November 2, 2025
সাহিত্য

ভাদ্র নীরবতা

দীননাথ চক্রবর্তী

ভাদ্রের নীরবতাটুকু যেন এক অনন্ত পূর্ণতায় ভরা। আর এই স্নিগ্ধ নীরবতার ক্যানভাসে ছোট্ট একটা উড়ন্ত প্রজাপতি যেন গোলাপ পাপড়ি কিশোরী ঠোঁটের ছোট্ট একটি তিল ,কিংবা গৃহস্থের আঙিনায় কাপড় গামছা শুকোতে দেওয়া কমলা প্লাস্টিক দড়ি থেকে টপ টপ করে ঝড়ে পড়া সকালের সূর্যের ভালোবাসার শব্দ । অথবা আম নিম পেয়ারা গাছ থেকে ঝরে পড়া পাতার সঙ্গে ভোরের হিমেল সিম্ফোণী । মাঝে মধ্যে গাছের মধ্যে ঘুপটি মেরে থাকা নীরবতা ধীরে ধীরে নেমে আসে সূর্যের আলোর রশ্মি বেয়ে যেন কোন এক অপ্সরা বা রম্ভার ইন্দ্রপ্রস্থে নৃতশৈলী পরিবেশন করার প্রাক মুহূর্ত । আর গাছের নীচে নীচে মঞ্চের মায়াবী ছায়া সেই নীরবতাকে করে তুলেছে স্নিগ্ধ ও সুগভীর । এই নীরবতা আমাদের আটপৌরে নীরবতার সঙ্গে ঠিক খাপ খায়না। খাপ খায়না এই কারণে ,দেহে মনে প্রাণে কোন উত্তেজনা থাকেনা । কোন প্যাসন আসেনা ,কোন রোমান্স আসেনা । ঠিক যেন শ্মশানের পোড়া এক কাঠ। কিন্তু এই নীরবতার সঙ্গে কৃষ্টি গলা জড়াজড়ি করে থাকে ,মাতৃ গর্ভের নীরবতার মধ্যে যেমন সরব থাকে। স্মৃতির মধ্যে যেমন সোনালি সময় নীরব থাকে । তবু কথাতো কয়। কিছু কিছু কথাও তো হয়। এই সংলাপটুকুর জন্যই বোধহয় জীবন মূর্ত এবং মহৎ । আমি যেন খাজুরহ কিংবা ইলোরার কাছে দাঁড়িয়েছি। বাতাসে পূর্ণ এক শূন্য স্নিগ্ধ নীরব গুহার মাঝে । তার চার দেওয়ালের অনুপম খোদিত শৈলীর পারস্পরিক কথা কয়ে ওঠা ,যা ছিল ঘটনা তা আরো মধুময় হয়ে উঠেছে গল্প আর কাহিনীতে । সংলাপের হাতছানির মধ্যে কেমন যেন হিমনোটাইস করা মদিরতা। সবচেয়ে মুখ্য বিষয়টি …সারাক্ষণ সারা অঙ্গে আঠার মতো লেপটে থাকা যন্ত্রণা ,বেদনা ,দুঃখ ,টেনসন ,কৈবল্যতাকে ভুলিয়ে দিয়ে সমস্ত জানালা দরজাগুলো উন্মুক্ত করে দেয় ,আর যত সব শূন্যগুলো ভরে যায় প্রাণে প্রাণে । অথচ নীরবে নিভৃতে ঘটে যায় এই বিপ্লব ,এই আন্দোলন । জীবন থেকে এই নীরবতাটুকু বাদ দিলে জীবন আর জীবনে থাকেনা। তা শুধু এক কঙ্কালসার রিক্ততা।

Related posts

Leave a Comment