23 C
Kolkata
December 23, 2024
জেলা

বন্ধ বেআইনি বালি লুট, ‘হিমঘরে’ মঙ্গলকোটের রাজনৈতিক অস্থিরতা

ফাইল চিত্র

পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট থানা এলাকায় বেশিরভাগ রাজনৈতিক খুনের অন্তরালে থাকে অজয় নদের বেআইনি বালি লুটের কারবার। আজাদ মুন্সি থেকে অসীম দাস একের পর এক খুনে উঠে এসেছে বালি লুটেরাদের গভীর ষড়যন্ত্রের গল্প। সর্বশেষ লাখুড়িয়া অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি অসীম দাস খুনের মামলায় রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি তদন্ত চালাচ্ছে। তদন্তে ঘুরেফিরে সেই বালিলুটের ইতিহাস সম্মুখে এসেছে।

বর্তমানে মোটরবাইক বাহিনীর সদস্যরা ভিনরাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে পাড়ি দিয়েছে। মঙ্গলকোটের নুতনহাট বাইপাস এলাকায় বেশ কয়েকটি হোটেল বন্ধ হয়ে গেছে বেআইনি বালি লুটে যানবাহন চালকদের যাতায়াত কমে যাওয়ায়। যে মঙ্গলকোটে একসময় পুলিশ মহলে ‘শাস্তিমূলক’ বদলি হিসাবে বিবেচিত হত। সেই মঙ্গলকোট সময়ের বিবর্তনে ‘শাঁসালো’ থানা হিসাবে গণ্য হয়। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে টানা সাত-আট মাস অজয় নদের বালি লুট নিয়ে প্রতিটি সড়কপথে কড়া নজরদারি করতে দেখা যায় মঙ্গলকোট থানার পুলিশকে। ধরপাকড় অভিযানে শাসক দলের স্থানীয় হেভিওয়েট এক পদাধিকারীর নিকটাত্মীয়কেও রেহাই দেয়নি পুলিশ। যেখানে মঙ্গলকোটের বিভিন্ন প্রান্তে ২০ থেকে ২৫টি বেআইনি বালিঘাট চলতো দিনরাত জুড়ে। সেই জায়গায় চলতি মাসের ১৮ তারিখের পূর্বে সমস্ত বালিঘাট বন্ধ ছিল সংশ্লিষ্ট থানার আইসি মধুসূদন ঘোষের নির্ভীকতায়।

এমতাবস্থায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত বৃহস্পতিবার নবান্নে কয়লা-বালি লুট নিয়ে সরব হন। সেই সঙ্গে রাজ্য পুলিশের একাংশের অসহযোগিতা ও দুর্নীতি নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন। মুখ্যমন্ত্রীর এহেন অবস্থান রাজ্য পুলিশের পদস্থ কর্তাদের মধ্যে তৎপরতা দেখা যায়। ইতিমধ্যেই পশ্চিম বর্ধমান জেলার বারাবনির থানার এক ভারপ্রাপ্ত আধিকারিককে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটে বিগত সাত-আট মাস ধরে স্থানীয় থানার পুলিশ যেভাবে অজয় নদের বালি-লুট রুখতে কড়া দাওয়াই দিয়েছে। তাতে বালি-লুটেরাদের দু-চোখের ‘বিষ’ হয়ে উঠেছেন মঙ্গলকোট থানার নবাগত আইসি মধুসূদন ঘোষ।

এজন্য শাসক দলের একাংশ পুলিশকে একপ্রকার অসহযোগিতাও করে বলে স্থানীয় সুত্রে প্রকাশ। বর্তমানে সরকারের অনুমতি নিয়ে মাত্র ৩টি বালিঘাট অনুমতি পেয়েছে বলে জানা গেছে। লোকসভা নির্বাচন ফলাফল প্রকাশ পরবর্তী মঙ্গলকোটে যেভাবে শাসক দলের অভ্যন্তরে বিবাদ প্রকাশ্যে এসেছিল, তাতে বিবাদ ক্রমশ হানাহানিতে চলে যেত। দু-পক্ষের সশস্ত্র লড়াইয়ের চালিকাশক্তি হিসাবে অজয় নদের বালি লুটের অর্থ যেভাবে থানার কড়া পদক্ষেপে বন্ধ হয়। তাতে মঙ্গলকোট থানার পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সাধারণ মানুষ খুবই খুশি।

গত ২০১৫ সালে খন্ডঘোষে তিনজন তৃণমূল কর্মী খুন পরবর্তীতে বর্ধমানে শততম প্রশাসনিক বৈঠক পরবর্তীতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিআইডিকে পূর্ব বর্ধমান জেলায় দামোদর-অজয় নদের বালিলুট নিয়ে অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডিকে সেসময় পূর্ব বর্ধমান জেলায় সক্রিয়ভাবে দেখা যায়। এরপর বিষয়টি একপর্যায়ে ধামাচাপা পড়ে যায়।

গত এপ্রিল মাস থেকে চলতি নভেম্বর মাস পর্যন্ত দশের কাছাকাছি মামলা রুজু হয়েছে বালি লুট নিয়ে। ১৩টির বেশি গাড়ি আটক করে ভূমি দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। যেভাবে গত লোকসভা নির্বাচন পরবর্তীতে মঙ্গলকোটের নুতনহাট এলাকায় ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের অফিস দখল অভিযান ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনার পারদ চড়েছিল, তাতে হানাহানি একপ্রকার নিশ্চিত ছিল। এখনো অবধি ওই ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের অফিসে পুলিশ পিকেট বসতে দেখা যায়। শাসক দলের বিবাদমান দুই গোষ্ঠীর শতাধিক ব্যক্তি যেভাবে মোটরবাইক নিয়ে একে অপরকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছিল। তাতে দুঁদে পুলিশ অফিসার মধুসূদন ঘোষ সর্বপ্রথম অজয় নদের বেআইনি বালিঘাট বন্ধে কড়া দাওয়াই দেন। কেননা শাসক দলের দু-পক্ষের মোটরবাইক বাহিনীর অন্যতম রসদ ছিল বেআইনি বালি লুটের অর্থ।

Related posts

Leave a Comment