শঙ্কর মণ্ডল: শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ছবি ক্রমশ ফুটে উঠছে। ৯ দিনে ৭ জন খুন। এই তালিকায় শুধু বিরোধীরা নয়, রয়েছে শাসক তৃণমূলেরও কর্মী। কেন এত রক্ত? শুধুই কি রাজনীতি? আসলে এই নির্বাচনকে কিছু মানুষ তাদের রোজগারের লাইসেন্স পাবার একমাত্র পরীক্ষা বলেই মনে করে। যেহেতু এই রাজ্যে অন্য কোনও রোজগারের জায়গা নেই, সেহেতু এই পঞ্চায়েতের মাধ্যমেই ক্ষমতা দখল করতে মরিয়া তারা। তারা জানে যে, এর মাধ্যমেই সরকারি টাকা ব্যাপকভাবে লুঠ করতে পারবে। আর রাজ্যের শাসক দলও এই টাকার একটা বড় ভাগ পাবার জন্যই সর্বদলীয় গণতন্ত্রের পরিবর্তে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে বদ্ধ পরিকর। রাজ্য পুলিশকে একেবারে মেষ শাবক বানিয়ে ফেলতে সক্ষম রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। এই পুলিশের হাতে মানুষের নিরাপত্তা তো নেই-ই। এমনকি যাঁরা ভোটের কর্মী হিসেবে কাজ করবেন, তাঁরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আজ সরকারী কর্মচারীদের যৌথ মঞ্চ প্রকাশ্যেই বলে দিয়েছে, তারা এই রাজ্য পুলিশের ওপর কোনওভাবেই ভরসা করতে পারছেন না। তাই তাঁরা কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন। আর এই রাজ্যের সরকার ও তার দলদাস নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা এই কেন্দ্রীয় বাহিনীকে আটকাতে সুপ্রীম কোর্টে গেছেন। যা থেকে ওদের খুন আটকানোর চেষ্টার অনীহা প্রমাণ করে।
আসলে রাজনীতি হওয়া উচিত যুক্তি, তর্ক, মতাদর্শ ও বিভিন্ন কর্মসূচীর ভিত্তিতে। বিভিন্ন দল তার নির্বাচনী ইস্তেহার পেশ করবে। আর তার সমর্থনে তারা বক্তব্য রাখবে। মানুষ স্থির করবে, কাকে তারা সমর্থন করবে। কিন্তু রাজনৈতিক দল যখন দেউলিয়া হয়ে যায়, যখন কোনও যুক্তি তাদের কাছে থাকে না, তখনই এই নোংরা রাজনীতির জন্ম হয়। আর এখন নেতারা যে ভাষায় কথা বলেন, তাতে ডিগ্রী তাঁদের যাই থাক, তাঁরা যে একেবারেই মূর্খ, সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না। এমনকি শাসকদলের এই অসভ্য নেতাদের কাউন্টার করতে গিয়ে বিরোধী দলের নেতারাও যদি ওই একই ভাষায় কথা বলেন, তাহলে তাঁদেরকেও অসভ্য, বর্বর বা এই মূর্খ বলেই ধরা হবে। সিপিএম ৩৪ বছর যে সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে, বর্তমানে সেই একই সংস্কৃতি বহাল থাকলেও বিজেপিকে মানুষের কাছে প্রমাণ করতে হবে যে, সত্যিই বিজেপি মনে করে, দ্য পার্টি উইথ ডিফারেন্স। গণতন্ত্রে মারের বদলা মার দিয়ে হয়তো সাময়িক কিছু সফলতা পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী সফলতা কোনওভাবেই পাওয়া সম্ভব নয়।
এই রাজ্যের সবচেয়ে বড় সমস্যা, মানুষের কাছে রোজগারের অভাব। কৃষক ফসলের সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার থেকে কৃষক অনেক দূরে, উপযুক্ত জৈব সার উৎপাদনে ব্যর্থতার কারণেই তাঁরা ক্রমশ রাসায়নিক সারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। আর যার মাধ্যমে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এগুলির বিরুদ্ধে উপযুক্ত তথ্যসমৃদ্ধ বিকল্প পদ্ধতি পঞ্চায়েত নির্বাচনে তুলে ধরা দরকার। কিভাবে সমবায় পদ্ধতিতে শোলার কোল্ডস্টোর তৈরি থেকে শুরু করে জৈব সার উৎপাদন ও বিভিন্ন বিকল্প চাষ কিভাবে করা যাবে, পঞ্চায়েতের মাধ্যমে তার বিস্তারিত প্রযুক্তি তুলে ধরতে হবে, যা আমার কাছে তৈরি আছে। যে কেউ চাইলেই আমি দিতে প্রস্তুত। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের প্রচার ও তা কিভাবে মানুষ পেতে পারে, তার প্রচারও এই নির্বাচনে দরকার।
সুতরাং ইতিবাচক রাজনীতি যদি সঠিকভাবে করা যায়, তাহলে অবশ্যই সফলতা আসতে বাধ্য। তার জন্য বাজে কথা বলার প্রয়োজন নেই। আর একটা কথা মনে রাখতে হবে, বন্দুকের নলই ক্ষমতার উৎস হতে পারে না। যদি জোর করে এই ভোট লুঠের মাধ্যমে মানুষকে বঞ্চিত করেই তৃণমূল জিতে নেয়। তাহলেও প্রচার করেই মানুষকে কাছে টানতে হবে। মানুষ যদি একবার বিশ্বাস করে, তাহলে তৃণমূলের পক্ষ থেকে ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার এই প্রচেষ্টার বিরুদ্ধেই আগামী লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে মানুষ তার জবাব দিয়ে দেবে। ঠিক যেমন ২০১১সালে সিপিএমের বিরুদ্ধে মানুষ দিয়েছে। তাই আসুন বাংলার বুকে সুস্থ রাজনীতির প্রতিষ্ঠা করি।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ লেখক সংযুক্ত হিন্দুফ্রন্টের রাজ্য সভাপতি। এই প্রবন্ধের সমস্ত মতামত তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত।
previous post