April 12, 2025
রাজ্য

বাংলার সম্প্রীতির সংস্কৃতি বেঁচে থাক, হাড়োয়ায় বললেন অভিনেত্রী চুমকি চৌধুরী

নিজস্ব সংবাদদাতা, বারাসত: বিদ্যাধরী নদীর পাড়ে সম্প্রীতির অনন্য নজির হাড়োয়া। শতাব্দী প্রাচীন দুর্গা মণ্ডপ ও পীর গোরাচাঁদের মাজার শরীফ। উভয় সম্প্রদায়ের হাতে পুঁজিত হন দেবী দুর্গাl

উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমার হাড়োয়া ব্লকের হাড়োয়া বাজার কমিটির উদ্যোগে এবার এই দুর্গাপুজো ৭৯ বছরে পা রাখল। এখানে রয়েছে শতাব্দী প্রাচীন দুর্গা মন্দির। আর ঠিক তার পাশেই রয়েছে পীর গোরাচাঁদের মাজার শরীফ। তাই একে অপরের বিশ্বাসের উপর আস্থা রেখে প্রাচীন সংস্কৃতি ধরে রেখেছেন স্থানীয়রা। মাজার শরীফ-এর অনুষ্ঠানে যেমন হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ কাঁধে কাধ রেখে ঔরস উৎসব পালন করেন। ঠিক তেমনি দুর্গা পূজার সময় মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব-এর আনন্দে মাতেন। এমনকি উৎসবের মূল কমিটিতে মুসলিম ভাইরা রয়েছেন দুর্গাপুজোর শুদ্ধ আচার উপাচার নিষ্ঠার মধ্য দিয়ে যাতে পুজিত হন দেবী দুর্গা। তার সব রকম ব্যবস্থা করেন।

মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ প্রতি বছরের মতো এবছরও হাড়োয়া বাজার কমিটির উদ্যোগে দুর্গাপূজায় সেই ছবি দেখা গেল। বিদ্যাধরী নদীর পাড়ে দুর্গাপুজোর উৎসবের মধ্য দিয়ে দুর্গা পুজোর কমিটির সদস্য শাহনাওয়াজ মোল্লা বলেন, হাড়োয়ার সম্প্রীতির সংস্কৃতি মেলবন্ধনের মাটি একে অপরের মধ্যে সংস্কৃতি, কৃষ্টি জড়িয়ে রয়েছে। হিন্দু ভাইরা যেমন ঈদের সময় মাজার শরীফের অনুষ্ঠানে আমাদের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে আনন্দ উৎসবে মাতেন, আমরা ঠিক দুর্গা পূজার সময় তাঁদের এই পাঁচ দিন পাশে থেকে দেবী দুর্গার আরাধনায় মিলিত হই। এখানে কোনও ভেদাভেদ, বিভাজন নেই। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাই মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। দুর্গা পুজো কমিটির সদস্য রাজকুমার দে বলেন, এ মাটি উভয় সম্প্রদায়ের মাটি। বাবা পীর গোরাচাঁদের মেলার সময় আমরা উৎসবে মাতি। সেখানে সমস্ত কাজের অংশীদার হই। এখানে কোনও জাতি ভেদাভেদ নেই।

একে অপরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ, আলিঙ্গন ও মিষ্টিমুখের মধ্য দিয়ে আমরা প্রতিটি উৎসবে সবাই এক জায়গায় হই। অভিনেত্রী চুমকি চৌধুরী বলেন, সম্প্রীতির সংস্কৃতি বেঁচে থাক। এটাই বলব হাড়োয়ার মতো জায়গায় এখনও দুই সম্প্রদায়ের মানুষ একে অপরের উৎসবে মিলিত হয়ে যে সম্প্রীতি ও সংস্কৃতির পুজোয় মিলিত হন, সুন্দরবন তথা বাংলার মাটি আরও একবার প্রমাণ দিল। পুজোর কটা দিন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক মঞ্চ, নাচ-গান, যাত্রা এমনকি বিচিত্রা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই দুর্গা পূজার পাঁচ দিন মিলিত হয়। হাড়োয়ার মানুষ এই সম্প্রীতির দুর্গা পুজো দেখতে রাজ্য ছাড়িয়ে ভিন্ন রাজ্যের থেকে বহু দর্শনার্থী বিদ্যাধরী নদীর পারে ভিড় জমান। উপস্থিত ছিলেন হাড়োয়া সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র তালুকদার, সম্পাদক চিত্তরঞ্জন মুখার্জি, সহ সভাপতি দীপক সেন, সদস্য প্রবীরচন্দ্র পাল এবং রাজকুমার দে। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সমাজসেবীরা। বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্র জগতের কিংবদন্তি অভিনেত্রী চুমকি চৌধুরী এবং শিকরাকুলিন গ্রামের মহারাজ।

Related posts

Leave a Comment