শঙ্কর মণ্ডল: আদালতের রায়, তাঁর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়া অব্যাহত রেখে কেবল আত্মপক্ষ সমর্থনের নামে অভিষেকের ডায়লগ আর তৃণমূলের অর্ধশিক্ষিত নেতাদের যুক্তিহীন বিবৃতি ও প্রশাসন ভেঙে পড়ার চিত্র আজ প্রাত্যহিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। বোমা এখন এই রাজ্যের সবচেয়ে বড় শিল্প। যা আমাদের দেশ তো বটেই, সমগ্র পৃথিবীতে আর কোনও দেশে পাওয়া যাবে না। তদন্ত করে দেখতে হবে পাকিস্তান সহ অন্য সবকটা গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাওয়া দেশে বোমা সরবরাহ এই পশ্চিমবঙ্গ থেকেই হয়ে থাকে কিনা। এই রাজ্যই একমাত্র রাজ্য, যেখানে আড়াই হাজার কিলোমিটার আন্তর্জাতিক বর্ডার আছে। যার বেশ কিছু অংশে এখনও কাঁটা তারের বেড়া দেওয়া যায় নি। মানে অসুরক্ষিত। এগরার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই, আজ আবারও মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জে বিস্ফোরণ। পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরে বিজেপির প্রতিবাদ মিছিলে পুলিশের সামনে বোমা মারার ঘটনা, এই রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার অন্যতম নিদর্শন হতে পারে।
যাই হোক, একদিকে প্রশাসনের ভেঙে পড়ার চিত্র। আর অন্যদিকে একের পর এক তৃণমূল নেতার আদালতকে আক্রমণ করা টুইট, সংসদীয় গণতন্ত্রে এই প্রথম একটি রাজনৈতিক দলের নিদর্শন সৃষ্টি করলো। সরকার আসবে, সরকার যাবে, গণতন্ত্রে এটাই নিয়ম। কেউ চিরকাল সরকারে থাকবে না। কিন্তু গণতন্ত্রে কোনও অবস্থাতেই স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা মেনে নেওয়া যায় না। মমতা ব্যানার্জী ও তার সরকার সব ক্ষেত্রেই একচেটিয়া আধিপত্য দেখাতে গিয়ে গণতন্ত্রের কোনও শিষ্টাচার, নৈতিকতা, কোনও কিছুরই তোয়াক্কা তো করেই না। এমনকি আদালতকেও মান্যতা দেয় না। কিন্তু ভুলে গেছে, এই একচেটিয়া আধিপত্য ও হেজিবনির বিরুদ্ধেই মানুষ সিপিএমকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে।
আজ অভিষেক এক ভয়ঙ্কর বক্তব্য রেখেছে। সেটা হল এগরায় মানুষ ১০০ দিনের কাজ না পেয়ে, তাঁরা নাকি বোমা তৈরির কারখানায় কাজ করতে গিয়েছিল। যা মানুষকে এক চরম অপমান। অর্থাৎ মানুষের অপরাধ প্রবণতা এতটাই বেশি যে, কাজ না পেয়ে বোমা তৈরিতেও আগ্রহ ছিল। সুতরাং এই মুহূর্তে এই অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। যদিও সমস্ত সরকারি টাকার হিসাব না দেওয়ার কারণেই কেন্দ্র টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে।যেহেতু এই সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে গরীব মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে, সেহেতু এটিও আদালতের দরবারে নিয়ে যাওয়া উচিত। আর সমস্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের মুখপত্ররা, বিশেষ করে কুণাল ঘোষ বেনজির অসাংবিধানিক, কুরুচিকর বক্তব্য পেশ করেন। যা থেকে এদের শিক্ষা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে। আর অভিষেক যেভাবে ফাঁসিতে চড়বে বলছে, সেটাও বেআইনি। কারণ, চুরির দায়ে আমাদের দেশের আইন ফাঁসিতে চড়ায় না। তাহলে এটাকে আত্মহত্যার হুমকি বলাই উচিত। যেহেতু আত্মহত্যা মহাপাপ, সেহেতু এক্ষেত্রেও তিনি অপরাধী।
সুতরাং সামগ্রিকভাবে বাংলার মানুষ চাইছে এই সরকারের পতন। তবে সেটা কোনওভাবেই আবারও ঐ দেশদ্রোহী সিপিএমকে ক্ষমতায় আনার মাধ্যমে নয়। কংগ্রেস এই রাজ্যে একটি প্রান্তিক শক্তি ও কেন্দ্রীয় কংগ্রেস তৃণমূলের বিরোধীতা চায় না। তাই ওটা আলোচ্য বিষয় নয়। কিন্তু এই পরিবর্তনের জন্য দরকার একটি প্রকৃত বিরোধী আন্দোলন। শুভেন্দু অধিকারীকে ধন্যবাদ। তার চেষ্টার কোনও খামতি নেই। কিন্তু সেটাই কি যথেষ্ট? আর একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। সেটা হল ভোগবাদ থেকেই দুর্নীতির জন্ম হয়। বাকিটা আলোচনা উচিত নয়।
মতামত ব্যক্তিগত।