নিজস্ব সংবাদদাতা, নন্দীগ্রাম– রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর গড় নন্দীগ্রামে কৃষকদের আর্থিক সমৃদ্ধিতে বড় উদ্যোগ নিতে চলেছে ভারতীয় কিষান সঙ্ঘ। স্থানীয় কৃষকদের মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করছেন সংগঠনের কার্যকর্তারা। এখানকার বিস্তীর্ণ নিচু ও জলাভূমিতে মৎস্য চাষের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্প রূপায়ণে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অভ্যন্তরীণ মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইসিএআর)-এর প্রধান বিজ্ঞানী অর্চন কান্তি দাস। সেই সঙ্গে কোন কোন জলাভূমি এই চাষের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে, তা নির্ধারণে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন নন্দীগ্রাম ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের আধিকারিক সুবিমল চক্রবর্তী। তিনি বিষয়টি নিয়ে ব্লকের কৃষকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। যাতে এলাকার আর্থিক শ্রীবৃদ্ধি ঘটে।
এবিষয়ে ভারতীয় কিষান সংঘের পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশিস সরকার মৎস্য চাষের উপযোগী ভূমি চিহ্নিতকরণের জন্য উন্নত প্রযুক্তির একটি ড্রোন দিয়ে সার্ভে করার পরিকল্পনা করেছেন। সেজন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক পদক্ষেপের জন্য তাঁরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে আবেদন জানাবেন বলে জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে প্রকল্প রূপায়ণে কেন্দ্রীয় সরকারের মৎস্য যোজনা দপ্তরের সাহায্য নেওয়া হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে আশিস সরকার আশা প্রকাশ করেছেন, এই প্রকল্প রূপায়িত হলে এর সঙ্গে অনুসারী ব্যবসাগুলি সমৃদ্ধ হবে। যেমন মাছগুলি সংরক্ষণ, তার জন্য বরফ উৎপাদন এবং তার খুচরা ও পাইকারি বিক্রি, প্যাকেজিং করা এসবের জন্য প্রচুর লোক নিযুক্ত হবে। ফলে মৎস্য চাষের সঙ্গে যুক্ত কৃষকদের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্যরাও কাজ পাবেন। যার জেরে এই ব্লকের বাসিন্দারা আর্থিকভাবে যথেষ্ট সমৃদ্ধ হবে। খুব সহজে মানুষের হাতে প্রচুর পয়সা আসবে।
গত ৩০ নভেম্বর ও ১ ডিসেম্বর, শনি ও রবিবার নন্দীগ্রামের শহীদ বেদী সংলগ্ন গেস্ট হাউসের সভাঘরে স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে দুইদিনের একটি কর্মশালা ও পর্যালোচনা বৈঠক করে কিষান সঙ্ঘ। সাধারণ সম্পাদক আশিস সরকার ছাড়াও এই অরাজনৈতিক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি অনিমেষ পাহাড়ি, কলকাতা শহর কমিটির সভাপতি এবং নন্দীগ্রাম কমিটির ভারপ্রাপ্ত সুবীর রায় চৌধুরী, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সভাপতি অমলেশ বকসি, সাধারণ সম্পাদক ভোলানাথ দাস, গ্রাম সমিতির সভাপতি কার্তিক দলুই ছাড়াও জেলা ও ব্লকের অন্যান্য সদস্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
জানা গিয়েছে, প্রাথমিক পর্যায়ে স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে বৈঠক করে এখানকার সাউথখালি চর এলাকার প্রায় এক হাজার একর জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। এই জায়গাটি মূলত নিচু ও জলাভূমি। যেখানে কৃষি ফসলের কোনও সম্ভাবনা নেই। কিছু জমিতে একফসলি চাষ হয়ে থাকে। এই বিস্তীর্ণ জমি হলদি নদী ও গঙ্গা সাগরের তীরবর্তী এলাকা হওয়ায় মাছ চাষের পক্ষে খুবই উপযোগী বলে মনে করেন সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর প্রধান বিজ্ঞানী অর্চন কান্তি দাস। সেজন্য এইসব জমি ফেলে না রেখে স্থানীয় কৃষকদের মাছ চাষের প্রকল্প রূপায়ণের পরামর্শ দিয়েছেন। সাধারণত এখানে চিংড়ি চাষের পাশাপাশি পার্শে, ভেটকি, নোনা ট্যাংরা ও কাঁকড়া চাষের উপযোগী বলে মনে করছেন অর্চন বাবু। যদিও এখানে বিজ্ঞানসম্মতভাবে মাছ চাষ এখনও সেইভাবে শুরু হয়নি। অথচ অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ নন্দীগ্রাম বঙ্গোপসাগর অধ্যুষিত এলাকা। পাশেই রয়েছে হলদি নদী।
উল্লেখ্য, এমনিতেই নন্দীগ্রাম অর্থনৈতিকভাবে এখনও খুবই পিছিয়ে রয়েছে। অধিকাংশ পরিবারের কৃষির ওপর নির্ভর করে সারা বছরের রুটি রোজগার হয় না। সেজন্য অধিকাংশ পরিবারের একাধিক সদস্য কাজের সন্ধানে বাইরে থাকেন। সেখানে যদি বিজ্ঞান সম্মতভাবে মাছ চাষের প্রকল্প রূপায়িত হয়, তাহলে আর্থিকভাবে সাফল্যের মুখ দেখবে স্থানীয় মানুষজন।