সুভাষ পাল, সংবাদ কলকাতা, ২২ জুন: অবশেষে সাঁড়াশি আক্রমণের মধ্যে আদালতের নির্দেশ মানতে বাধ্য হল রাজ্য নির্বাচন কমিশনার। প্রথমে ২২ কোম্পানির পর আরও ৮০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে কেন্দ্রের কাছে আবেদন করল কমিশন। এর ফলে এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে মোট ৮২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়া চালানো হবে। একদিকে আদালতের ভর্ৎসনা, আর একদিকে রাজ্যপালের অসন্তোষ, পাশাপাশি বিরোধী রাজনৈতিক দলের চাপ। এই ত্রিফলা আক্রমণে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হলেন রাজ্যের শাসক দলের মনোনীত নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা। কিন্তু, এখানেই যে মুশকিল আসান হয়ে যাবে, সেটা বলা মুশকিল। কারণ, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কমিশন কতটা কাজে লাগাবে সেটা নিয়ে রয়েছে একাধিক ধোঁয়াশা। যেভাবে আদালত অবমাননা করে রাজ্য সরকারকে সুবিধা করে দিতে চাইছিল, সেই কমিশন কতটা নিরপেক্ষ এবং কড়া নিরাপত্তা দিয়ে ভোটগ্রহণ করবে, তা নিয়ে একটা সংশয় থেকে যাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে।
প্রসঙ্গত গত ২০১৩ সালে প্রায় সম পরিমাণ কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলেও নির্বাচন কিন্তু এক দফায় হয়নি। সেবার দার্জিলিং বাদে বাকি ১৭টি জেলায় মোট তিন দফায় নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। বলা বাহুল্য, সেবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনার ছিলেন মীরা পান্ডে। তাঁর সঙ্গে রাজ্য সরকারের সংঘাতের জন্য সেবার নির্বাচন বেশ কিছুটা দেরিতেই হয়। নাহলে সচরাচর মার্চে নির্বাচন শুরু হওয়ার কথা। যাই হোক,তৎকালীন কমিশনার মীরা পান্ডের নেতৃত্বে রাজ্য নির্বাচন কমিশন ২০১৩ সালের ২ জুলাই, ৬ জুলাই ও ৯ জুলাই এই তিন দিনে তিন দফায় নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। সেবারও এই তিন দফায় মোট ব্লক ছিল ৩২৯টি। মোট ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ৫৭ হাজার ২৩৩টি। মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ৪৪ লক্ষ ৫৭ হাজার ৫৩৬টি।
২ জুলাই প্রথম দফাতে ৯টি জেলাতে ভোটগ্রহণ করা হয়। এই জেলাগুলির মধ্যে ছিল উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, হাওড়া, হুগলি ও বর্ধমান জেলা। এরপর ৬ জুলাই দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে ৪টি জেলায় ভোটগ্রহণ করা হয়। সেই ৪টি জেলা হল, নদীয়া, মালদা, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূম। এরপর তৃতীয় দফায় বাকি ৪টি জেলায় ভোটগ্রহণ করা হয়। যেগুলি হল কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর ও দক্ষিণ দিনাজপুর।
২০১৩ সালে জেলার সংখ্যা কম থাকলেও এলাকা কিন্তু একই ছিল। কারণ তখন জেলাগুলিকে খণ্ডিত করা হয়নি। প্রশ্ন উঠছে, সেবার তিন দফায় ভোটগ্রহণের ফলে প্রতি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে বেশি সংখ্যক করে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল। এবার ৮ জুলাই মাত্র এক দফায় ভোটগ্রহণের ফলে সেই পরিমাণ কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে না। ফলে ভোটারদের উপযুক্ত নিরাপত্তার একটা ঘাটতি কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।