31 C
Kolkata
April 16, 2025
Featured

ভারতীয় কিষাণ সংঘ কৃষক সমাবেশ করল ধর্মতলার রাণী রাসমনি রোডে

অরিত্র ঘোষ দস্তিদার, কলকাতা: গত বুধবার ‘ভারতীয় কিষাণ সংঘ’-এর পশ্চিমবঙ্গ প্রান্তের পক্ষ থেকে ‘কৃষক সমাবেশ’ করা হল কলকাতার ধর্নতলার রাণী রাস মনি রোডে। এদিন সকাল ১১ টা থেকে বিকাল ৩ টে পর্যন্ত সমাবেশ হয়। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা – সুদূর দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, নদীয়া, হাওড়া ও উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা – প্রায় সব জেলা থেকেই ৫০০-৬০০ কৃষকেরা এবং জেলা কার্যকর্তাগণ সমবেত হন।

এই অনুষ্ঠান উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় কিষাণ সংঘের অখিল ভারতীয় সহ-সভাপতি ভাইয়ারাম মৌর্য,পূর্ব ও উত্তর পূর্ব ক্ষেত্রের সংগঠন সম্পাদক শ্রীনিবাস, পশ্চিমবঙ্গ প্রান্তের সাধারণ সম্পাদক অনিমেষ পাহাড়ি, অখিল ভারতীয় কার্যকারিণী সদস্য ও পশ্চিমবঙ্গ প্রান্তের সভাপতি কল্যাণ কুমার মন্ডল, প্রচার প্রমুখ ড.কল্যাণ জানা, প্রান্তের সহ-সভাপতি আশিস সরকার,’ভারতীয় কিষাণ বার্তা’র সম্পাদক মিলন খামারিয়া, প্রান্তের সদস্যা অলি ব্যানার্জি, কোষাধ্যক্ষ পঙ্কজ বন্ধু ও আরও অনেকে।

এদিন সফলের নূন্যতম মূল্য (MSP)-এর পরিবর্তে লাভকারী মূল্য দিতে হবে, প্রতিটি চাষযোগ্য জমিতে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে ও বিদ্যুতে ভর্তুকি দিতে হবে, কৃষি যন্ত্রপাতি ও পণ্যের উপর থেকে GST সরিয়ে নিতে হবে, প্রতিটি ব্লকে কোল্ড স্টোরেজ তৈরি করতে হবে, গো-আধারিত কৃষি ফিরিয়ে আনতে হবে – ইত্যাদি ১০ দফা দাবি নিয়ে ‘কৃষক সমাবেশ’ করে ভারতীয় কিষাণ সংঘ।

এদিন শুরুতেই বক্তব্য রাখেন শ্রী মিলন খামারিয়া। তিনি বলেন – “কৃষকরা হলেন অন্নদাতা পিতা। কিন্তু তারাই আজ ফসলের উপযুক্ত দাম না পেয়ে অন্নহীন অবস্থায় আছেন। সবাইকে আমরাই খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখি। কিন্তু আজ আমাদেরই পেটে অন্ন নেই।”

শ্রী শ্রীনিবাস বলেন – “মা মাটি মানুষের বর্তমান রাজ্য সরকারের আমলে না মায়েরা ভালো আছেন, না সোনা ফলানো মাটি ভালো আছে, না এই রাজ্যের মানুষ ভালো আছেন। ফসলের দাম না পেয়ে কৃষকদের অবস্থা ভীষণ শোচনীয় হয়ে গেছে এই সরকারের আমলে।”
শ্রী মৌর্য বলেন -“দেশের অন্নদাতা কৃষকরাই আজ অর্থহীন। তারা ফসলের দাম না পেয়ে আত্মহত্যা পর্যন্ত কর‍তে বাধ্য হচ্ছেন। এ কেমন সরকার চলছে!”

অলি ব্যানার্জি বলেন -” আজ চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন না।কৃষকের সন্তান কৃষিকাজ ছেড়ে দিলে চাষাবাদ করবে কারা? তাই সবাই কৃষকদের পাশে এসে দাঁড়ান।”

ড. কল্যাণ জানা বলেন -“সরকার ঘোষিত মূল্যে কৃষকরা ফসল বিক্রি করতে পারছে না। সরকার পলিসি তৈরি করেছে কিন্তু তার যথাযথ রূপায়ণ হচ্ছে কিনা তা দেখছে না।”
শ্রী পঙ্কজ বন্ধু বলেন- “আমরা কৃষক।আমরা করোনা কালে ফসলের অতিরিক্ত দাম না নিয়েও সারা দেশের মানুষকে খাইয়ে বাঁচিয়ে রেখেছি।কালোবাজারি করিনি আমরা।তাই আমাদের কথা ভাবুন সবাই।”

শ্রী অনিমেষ পাহাড়ি বলেন -” আজ কৃষকরা বাধ্য হয়ে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক দিয়ে যে ফসল উৎপাদন করছেন তাতে বিষ মিশে আছে। তাই জৈব কৃষিকে ফিরিয়ে আনতে হবে। ভারতের মানুষকে সুস্থ করতে গেলে গো-আধারিত কৃষিই একমাত্র পথ।”

শ্রী কল্যাণ কুমার মন্ডল বলেন – “আমরা কৃষকরা বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে আজ উপস্থিত হয়েছি কলকাতার বুকে।আমাদের দাবি না মানলে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যাবো। ইতিপূর্বে গত বছর ১৯ শে ডিসেম্বর দিল্লীর রামলীলা ময়দানে সে বার্তা কেন্দ্রীয় সরকারকে আমরা দিয়েছি।”

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন দীপঙ্কর নন্দী,সুজিত কাপাশি ও আরও অনেকে। সমস্ত বক্তাদের বক্তব্যের মধ্যেই উঠে আসে – কৃষকদের অধিকারের জন্য আরও সংঘবদ্ধ হতে হবে এবং নিজেদের দাবি আদায় করতে নিতে হবে।

আজকের অনুষ্ঠানের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন প্রান্তের সংগঠন সম্পাদক অনিল চন্দ্র রায় ও কার্যালয় সচীব প্রসেনজিৎ নাথ এবং অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন আশিস সরকার।

Related posts

Leave a Comment