বামুন বাড়ির মেয়ের হচ্ছে পৈতে? এ কেমন রীতি! বামুন চিনি পৈতে প্রমাণ, বামনি চিনি কী প্রকারে…’। ফকির লালনের এই প্রশ্নের মধ্যেই রয়ে গিয়েছে সেই চিরন্তন কথা, পৈতে তো হয় বামুনের। মানে ছেলেদের। মেয়েদের আবার উপবীত ধারণের রেওয়াজ আছে নাকি? কিন্তু ছিল! বৈদিক যুগে মেয়েরাও ‘দ্বিজা’ হতেন। সেই হারিয়ে যাওয়া দিনের কথা ২০২৪ সালে মনে করাল পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী কৈরভী।বীরভূমের সিউড়ির বাসিন্দা কৈরভী বন্দোপাধ্যায়। না, সে এখনও ধর্ম, নিয়ম, রীতি, বৈদিক যুগ- এ সব অত কিছুই বোঝে না। তবে কৈরভীর চিকিৎসক বাবা,মা প্রচলিত রীতির পরিপন্থী হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আর তার জেরেই বুধবার বৈদিক মতে দ্বিতীয় জন্ম শুরু করল কৈরভী। এদিন হলুদ শাড়ি, রংবেরঙের গয়না পরে চারিদিকের সাজসাজ উৎসবের মানে বোঝার চেষ্টা করছিল দশ বছরের মেয়েটি। তাকে ঘিরেই সব আয়োজন। নিজে আগে পৈতে বা উপনয়ন দেখেছে। সে সব দাদাদের। কিন্তু এ বার তারই হচ্ছে পৈতে। ছোট্ট মেয়েটি বলল, ‘‘মা বলেছে, আজ আমার দ্বিতীয় জন্ম হবে।’’ অবশ্য মেয়ের পৈতে দিতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি মা কৌশানী চট্টোপাধ্যায়কে। ব্রাহ্মণ পরিবারে ছেলেদের পৈতে তো হয়ই। কিন্তু মেয়ের পৈতে! অনেক বিস্ময়ের জবাব দিতে, মেয়ের অধিকার বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তার মা আর বাবা পারলেনও।দীর্ঘদিন ধরে কোথায় পালিত হবে এই অনুষ্ঠান তা খোঁজ করার পরে বুধবার পূরণ হল স্বপ্ন। কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকেন ওই দম্পতি। তাদের সিউড়ির রামকৃষ্ণপল্লীর বাস ভবনে মেয়ের উপনয়নের আয়োজন করেছেন তারা। কার্ড ছাপিয়ে সবাইকে নেমন্তন্ন করা হয়। দম্পতি অবশ্যই জানিয়েছেন হঠাৎ ইচ্ছে থেকে নয় তথ্য প্রমাণ এর ওপর ভিত্তি করেই তাদের কন্যার ‘ প্রাপ্তির অনুষ্ঠান করেন। মেয়ের হৃত অধিকার ফিরে পাওয়া উচিত এই ধারণাকে সামনে রেখেই তাদের এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন। দম্পতির কথায় সন্তান পুত্র হোক অথবা কন্যা তাদের সমান অধিকার পাওয়া উচিত তাই মেয়ের পৈতে দিচ্ছি । এছাড়াও বসন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ” ২০১৪ সালে কৈরভীর যখন অন্নপ্রাশন হয়েছিল তখন পুরোহিত যজ্ঞ করতে রাজি হচ্ছিলেন না । তিনি দাবী করেছিলেন, যজ্ঞ তো শুধু পুত্রদের অন্নপ্রাশনের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে । মেয়েদের বিয়ের সময়েই নাকি শুধু যজ্ঞ করা যায় । তখন এর প্রতিবাদ করেছিলেন বাবা বাঁশরীমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়।বাবা বলেছিলেন ধর্মে এমন কোনো বিধিনিষেধ থাকার কথা নয় । পড়ে পঞ্জিকা ঘেঁটে দেখা যায় সত্যিই মেয়ের অন্নপ্রাশনে যজ্ঞতে কোনো বাধা নেই। তখনই মাথায় আসে পুত্রসন্তানের পৈতে হলে আমার মেয়েরও পৈতে দেওয়া যাবে । তখন থেকেই বিভিন্ন বই ঘেঁটে, ইস্কন ও বারাণসীর পাণিনি কন্যা বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতার আর্য সমাজ মন্দির, রবিশঙ্করের বৈদিক ধর্মসংস্থান-সব জায়গা থেকে খোঁজ নিয়ে তারা নিশ্চিত হন যে , কন্যার পৈতেও দেওয়া সম্ভব।
previous post