সুভাষ পাল, সংবাদ কলকাতা: আমরা পুকুর, নদী, খাল, বিল বা হ্রদের মতো জলাশয়ে মাছ ধরার সময় টোপ হিসেবে চার দিয়ে থাকি। সেখানে এমন কিছু লোভনীয় খাবার রাখি, যার ঘ্রাণ বা স্বাদ পেলে মাছ গিলতে বাধ্য। আর সেই চার সমেত বড়শি গেলাতে পারলেই কেল্লা ফতে। ছিপে অথবা জালে মাছ উঠবেই। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলি এসবে কিছু কম যায় না। সেই দলটি যদি তৃণমূল হয়, তাহলে তো কথাই নেই। ভোটের মুখে সাধারণ মানুষকে লোভনীয় টোপ দিয়ে ভোট মার্জিন বাড়াতেই হবে।
গত লোকসভা ভোটে বিপুল পরাজয়ের পর মরিয়া হয়ে ওঠেন তৃণমূল সুপ্রিমো। একের পর এক লোভনীয় অফার। দুয়ারে রেশন থেকে দুয়ারে সরকার। বিধানসভা ভোটের সময় হাতে গরম তেলেভাজার মতো লক্ষ্মীভান্ডার নামক প্রকল্পের টোপ লুফে নেন গ্রাম বাংলার সাধারণ গরিব, খেটে খাওয়া গৃহবধূরা। অভাবের সংসারে প্রতি মাসে যদি ৫০০ বা হাজার টাকা আসে, তাতে মন্দ কি!
এবার সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। এবারও রাজ্যের শাসক দল কিন্তু ভুল করেনি। আসছে এপ্রিলে ২০ দিন থাকছে দুয়ারে সরকার। সেখানে মানুষ ভিড় করবেন বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে। তাঁদের সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসবেন এলাকার ছোটো ও মাঝারি মাপের নেতারা। তাঁদের সেই ন্যূনতম সহযোগিতায় কৃতজ্ঞপাশে আবদ্ধ হবেন সাধারণ মানুষ। শাসকদলের বিরুদ্ধে কেউ মাথা তুলবেন না।
রাজ্যের এতদিনের তোলপাড় করা দুর্নীতি, সারাবছর খেটেখুটে পড়া পাড়ার প্রতিভাবান, চাকরি না পাওয়া পাড়ার বেশ কিছু শিক্ষিত, বেকার ছেলের কথা বেমালুম ভুলে যাবেন তাঁরা। ভুলে যাবেন অর্পিতার ফ্ল্যাটে বেহিসেবি টাকার পাহাড়ের উৎস ও রহস্যের কথা। ভুলে যাবেন অনুব্রতর আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের কথা। ভুলে যাবেন পার্থ, মানিক, পরেশ, কুন্তল, শান্তনুদের কথা। কারণ, অমুক আমাকে দুয়ারে সরকারের সময় তমুক উপকার করেছেন। ভোটের সময় তাঁদেরকে খুশি রাখতেই হবে। বিপদে আপদে তাঁরাই পাশে দাঁড়াবে। রাজ্য জাহান্নামে যাক। আমি বেঁচে থাকি। আমার সংসার ভালো থাকুক।
প্রসঙ্গত আগামী ১ এপ্রিল থেকে মোট ৩২টি প্রকল্পের কাজ হবে দুয়ারে সরকার প্রকল্পে। যার মধ্যে থাকছে স্বাস্থ্যসাথী, খাদ্যসাথী, লক্ষীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর মতো প্রকল্পগুলি। ১ এপ্রিল থেকে চলবে আবেদনপত্র গ্রহণ ও জনসংযোগের কাজ। ১১ তারিখ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত আবেদনকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে শংসাপত্র ও প্রয়োজনীয় নথি। তবে রবিবার ও ছুটির দিন কোনও শিবির হবে না।
previous post