দেশের যেসব দুর্নীতিগ্রস্তরা সুইস ব্যাংকের কালো টাকা নিয়ে আওয়াজ তুলেছিল, নোটবন্দি করে তাঁদের পকেটে হাত ঢুকিয়ে দেন মোদী
সুভাষ পাল: নোটবন্দী করে দেশের দুর্নীতিগ্রস্ত ও কালোবাজারিদের বিরুদ্ধে মোক্ষম চাল দিয়েছিলেন মোদী। ২০১৪ লোকসভা ভোটের প্রচারে কোনও এক সভায় মোদী বলেছিলেন, সুইস ব্যাংকে দেশের যে কালো টাকা গচ্ছিত আছে। তা উদ্ধার করা সম্ভব হলে দেশের প্রতিটি পরিবারকে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া সম্ভব হতো। সেবছর বিপুল সমর্থন নিয়ে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর কংগ্রেস সহ বিরোধীরা মোদির সেই বক্তব্যের রং চড়ানো ব্যাখ্যা দিতে শুরু করেন। তারা দেশের মানুষকে বোঝাতে থাকে, মোদী বলেছিল, ক্ষমতায় এলে সুইস ব্যাঙ্ক থেকে কালো টাকা উদ্ধার করে আনবেন। এবং প্রত্যেক দেশবাসীকে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেবেন। তাঁরা প্রশ্ন করতে থাকেন, কোথায় সেই ১৫ লক্ষ টাকা? এদিকে সুইস ব্যাংকে যাদের কালো টাকা ছিল, তারাও সজাগ হয়ে যায়। তারা টাকা অন্যত্র সরিয়ে ফেলে।
এরাজ্যের শাসক দল তৃণমূলও যখন সারদা সহ একাধিক চিটফান্ড কাণ্ডে জেরবার, তখন তাঁরাও একই কথা মানুষকে বোঝাতে শুরু করে। মুখে মুখে তাঁরা বলতে শুরু করে, কোথায় সেই কালো টাকা? মোদী যে সবাইকে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেবে বলেছিল! ২০১৬ সালে রাজ্যের বিধানসভা ভোটের সময় এই কথাটি ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বোধহয় এটারই পাল্টা জবাব দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেজন্য নোটবন্দি করে দেশের দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা ও কালোবাজারিদের পকেটে হাত ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন।
যার ফলস্বরূপ দেশজুড়ে কালো টাকার মহাযজ্ঞ শুরু হয়ে যায়। আয়কর ফাঁকি দেওয়া ও কোটি কোটি হিসাব বহিৰ্ভূত টাকা ব্যাঙ্কে জমা করতে না পেরে নদীর পাড়ে, খালের ধারে, বাড়ির ছাদে পোড়ানো হতে থাকে। যাতে বমাল সমেত ধরা পড়ে না যায়। যেখানে সেখানে ৫০০ ও হাজার টাকার পুরোনো নোট ও পোড়া নোট উদ্ধার হতে থাকে। সীমান্তে কালোবাজারিরা কমিশনের ভিত্তিতে লক্ষ লক্ষ টাকা গরিব গ্রামবাসীদের একাউন্টে ঢুকিয়ে কালো টাকা সাদা করতে শুরু করে। সেখানে লাখ প্রতি কমিশন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। জনধন যোজনার সেসব ব্যাঙ্ক একাউন্ট-এ বছরে হাজার টাকাও লেনদেন হতো না, সেখানে নোটবন্দির পর লক্ষ লক্ষ টাকা লেনদেন হয়। অনেক বেসরকারি সংস্থা তাদের বেহিসেবি টাকা কর্মীদের একাউন্টে ঢুকিয়ে নোট বদল করে। লক্ষ লক্ষ ভুয়ো কোম্পানির অর্থনৈতিক লেনদেন বন্ধ হয়। অনেক বেসরকারি সংস্থা আয়কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য আয়ের সঠিক হিসাব দিত না। তাদের নগদ টাকা ঘুরপথে সাদা করা হতো। সেগুলি বন্ধ হয়ে যায়।
এব্যাপারে একটি বিশ্বস্ত সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। একটি বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জানা যায়, একটি বেসরকারি ল্যাব সংস্থার শ্রীরামপুর সহ কলকাতা ও শহরতলীর বিভিন্ন প্রান্তে চার-পাঁচটি ব্রাঞ্চ আছে। তারা নোটবন্দির আগে প্রতিটি ব্রাঞ্চে যদি চারটি মেশিন থাকে, তাহলে একটি মেশিনের আয়ব্যয়ের হিসেব সরকারকে দেখাতো। বাকি মেশিনগুলির রোজগারের টাকা বস্তাবন্দি করে বাইপাস করা হতো। সেই টাকা সরাসরি ব্যাংকে লেনদেন করা হতো না। ঘুরপথে সম্পত্তি কিনে অথবা অন্যভাবে লেনদেন করা হতো। নোটবন্দির পর সেই সংস্থার ভোল বদলে যায়। লেনদেন সোজা পথে হতে শুরু করে। আয়কর দেওয়ার পরিমাণও অনেকটা বেড়ে যায়। এমনকি কর্মীদের পিএফ, ইএসআই, পেনশন ইত্যাদি সুবিধা চালু করে দেয়।
সুতরাং মোদির বিরুদ্ধে যারা সুইস ব্যাংকে কালো টাকা উদ্ধারের দাবি জানিয়ে দেশ তোলপাড় করে দিয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে এটা যে একটি মোক্ষম জবাব ছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।