29 C
Kolkata
April 15, 2025
উত্তর সম্পাদকীয় রাজ্য

নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে সিবিআই আধিকারিকরা কি ঘুষ খেয়েছেন?

নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে সিবিআই আধিকারিকরা কি ঘুষ খেয়েছেন? কেন তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্তের হুঁশিয়ারি দিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়?

সুভাষ পাল, সংবাদ কলকাতা: এবার নিয়োগ তদন্তে চূড়ান্ত গাফিলতি নিয়ে সিবিআই-এর ওপর প্রবলভাবে ক্ষুব্ধ হলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার তিনি সিবিআই-এর তদন্তের গতি প্রকৃতি নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। বিচারপতি বলেন, ‘সিবিআই বোগাস, কিছুই করছে না। জেনে রাখুন, আপনাদের খুব বাজে সময় আসতে চলেছে।’ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এদিন সিবিআই আধিকারিকদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যে কোনও সময় নিয়োগ তদন্তের সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির হিসেবে চাইবেন তিনি। এরপরই সিবিআই-কে জেলে গিয়ে মানিক ভট্টাচার্যকে জেরা করার নির্দেশ দেন বিচারপতি। কীভাবে ওই এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানিকে কাজের বরাত দেওয়া হয়েছিল? কোনও টেন্ডার ডাকা হয়েছিল কিনা? ওই কোম্পানিকে নিয়োগের পিছনে অন্য কোনও উদ্দেশ্য ছিল কি না। এই সব প্রশ্নের উত্তর আগামী ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সিবিআইকে জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।

বিচারপতির এই পদক্ষেপের ইঙ্গিতে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে প্রশাসনিক থেকে রাজনৈতিক মহলে। এই কথার মাধ্যমে কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়? তাহলে কি সিবিআই অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে চাইছে? না হলে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করবেন কেন? আর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী আধিকারিকদের সম্পত্তির তথ্য চাওয়ার ইঙ্গিতই বা কেন দেবেন? সব শেষে এই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি সিবিআই টেবিলের তলা দিয়ে টাকার বিনিময়ে নিয়োগকারীদের দুর্নীতি আড়াল করার চেষ্টা করছে? এদিন বিচারপতি সিবিআই-কে তিরষ্কারের সুরে বলেন, ‘কিচ্ছু করেননি আপনারা। শুধু লর্ডশিপ, আর লর্ডশিপ করছেন। কী হচ্ছে? আমি পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছি, কপালে দুঃখ আছে আপনাদের। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ তাকিয়ে রয়েছেন এই তদন্তের দিকে। আর ইয়ার্কি হচ্ছে? এবারও যদি কাজ না করেন, তাহলে আপনাদের জন্য খুব খারাপ সময় আসতে চলেছে। আমি নিজেই তদন্ত করব। এবার প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখব।’

প্রসঙ্গত, প্রাক্তন পর্ষদ সচিব রত্না চক্রবর্তী বাগচীর কাছে বিচারপতি জানতে চান, নির্দিষ্ট আইন থাকা সত্ত্বেও ২০১৬ সালে নিয়োগে কেন ৫ শতাংশ অতিরিক্ত প্যানেল তৈরি হয়নি? এর জবাবে রত্না চক্রবর্তী বাগচী বলেন, সে সময় সমস্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তৎকালীন পর্ষদ সভাপতি তথা বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য। সচিব হিসেবে তাঁর কিছুই করার ছিল না। পাশাপাশি তিনি জানান, যে সংস্থাকে ওএমআর শিট নষ্টের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, সেই এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে মানিক ভট্টাচার্যই একমাত্র যোগাযোগ রাখতেন। এসব বিষয়ে তাঁর কিছুই করার ছিল না। কারণ, শিক্ষা পর্ষদের অন্য কাউকে যোগাযোগ রাখতে দেওয়া হতো না।

প্রাক্তন সচিবের এই সাক্ষ্য শোনার পরই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-কে এবিষয়ে বিস্তারিত তদন্তের দায়িত্ব দেন। কিন্তু সিবিআই আধিকারিকরা এতদিনে এই বিষয়ে কোনও সন্তোষজনক তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে পারেনি। এরপরই বৃহস্পতিবার ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘এবার কি আমি এমআই-৫-এর কাছে যাব? যান বরখাস্ত হওয়া তদন্তকারী অফিসার সোমনাথ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করতে বলুন। খুঁজে বের করুন, ওই এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে মানিক ভট্টাচার্যের এত প্রেম কীসের। আই ওয়ান্ট রেজাল্ট। না হলে আমি এই তদন্তের সঙ্গে যুক্ত সিবিআই আধিকারিকদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি যাচাইয়ের নির্দেশ দেব।’

Related posts

Leave a Comment