কল্যাণ চক্রবর্তী এবং অরিত্র ঘোষ দস্তিদার:
লোকবিশ্বাসে শিবের প্রিয় পাখি হল নীলকন্ঠ। শিবের গরল পানের ভাগ সেও নাকি নিয়েছিল। হলাহল নিজের গলায়। তাই অবয়বেও যেন গরলের নীলচে ছোঁয়া। শিবের বার্তাবাহ পাখি। দুর্গাপূজা উপলক্ষে শিবজায়াকেও দশমীতে ডাক দিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
সপরিবারে মর্ত্যে এসেছেন স্ত্রী, শিব যে বড্ড একা! কৈলাশবাসী তিনি, বাঙালির চিন্তনে পরিবার-কেন্দ্রিক শিবের তাই তর সয় না। দুর্গাকে পথ চিনিয়ে ফিরিয়ে আনতে হবে! তাই শিব নীলকন্ঠ পাখিকে উড়িয়ে দেন। এই হল মিথ-পুরাণে পাখির পরিচয়।
বৈজ্ঞানিক পরিচয়
The Indian roller (Coracias benghalensis), family Coraciidae, Occurance: West Asia to the Indian Subcontinent.
মিথ-পুরাণে জারিত হয়ে দশমীর দিন একদা নীলকন্ঠ পাখি ওড়ানো ছিল বাংলার লোকাচার। সেজন্য ব্যাপক হারে নীলকন্ঠ পাখি ধরা হত গাঁয়ের মাঠ-ময়দান থেকে ফাঁদ পেতে। কিন্তু বন্দীদশায় পাখমারারা কোনও খাবার পরিবেশন করত না পাখিকে। এরা ফসলের আর বনের নানান উড়ন্ত পোকা ধরে খায়। পাখি-হাটের হাটুরেদের কিংবা দুর্গাপূজার আয়োজকদের জানা থাকত না, এ পাখির খাদ্যতালিকায় কী দেওয়া যায়! তারা ভেজা ছোলা, ভেজানো মটর, কলাই দিতেন। সাত্ত্বিক খাবার, যা এদের একেবারেই খাদ্য নয়। এভাবে অনশনে এরা আধমরা হয়ে যেত। যখন উড়িয়ে দেওয়া হত, তখন অবসন্ন পাখির জীবনাবসান ঘটত। যদিও এ ছিল অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু। তবে দেশজুড়ে ব্যাপকহারে কীটনাশকের বিষক্রিয়াতে তার চাইতেও ঢের বেশি নীলকন্ঠ পাখির মৃত্যু ঘটেছে। এখন এর সংখ্যা তাই কমছে। অপরূপ সুন্দর এই পাখি। উড়ন্ত পাখির সৌন্দর্য থেকে মুখ ফেরানো যায় না।
(প্রচ্ছদ শিল্পী: ড. গোপী ঘোষ)
previous post