April 7, 2025
জেলা

পঞ্চায়েতের টোটো শহরে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় দুমকা রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ

নিজস্ব সংবাদদাতা, রামপুরহাট: ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে রামপুরহাট শহর এলাকায় পঞ্চায়েতের কোনও টোটো প্রবেশ করবে না। এমনই নির্দেশিকা জারি করে রামপুরহাট পৌরসভা। তারই জেরে রবিবার রামপুরহাট শহর সংলগ্ন আশেপাশের প্রায় ২৫-৩০টি গ্রামের হাজার খানেক টোটো চালকরা রামপুরহাটের বর্ডার ঝনঝনিয়া মোড়ের কাছে দুমকা রোড অবরোধ করে।

পঞ্চায়েতের টোটো চালকদের দাবি, এই ধরনের নির্দেশিকা জারি করার আগে পঞ্চায়েত এলাকার টোটো চালকদের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা করেনি প্রশাসন। পাশাপাশি, আমরা দীর্ঘদিন ধরে পঞ্চায়েত এবং পৌর এলাকায় টোটো চালিয়ে জীবন অতিবাহিত করছি। আজকে হঠাৎ করে পৌরসভা ও মহকুমা প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে আমরা চরম বিপদের সম্মুখীন। প্রতিটি টোটো চালক ব্যাংকের মাধ্যমে লোন নিয়ে টোটো কিনে চালাচ্ছেন। এমত অবস্থায় পৌরসভা ও মহকুমা প্রশাসনের এহেন সিদ্ধান্তে প্রায় হাজার খানেক টোটো চালকের জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাই আমরা সকল টোটো চালক মিলে পৌরসভা ও পঞ্চায়েতের বর্ডার ঝনঝনিয়ায় সাঁকো অবরোধ করেছি। বীরভূমের সঙ্গে দুমকা যাবার একমাত্র রাস্তা টোটো চালকদের অবরোধের কারণে রামপুরহাট দুমকা রুটের সমস্ত বাস এবং পাথর শিল্পাঞ্চলের সমস্ত গাড়ি অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। রামপুরহাট থানার পক্ষ থেকে সেখানে পুলিশ পাঠানো হলেও তাঁদের অবরোধ তোলা সম্ভব হয়নি। ওই রাস্তায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এই ঘটনায় সমস্ত রুটের বাস থেকে শুরু করে পাথর শিল্পাঞ্চলে যাওয়া বিভিন্ন গাড়ি, টোটো, অটো এমনকি যাত্রী বোঝায় বিভিন্ন গাড়িও আটকে পড়ে।

পঞ্চায়েত এলাকার টোটো চালক রিন্টু আলি জানান, আমরা দীর্ঘদিন ধরে পৌর এলাকায় টোটো চালিয়ে আসছি। পৌরসভার তরফ থেকে যে সমস্ত নিয়ম কানুন আছে, তা আমরা সব কিছুই মেনে চলি। কিন্তু হঠাৎ করে মহকুমা প্রশাসন ও পৌর প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে, তা আমরা মানতে নারাজ। কারণ আমরা পঞ্চায়েত এলাকা থেকে প্যাসেঞ্জার নিয়ে পৌর এলাকার বিভিন্ন অফিস, আদালত, হাসপাতাল সবকিছুতে যাত্রীদের নিয়ে যাই। তাতে আমাদের জীবন জীবিকা নির্বাহিত হয়। এখন যদি পৌরসভার নির্দেশিকা অনুযায়ী পঞ্চায়েত এলাকার কোনও টোটো পৌরসভায় প্রবেশ না করে, তাহলে এক থেকে দুই কিলোমিটার রাস্তা আমরা টোটো চালাতে পারব। এতে আমাদের যাত্রী সংখ্যা কমে যাবে। পাশাপাশি দৈনিক রোজগারও অনেক কমে যাবে। তাই যদি পৌরসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পঞ্চায়েত এলাকার কোনও টোটো পৌরসভায় প্রবেশ না করে, তাহলে আমরাও পঞ্চায়েত এলাকার টোটো চালকরা এভাবেই রাস্তা অবরোধ করে রাখব। এবং রামপুরহাট পৌরসভার কোনও গাড়ি পঞ্চায়েত এলাকার রাস্তার ওপর দিয়ে যেতে দেব না। এমনকি পৌরসভার ভাগাড় রয়েছে পঞ্চায়েত এলাকায়। সেখানেও পৌরসভার কোনও গাড়ি আমরা প্রবেশ করতে দেব না।

পৌরসভার পানীয় জলের ব্যবস্থা রয়েছে পঞ্চায়েত এলাকায়। সেখানেও আমরা অবস্থান-বিক্ষোভে বসে যাব। যাতে পঞ্চায়েত এলাকা থেকে পৌরসভার পানীয় জলের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। আর একজন টোটো চালক সালাউদ্দিন শেখ বলেন, পৌরসভা এবং মহকুমা প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করছি আমরা। পঞ্চায়েত এলাকার টোটো চালকরা সকলেই বিভিন্ন ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে টোটো কিনে জীবিকা নির্বাহ করছি। এই নির্দেশিকার ফলে আমরা কর্মহীন হয়ে পড়ব। আমাদের রুটি রোজগারে টান পড়বে। এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের ডেপুটি স্পিকার আশীষ বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রশাসনিক এই মিটিংয়ে ছিলেন। তিনি কেন এধরনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেননি, সে ব্যাপারেও মন্তব্য করেন সালাউদ্দিন শেখ। আশেপাশে প্রতিটি গ্রামেরই পঞ্চায়েতগুলি তৃণমূলের দখলে। আমরা প্রত্যেকটা টোটো চালকই তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত। তবুও বিধায়ক ও পৌরপিতার এই ধরনের সিদ্ধান্ত আশা করা যায়নি।

সালাউদ্দিন, রনি সহ অন্যান্য টোটো চালকরা একসাথে দাবি করেন, যেভাবে আগে জোড় বিজোড় টোটো শহরে চলত, সেইভাবে পঞ্চায়েত এলাকার টোটো চালকদের নিয়ে টোটো চালাতে হবে। পাশাপাশি যে সমস্ত নিয়ম কানুন প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে, সেগুলি সবই মেনে চলবে পঞ্চায়েত এলাকার টোটো চালকরা। আমাদের দাবি না মানলে আগামীদিনে আমরা পৌর এলাকার কোনও গাড়ি, যানবাহন পঞ্চায়েত এলাকার উপর দিয়ে চলাচল করতে দেব না। আন্দোলন আরও বৃহত্তর হবে। আমরা টোটো না চালিয়ে সারাদিন এভাবেই রাস্তা অবরোধ করে রাখব। দিনের পর দিন পৌর পরিষেবাকে ব্যাহত করে দেব।

Related posts

Leave a Comment