সংবাদ কলকাতা, ১৬ ফেব্রুয়ারি: কিংবদন্তি ফুটবলার তুলসীদাস বলরাম প্রয়াত। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। আজ, বৃহস্পতিবার দুপুর ২ টা ৫ মিনিট নাগাদ বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বাড়ি উত্তরপাড়ায়। সেখানেই থাকতেন তিনি। কিন্তু, বার্ধক্যজনিত সমস্যার কারণে সম্প্রতি বাইপাসের ধারের ওই বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন বলরাম। তাঁর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ কলকাতা তথা ভারতের ফুটবলপ্রেমীরা। শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পিকে ব্যানার্জি ও চূনী গোস্বামীর প্রয়াণের পর বলরামের প্রয়াণে ভারতীয় ফুটবল জগতের একটি যুগের অবসান হল।
তাঁর প্রাক্তন সতীর্থ সুকুমার সমাজপতি একটি জনপ্রিয় বাংলা ডিজিটাল সংবাদ মাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় বলেন, ‘আজ বুক ভেঙে যাচ্ছে আমার। একটি ছেলে কানাডায় চাকরি করত। ও বলরামকে কাকা বলত। মাস দুয়েক আগে ও চলে আসে কলকাতায়। ছেলেটি রোজ হাসপাতালে যেত। ছেলেটির সঙ্গে রোজ কথা হত। গতকালও সন্ধ্যেবেলা কথা হয়েছিল। আজও রাতে ছেলেটিকে ফোন করব ভেবেছিলাম। তার মধ্যেই ও দুপুরে খবর দিল যে, আমার কাকা চলে গেল। হায়দরাবাদে বলরামের বাবা, মা ও ভাই ছিল। তবে ওরা বহুকাল আগে চলে গেছেন। ওর হায়দরাবাদের সঙ্গে কোনও টাচই ছিল না সেভাবে। বলরাম বিয়ে করেননি। সংসার করেননি। আমি ওঁর উত্তরপাড়ার বাড়িতে যেতাম। নানা রকম কথা হত। পুরনো দিনের কথা ফিরে আসত। বন্ধু হিসাবে, দাদা হিসেবে যা পেয়েছি আমি, তার কোনও তুলনা হয় না। শেষে বলব বলরাম ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে এক নম্বর ফুটবলার হয়েই থাকবেন।’
প্রসঙ্গত ১৯৫৬ সালে হায়দরাবাদের হয়ে সন্তোষ ট্রফিতে সাফল্যের পর জাতীয় দলের হয়ে অলিম্পিকসে অংশগ্রহণ করেন তুলসীদাস বলরাম। সেবার অলিম্পিকসে সোনা জয় করে ভারত। এছাড়া ১৯৬২ সালে জাতীয় দলে খেলার সময়ে এশিয়ান গেমসেও সোনা জয় করে ভারত। ১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত তিনি ইস্টবেঙ্গলে খেলেন। ১৯৬১ সালে তিনি ইস্টবেঙ্গলের অধিনায়কও হন। এই পর্বে তিনি জাতীয় দলের একজন সফল সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৬২ সালে অর্জুন পুরস্কার পান। ২০১০ সালে ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের পক্ষ থেকে তাঁকে ‘জীবনকৃতি’ সম্মান প্রদান করা হয়। শারীরিক অসুস্থতার জন্য মাত্র ২৭ বছর বয়সে তিনি আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর গ্রহণ করেন। পদ্মশ্রী না পাওয়ার জন্য বলরামের মনে যথেষ্ট আক্ষেপ থাকলেও ২০১৩ সালে তাঁকে বঙ্গবিভূষণ সম্মানে ভূষিত করে রাজ্য সরকার।
previous post