শঙ্কর মণ্ডল: ঘুষ নেওয়া নিঃসন্দেহে একটি মারাত্মক অপরাধ। কিন্তু ঘুষ দেওয়াটা কি অপরাধ নয়? আর সততা, নৈতিকতা, এগুলো কোনও থিওরিক্যাল বিষয় নয়? এটা সম্পূর্ণ নিজের জীবন দর্শন ও বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে প্রমাণ করতে হয়। প্রত্যেক মানুষেরই চাহিদা থাকে। কিন্তু সেই চাহিদা মেটানোর জন্য আপনি কি বা কতটা অন্যায় করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারবেন, তার ওপরেই নির্ভর করবে আপনার সততার মাপকাঠি। রাজনীতি মানুষের কখনও পেশা হতে পারে না। ঠিক তেমনি সমাজসেবা করে টাকা রোজগারও সম্পূর্ণ অসততা। হ্যাঁ, এই কথাগুলো বললাম এই জন্য যে, আজ কুন্তল ঘোষকে চাকরি পাবার জন্য পিয়ালী দেবী বা অন্যান্য যে সমস্ত লোক লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়েছিল বলে দাবি করছে, আমি সেই প্রসঙ্গে একটা কথা বলতে পারি; কুন্তল ঘোষ তো অপরাধী বটেই; কিন্তু ঘুষ দেওয়ার অপরাধে ঐ ব্যক্তিদেরও অপরাধী হিসাবেই চিহ্নিত করা উচিত। আর এই জন্যই যারা ঘুষ দিয়ে চাকরি করছেন তাঁরা কেউ মুখ খুলছেন না।
আসলে বর্তমানে এই রাজ্যে একদিকে নিয়োগ দুর্নীতিই হোক বা আবাস কেলেঙ্কারি কিংবা ভুয়ো জব কার্ড তৈরি, যাইহোক না কেন, পুরো বিষয়গুলোই হল সংগঠিত অপরাধ। আর তথাকথিত সততার প্রতীক যেহেতু এই সরকারের প্রধান, সেহেতু তিনি কোনওভাবেই এই সংগঠিত অপরাধের দায় অস্বীকার করতে পারেন না। তাই সমস্ত অপরাধকে আড়াল করতে কেবল প্রশাসনকে বেআইনিভাবে ব্যবহার করাই রাজ্য সরকারের একমাত্র ভরসা। আর অন্যদিকে শুধুমাত্র সমাজসেবা করে একজন গৃহবধূ কী করে কোটিপতি হতে পারে, তাও গবেষণার বিষয়।
যাই হোক, বাংলা এখন ক্রমশ তার নিজস্ব ঐতিহ্যের গরিমা হারিয়ে চলেছে। আমরা এখন বিশ্বাস করতে পারছি না যে, এই বাংলায় একদিন বিশ্বের স্বনামধন্য কবিরা কবিতা লিখতেন, সাহিত্য চর্চা করতেন। তা নাহলে “এপাং ওপাং ঝপাং, কিংবা হরেকরকম্বা, হাম্বা হাম্বা” এই জাতীয় কবিতা সরকারের গ্রন্থাগারে জ্বলজ্বল করে? বা এই ধরণের কবিতা সর্বোচ্চ বিক্রি হয়? তাহলে কী ধরে নেব, এই রাজ্যের পাঠকদেরও এখনও হাতেখড়ি হয়নি? ঠিক যেমন ১০০ শতাংশ কাজ হয়ে যাওয়ার পরেও দিদির সুরক্ষা কবচের প্রয়োজন? আর দিদির ভূতেদের বিরুদ্ধে মানুষ এখন ওঝার ভুমিকা পালন করছে!
আর একটি বিষয় উল্লেখ করেই আজকের লেখা শেষ করব, সেটি হল একজন বিধায়ক হয়েও অন্য সরকারি পেশায় নিজেকে বহাল রাখা, মানে ছুটি না নিয়ে দুই জায়গা থেকে মাইনে নেওয়াটাও একপ্রকার দুর্নীতি। তৃণমূল খুব খারাপ বা এই কাজ একাধিক ব্যক্তি করলেও শিতলকুচির বিজেপি বিধায়কও নিজের অপরাধ এড়িয়ে যেতে পারেন না। ঠিক রাজ্যপাল বা অমর্ত্য সেনকে নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে সেটাও সমালোচনার উর্ধ্বে নয়। আর সবশেষে আবারও বলব, আপনি আচরি ধর্ম অন্যেরে শেখায়। তাই সাড়ে তিন দশকের রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মী হিসাবে নিজের জীবন দর্শনকে কখনো স্বচ্ছল জীবনে প্রবেশ করাতে পারি নি। কেবলমাত্র নৈতিকতার বিসর্জন দিতে না পারার জন্য। তাই করুণা বা উপদেশে কর্ণপাত না করে, একটাই কথা বলতে চাই, আমাকে আমার মত থাকতে দাও।
previous post
next post