধরে বললো ভোটে দাঁড়াবি? ভোম্বল বললো না দাঁড়াবো না।চলে যাচ্ছি আমি। যেমন বলা ওমনি আর একজন দাঁড়াবি না মানে তোর বাপ দাঁড়াবে! দু ঘা তারা দিয়ে দিলো। মাষ্টারমশাই এই দেখে বি,ডি,ও সাহেবকে প্রতিবাদ করলেন! এটা কি হচ্ছে, গনতন্ত্রের জবাই? বি,ডি,ও বললেন বাইরে কি হচ্ছে আমি দেখবো না। আমি আমার ঘরের দায়িত্ব নেবো। এবার ভোম্বলকে সঙ্গে নিয়ে মাষ্টারমশাই অফিসে ঢুকলেন। অফিসে বসে আছে অঞ্চল প্রধান, কোমরের পিস্তল দেখা যাচ্ছে। মাষ্টারমশাই বি,ডি,ও কে বললেন এখানে প্রধান বসে আছে কেন?
বি,ডি,ও বললেন উনি শান্তি পূর্ণ ভোটের জন্য এসেছেন।
বিধান স্যার- তাহলে উনার কোমরে পিস্তল লুকানো কেন? বি,ডি, ও সাহেব প্রধানের পিস্তলটি নিয়ে বললেন আপনি এসেছেন কাজ হাসিল করতে! কিন্তু লুকোচুরি খেলতে জানেন না? পিস্তল যে দেখা যাচ্ছে। বাধ্য হয়েই আপনাকে সাময়িক এ্যারেস্ট করা হলো।
এবার মনোনয়নপত্র ভোম্বল তুলে ওখানেই হেডমাস্টার মশাইয়ের কাছে পূরণ করে জমা দিয়ে দিলো। আবার জমা দিতে আসতে পারবে না তাই। ভোম্বল জমা দিয়েই হেডমাস্টার মশাইয়ের সঙ্গে টোটোয় চেপে বাড়ি ফিরে এলো।
কিছু দিন পর বাছাই পর্বে ভোম্বলের প্রতিদ্বন্দ্বীর মনোনয়ন বাতিল হলো। ভোম্বল বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হলো! উন্নয়ন পার্টির লোক তার কাছে এলো। বললো আমাদের পার্টিতে যোগ দাও। তোমারই লাভ হবে।আখের গুছিয়ে নিতে পারবে পঁচাত্তর পঁচিশ ভাগ দিয়ে।
ভোম্বল দাস বললো আমি তো দাঁড়াতেই পারতাম না।তিনস্তরে মার খেয়ে বিধান বাবুর সহায়তায় দাঁড়িয়েছি। চুপিচুপি চোরের মতো লুকিয়ে বাড়ি এসেছি। মারের বদল পঞ্চাশ লাখ টাকা লাগবে? উন্নয়ন পার্টি বললো দেবো ।
এবার ভোম্বল বললো মারের জন্য পঞ্চাশ আর বিক্রি হবো তার দাম দুকোটি টাকা লাগবে! উন্নয়ন পার্টি বললো ওসব তুমি নিজেই আয় করতে পারবে।
ভোম্বল দাস বললো কি হবে না হবে সে অনেক দূরের কথা। আমার দাবি মেটালে আমি তোমাদের দাবি মিটিয়ে দলের ঝাণ্ডা নেবো। তখনকার মতো সবাই চলে গেলো। ভোটে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে উন্নয়নের জোরে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সব আসনে উন্নয়ন পার্টি জিতলো।
জোতকমল পঞ্চায়েতের প্রধানের আসন সংরক্ষিত তপশীলি জাতির জন্য। গোটা দেশে জয়ের আনন্দে আত্মহারা দলের কাঁটা একমাত্র ভোম্বল দাস। তাকে মেরে ফেললেও হবে না আবার রাখলেও ক্ষতি। টাকা দিয়ে তাকে কিনতে হবে আবার প্রধান হয়ে মাতব্বরি করবে!
দল বলুক না বলুক আইনে নির্দল প্রার্থী প্রধান হবে। এটা কিন্তু সরকারি দলের বিড়ম্বনা। ভোম্বলকে যে কোনো বিনিময়ে দলে আনতে হবে এটা দলের সম্মান জড়িত।
ভোম্বল এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এবার পাঁচ কোটি হাঁক ছাড়লো। অনন্যোপায় হয়ে সরকারি দল ওকে সব মিটিয়ে দিলো। উন্নয়নের মার সে ভুলে গিয়ে, নিজেই উন্নয়নের মার দিতে লাগলো বিরোধীদের।
হেড মাষ্টারমশাই বিধান বাবুও তাকে সমীহ করে চলেন। দেওয়ালে দেওয়ালে তার ছবি ও নাম দেখে ভোম্বল বললো- বাবাগো মাগো তোমরা স্বর্গ থেকে দেখে যাও আমি পাশ করেছি নির্বাচনে। স্কুলের গণ্ডি ছাড়িয়ে দেশ সেবার ময়দানে।কবে শুনবে আমার সিনেমার নায়িকার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা বিচার সব আমার হাতে। কোনোরূপ বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করা হবে না। তোমাদের মৃত্যু বার্ষিকী পালন করবো জাঁকজমক ভাবে। তোমরা ভাবতেই পারছো না! রাখে হরি তো মারে কে!