সুভাষ পাল, সংবাদ কলকাতা: বিশ্ব সেরা ফুটবল জাগলার হতে চায় অশোকনগরের মেয়ে বিপাশা বৈষ্ণব। ইতিমধ্যে একাধিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে সে। সম্প্রতি ‘ওয়ার্ল্ডস গ্রেটেস্ট শো ইন দ্য সিটি অফ জয়-কলকাতা’ নামে একটি প্রোমোশনাল ফিল্ম বানিয়েছে ফিফার অফিশিয়াল চ্যানেল। সেই ফিল্মে জাগলিং দেখানোর সুযোগ পেয়েছে বিপাশা। এছাড়া ভারতের সেরা ফুটবল খেলোয়াড়দের সঙ্গে আরও একটি শ্যুট হয়েছে বিপাশার। সেটাও দেখানো হবে বলে জানিয়েছে ফিফা। তাঁর সামনে এখন স্বপ্ন জাগলিং বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। ফিফার প্রোমোতে অংশ নিতে পেরে খুবই উৎসাহিত সে। এই প্রোমো তাকে জাগলিং বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেওয়ার জন্য আরও বেশি অনুপ্রাণিত করেছে।
ইতিমধ্যেই মাত্র ১৭ বছর বয়সে জাগলিংয়ে বেশ নাম করেছে বিপাশা। তার স্কিল দেখিয়ে ইন্ডিয়া বুক ওফ রেকর্ডস ও লিমকা বুক অফ রেকর্ডসে নাম তুলেছে। এবার গিনেস বুক অফ রেকর্ডসে জায়গা করার লক্ষ্যে এগোচ্ছে সে। কপালে বল রেখে সিট আপস মারতে হবে। ডেনমার্কের একজন ফুটবল জাগলার এই পদ্ধতিটি মাত্র ৫৭ বার করে বিশ্ব রেকর্ড করেছেন। বিপাশা এই পদ্ধতিতে একবারে ১২৭ বার সিট আপস করে তার ভিডিও রেকর্ড জমা দেয়। এছাড়া আরও কয়েকটি পদ্ধতি রেকর্ড করে জমা দেয় সে। যদিও সামান্য কিছু ত্রুটির কারণে সেগুলি বাতিল করে দিয়েছে ‘গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড’ সংস্থা। তবে আশা ছাড়েনি সে। রীতিমতো কঠোর অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছে। জাগলিংকে ভালোবেসে দিনে ৮ থেকে ৯ ঘন্টা অনুশীলন করে বিপাশা। তার আশা একদিন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে সফল হবেই।
জানা গিয়েছে, মাত্র পাঁচ ছয় বছর বয়সে স্বপ্ন জাগে বড় ফুটবলার হওয়ার। পাড়ার ছেলেদের খেলতে দেখলেই বায়না ধরত ফুটবল খেলার। বাড়ির কাছাকাছি কোনও মাঠ না থাকায় সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। কিন্তু, পাড়ার ছেলেদের এবং বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল দেখে ফুটবল জাগলিং করার নেশা ধরে যায় মেয়েটির। সেই থেকে কোনও পদ্ধতি না জেনেই শুরু হয়ে যায় বিপাশার ফুটবল জাগলিং। শুরুতে তাঁর সম্বল ছিল দিনমজুর বাবার দেওয়া একটি প্লাস্টিকের বল। সেটা নিয়েই খেলতে শুরু করে। খুব অল্প বয়সেই রপ্ত করে ফেলে ফুটবল জাগলিংয়ের একাধিক জটিল কৌশল। এরপর পাশের গ্রামে এফডিএ নামে একটি ফুটবল স্কুলে ভর্তি হয় সে। স্কুলের কোচ সুব্রত রায় বিপাশার ফুটবল মেধা দেখে অবাক হয়ে যান। তখন থেকে তাকে নিয়মিত জাগলিংয়ের অনুশীলন করানো শুরু করেন। কোচ সুব্রত বাবু বলেন, ‘খুব অল্প বয়সে ওর বল নিয়ন্ত্রণ দেখে আমি অবাক হয়ে যাই। সেই থেকে ওকে জাগলিংয়ের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করি। ওকে জাগলিং বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে তৈরি করার চেষ্টা করছি।’
উল্লেখ্য, বিপাশার বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের গুমা নবপল্লিতে। বাবা পেশায় দিন মজুর। মা গৃহবধূ। বাড়িতে একটি ছোট মুদিখানার দোকান রয়েছে তাঁদের। তার মা সেটা সামলান। ফুটবলের পাশাপাশি পড়াশুনাতেও সমান মেধাবী বিপাশা। উচ্চমাধ্যমিকে ৮২ শতাংশ নম্বর পেয়েছে সে। বর্তমানে হাবড়া শ্রীচৈতন্য কলেজে ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে পড়াশুনা করছে। ফুটবলের পাশাপাশি অধ্যাপক হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে তার। বিপাশা বলেন, ‘ফুটবল খেলোয়াড় হওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল। কিন্তু, এখানে মেয়েদের ফুটবল খেলা তেমন হয় না। তাই ১০ বছর ধরে জাগলিং শিখছি। তবে আমাকে বিশ্বকাপের প্রোমোতে দেখা যাবে তা স্বপ্নেও ভাবিনি।’
previous post