21 C
Kolkata
December 26, 2024
রাজ্য

বেথুন সাহেবের হাত ধরেই আসে বাংলায় নারী শিক্ষার অগ্রগতি

অজকের দিনই প্রতিষ্ঠা ‘বেথুন সোসাইটি’-র।
বেথুন সোসাইটির প্রতিষ্ঠা বর্তমান স্ত্রী শিক্ষার ভিত্তিভূমি
অরিত্র ঘোষ দস্তিদার এবং কল্যাণ চক্রবর্তী

কবি ঈশ্বর গুপ্ত ছড়া কাটলেন “আগে মেয়েগুলো ছিল ভালো/ব্রতকর্ম করতো সবে,/একা ‘বেথুন’ এসে শেষ করেছে/আরকি তাকে তেমন পাবে।” তার পঞ্চাশ বছর বাদে সিস্টার নিবেদিতা মেয়েদের স্কুল চালাতে গিয়েও একই সমস্যার মুখোমুখি হলেন। মেয়েদের লেখাপড়ার নামে তখন সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া! তথাকথিত বিদ্বজ্জন বলে যাদের জানি, তাঁদের কেউ কেউ ছেড়ে কথা বলছেন না। ওদিকে বিদ্যাসাগরের প্রাণ কেঁদে উঠছে নারীর পশ্চাৎপদতায়। বেথুন-বিদ্যাসাগর কম্বিনেশন বাংলার শিক্ষা জগতে এক অমূল্য মেলবন্ধন। অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগের ঘটনা।

এলিয়েট ড্রিঙ্ক ওয়াটার বেথুন (১৮০১-১৮৫১)। তিনি নামে এক সাহেব হলে কী হবে, এক উদার ভারতপন্থী ইউরোপীয় তিনি। যাঁর হাত ধরেই বাংলায় নারীশিক্ষার এক আশ্চর্য ভিত্তিভূমি তৈরি হয়ে গেল। দেশবাসী তখনও ভাবতে পারছেন না নারীশিক্ষা বিস্তারের কথা। সমাজের মধ্যেই প্রান্তেবাসী মানুষ হয়ে রয়েছেন লক্ষ-কোটি নারী। এমন সময় আবির্ভাব এই ভারত হিতৈষীর। বড়লাটের আইন পরিষদের সদস্য সচিব হিসেবে তাঁর আগমন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং মদনমোহন তর্কালঙ্কারের মতো ভারতীয় শিক্ষানুরাগীদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ রচিত হওয়ায় নারীশিক্ষার গতি বাড়ল। প্যারীচরণ সরকার (২৩ জানুয়ারি, ১৮২৩ – ৩০ সেপ্টেম্বর, ১৮৭৫)-এর মতো নারীশিক্ষার অগ্রদূতের কাজ তাঁকে প্রভাবিত করল, যিনি কালীকৃষ্ণ মিত্র, নবীনকৃষ্ণ মিত্র প্রমুখদের সহায়তায় বারাসতে স্থাপন করেছিলেন প্রথম বালিকা বিদ্যালয়।

খোদ কলকাতার মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষ নারীশিক্ষা কেন্দ্র তৈরি করে তিনি ভারতবাসীর পরম শ্রদ্ধার আসন অলঙ্কার করেছিলেন। ১৮৪৯ সালে স্থাপন করলেন গার্লস স্কুল, যা পরে ‘বেথুন স্কুল’ নামে নারীশিক্ষার এক অগ্রণী প্রতিষ্ঠান বলে পরিগণিত হল। কিন্তু তাঁর অকাল প্রয়াণে (১৮৫১ সালের ১২ ই আগষ্ট) কিছুটা হলেও থমকে গেলে প্রাণ-প্রচেষ্টা। তাঁকে স্মরণে রেখে কলকাতার প্রবুদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠা করলেন ’বেথুন সোসাইটি’। ১৮৫১ সালের ১১ ডিসেম্বর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক ড. এফ.জে মোয়াট গ্রহণ করলেন এক মহতী উদ্যোগ। যোগ দিলেন রামগোপাল ঘোষ, রেভারেন্ড জেমস লং, প্যারীচাঁদ মিত্র, মেজর জি. টি মার্শাল, রেভারেন্ড কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ বাঙালি পণ্ডিতেরা। ছিলেন পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রামচন্দ্র মিত্র, হরমোহন চট্টোপাধ্যায়, রাধানাথ সিকদার, কিশোরীচাঁদ মিত্র, রাজা প্রতাপচন্দ্র সিংহ, রাজেন্দ্রলাল মিত্র, নবীনকৃষ্ণ বসু প্রমুখ। তাই নারীশিক্ষার প্রসারে দিনটি স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

Related posts

Leave a Comment