মৃন্ময় ভট্টাচার্য
পটলদার প্রায় বছর ষাট বয়স হতে চললো। শুধুমাত্র স্কুলে পড়ার সময় মেপে মেপে পাশ নম্বর তোলা ছাড়া আর কোনও বিষয়ে তিনি মেপে চলার ধার ধারেননি। মাসের প্রথমে মাইনে পেয়ে রাজা রাজড়ার মতো এলাহী খাওয়া দাওয়া, ফূর্তি করে প্রতি মাসের শেষে ভিখারির মতো দশা হয়ে যায়। তাতেও কোনও ভ্রুক্ষেপ ছিল না লোকটার। মেপে কথা বলতেও মোটেই অভ্যস্ত নয় বলে, হয় অফিসে, নয় পাড়ায়, নয়তো বা বৌদির সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়া নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। এহেন লোককে সকলেই এড়িয়ে চলে। যার ফলে পটলদা একেবারে নিঃস্ব ও নির্বান্ধব।
জীবনে সফল হতে গেলে অবশ্যই চাই শৃঙ্খলা। প্রতি পদক্ষেপ ভেবে, মেপে, অঙ্ক কষে পা ফেলাটাই সাফল্যের চাবিকাঠি। পটলদার জানা নেই, সেই চাবিকাঠির অবস্থান কোথায়! তাই তার জন্য সব ক্লাব ও আড্ডা মারার ধাপির ঠেকের দরজা চিরতরে বন্ধ। বৌদি যে অসহ্য এই লোকটির জন্য এখনও বাড়ির দরজাটা কেন বন্ধ করেননি, প্রতিদিন বিকালে পাড়ার ধাপিতে সেটাই গবেষণার মুখ্য বিষয়।
বৌদির অসামান্য দৃঢ়তা ও অধ্যবসায়ের দৌলতে পটলদার ছেলেটা পটলদার প্রকৃত উত্তরসূরী হয়ে উঠতে পারেনি। এটাই ঐ পরিবারের জন্য একমাত্র সৌভাগ্য। ছেলে ভালো পড়াশোনা করে ভালো চাকরি পেয়েছে। মাঝে মাঝেই কিছু না কিছু গিফট সে পায় অফিস থেকে।
এবার পেয়েছে এক ডিজিটাল ওজন মাপার যন্ত্র। যেদিন সেই যন্ত্রটা ঘরে এলো, হঠাৎ ম্যাজিকের মতো পটলদাও গেল পাল্টে! পটলদা নিজেকে মাপতে শুরু করলো ঘন্টায় ঘন্টায়। খাওয়ার আগে শুধু নিজেকে নয়, বাড়ির সকলকে জোর করে মাপাচ্ছে। খাওয়া শেষ হলে আবার মাপছে। দেখছে কে কত পরিমাণে খেলো। বড় বাইরে যাবার আগে মাপছে, বাথরুম থেকে বেরিয়ে আবার মাপছে। হিসাব রাখছে ইনপুট মাইনাস আউটপুট কত হল। তার মানে শরীর কতখানি পুষ্টি পেল। আরও আশ্চর্যের ব্যাপার, পটলদা কথাও বলছে মেপে মেপে! বোধগম্য হচ্ছে না কথা বলার সঙ্গে শরীরের পুষ্টির কোনও গূঢ় সংযোগ আছে কিনা। এক সময় মাত্রাতিরিক্ত চপ কাটলেট খেয়ে পটলদার পেটের একেবারে বারোটা ছাপ্পান্ন বেজে গেছে। প্রতি মুহূর্তেই গ্যাস অম্বলের আস্ফালন । ঢেঁকুর উঠলে বা বিশ্রীভাবে সশব্দে বায়ূ দূষণ করলে, আগে আর পরে ওজন মেপে সেই দূষিত গ্যাসের ওজন কতো মিলিগ্রাম, তাও মাপছে পটলদা!
পটলদার এই সব কীর্তি দেখে ছেলে ও বৌয়ের একেবারে মাথায় হাত। লোকটা পাগল হয়ে গেল নাকি! পটলদা যদি এই বয়সে পটলও তুলতো, সেটা সহ্য করা যেত। কিন্তু এ পাগলামি তো আর সহ্যর নয়। তাই ছেলে ও বৌ ঠিক করলো এই ওজন মাপার যন্ত্রটা পাড়ার ঐ ধুঁকতে থাকা দাতব্য চিকিৎসালয়ে পটলদার নামে দান করে দেবে। প্রয়োজনে পটলদা ওখানে গিয়েই নিজের ওজন মেপে আসবে।
আশ্চর্য, পাল্টে যাওয়া পটলদাও এই প্রস্তাবে একবাক্যে রাজি হয়ে গেল! এর ফলে অন্তত একটা বন্ধ দরজা খোলার চাবিকাঠির সন্ধান পটলদা পেয়ে তো গেল। এতেই শান্তি। ওঁঃ শান্তি।
বিঃ দ্রঃ এই বিভাগে কবিতা ও গল্প প্রকাশ করতে এই নাম্বারে হোয়াটস্যাপ করুন